১৯৯৯ সালের ২০ ফেব্রুযারি ড. অরূপ রতন চৌধুরীর সাথে আমান প্রথম দেখা হয়েছিল বারডেম হাসপাতালে। দেখা হওয়ার ঘটনা একটু বলতে হয়। আমি অরূপ দাদার দরজা খুলে বললাম,
: আদাব।
: আদাব।
: আমি সিলেট থেকে এসেছি।
: আপনি সুমন বিপ্লব। বসুন। কবে এসেছেন।
: আজ সকালে।
: আপনার বৌদি গৌরি চৌধুরী।
: আদাব।
: আদাব।
দাদা কলিং বেলে টিপ দিলেন। পিয়ন এল।
: মেহমানের জন্য নাস্তা নিয়ে এসো।
দাদা আমাকে আপন করে নিলেন। অথচ তিনি আমার অনেক বড় আর আমি উনার অনেক ছোট। তিনি অনেক ডিগ্রি প্রাপ্ত আর আমার কোনো ডিগ্রীও নেই। তিনি বিখ্যাত ব্যক্তি আর আমি অখ্যাত। তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তি আর আমি সাধারণ। এমনি আছে অনেক ব্যবধান। তিনি কেনে আপন করে বুকে ঠাঁই দিলেন আমার বোধগম্য হয়নি।
: ঢাকার আগমনের উদ্দেশ্য কি?
: আপনাদের দেখতে আর আমার স্বপ্নের কথা জানাতে।
: বলুন।
: ১৯৯৪ সালে আকিলপুরে এসে জানতে পারি সাহিত্যিক গুরু ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী স্বামীর বাড়ি এই গ্রামে। ৮১ সালে তাঁর লেখা পড়ে আসছি। পরিচয় জানার পরে আমি মনে মনে ভাবি আমি উনার নামে একটি প্রতিষ্টান করব। অনেককে বলি আমার স্বপ্নের কথা। সবাই বললেন তাঁর অনুমতি ছাড়া করাটা ঠিক হবেনা। কিন্তু কেথায় পাব ঠিকানা। ৯৫ সালে মনে মনে ভাবি তিনিতো খুব প্রতিভাবান তাই প্রতিভা নাম দিয়ে ৫ টি বই নিয়ে পাঠাগারের কার্যক্রম শুরু করি। মনে মনে ভাবি একদিন আমার প্রিয় লেখককে খুঁজে বের করবই।
: নাস্তা করেন।
আমি চা নাস্তা করতে থাকি। দাদার কিছু কাজ সারেন।
: তারপর বলুন আপনার স্বপ্নের কথা।
: ৯৬ সালে ঢাকা থেকে আকিলপুরে এলেন সাহিত্যিক বড় ভাই যাযাবর মিন্টু। সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রতিভা পাঠাগারের উপদেষ্টা মোঃ লালা মিয়া ভাইজান খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। খাওয়া শেষে আকিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্র পুরকায়স্থ স্যারকে ডাকানো হল। তিনি বললেন, : ড. মঞ্জুশ্রীর স্বামী শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী স¤পর্কে আমার মামাতো ভাই। তাঁদের তিন সন্তার জয়ন্ত, ডালিয়া ও সুমন্ত অন্য নাম আছে কিনা আমার জানা নেই। তাঁরা শহরে থাকতেনন। মাঝে মাঝে বাড়ি আসতেন। তাঁরা আমাকে খুব আদর করতেন। শুনেছে এখন ঢাকায় থাকেন। মিন্টু ভাই বললেন,
: ছোট ছেলে অরূপ রতন চৌধুরীর সাথে প্রায় বিটিভি তে দেখা হয়।
: অরূপদা উনার ছেলে। ৮১ সাল থেকে ইত্তেফাকে তাঁর প্রথম লেখা পড়েছি। ঢাকায় এসে অনেক পত্রিকায় লেখা পড়েছি। এই গ্রাম তার জন্মভূমি। তিনিতো বিখ্যাত লেখক।
: তার ভাই ডা: শুভাগত চৌধরীকে লেখা পড়েছো।
: ৮১ সালে থেকে পড়ে আসছি। তিনিও বড় সাহিত্যিক। আমি অবাক হয়ে গেলাম এত বড় বড় মানুষের গ্রাম আকিলপুর। অথচ গ্রামের মানুষ জানেনা। কিন্তু তারা কেন গ্রামে আসেনা?
: সুমন তুমি প্রতিষ্টানের নাম দাদার মায়ের নামে দিও। আমি তোমাকে সহযোগিতা করতে বলব।
: মাসীর নামে কিছু করার ইচ্ছে ছিল। অনুমতি ছাড়া করি কি করে?
: শুনলাম আপনার স্বপ্নের কাহিনী, বলুন এখন কি করতে পারি?
: মঞ্জুশ্রী প্রতিভা একাডেমী নামে প্রতিষ্টান করতে চাই।
: ঠিক আছে। আমি সহযোগিতা করব। আমি আকিলপুরে আসব অনুষ্টান করব। ঢাকা থেকে আকিলপুরে এসে অরূপদার সাক্ষাৎ এর কথা বললাম। সবাই খুশী হলেন। দাদার আসা হলনা। ২০১২ সালে আকিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিমাংশু রায় হিমেল স্যার, অত্র বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মঈন উদ্দিন ও লন্ডন প্রবাসী মাও: মিজানুর রহমান বারডেমে দাদার সাথে দেখা করেন। তাঁরা একটি কলেজের প্রস্তাব দেন। তিনি আকিলপুরে আসবেন। আসার তারিখ হয়ে যায়। প্রধান অতিথি দিলেন সাবেব শিক্ষা মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ সাহেবকে। না, আসা হলনা। ২০১৫ সালে বিটিভি তে দেখলাম দাদা ২১ শে পদক পেয়েছেন। গ্রামের কয়েকজন উৎসাহিত হলেন দাদাকে সংবর্ধনা দিবেন। তাঁরা হলেন সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ লালা মিয়া, কবি মুহিবুর রহমান কিরণ, লেখক ও শিক্ষক আখলাক হুসেন ও মদন মোহন কলেজের ইংরেজী প্রভাষক ও স্বপ্ন ম্যাগাজিনের স¤পাদক মিহির মোহন। অনুষ্টানের প্রস্তুতি চলছে দাদা বললেন, বিশেষ প্রয়োজনে লন্ডন যেতে হচ্ছে।
২০১৯ জুন মাসে জানলাম সিলেট শহরে দাদাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। প্রস্তাব দেয়া হল পরদিন আকিলপুরে আসার। দাদা রাজি হয়ে গেল। আমি গ্রামের মানুষদের জানালাম। আমি স্কুলে মিটিং ডাকলাম গ্রামের মানুষ ব্যাপক সাড়া দিলেন। সবাই অপেক্ষা করছেন অরূপদা কবে গ্রামে আসবেন। সবার বিশ্বাস তিনি আকিলপুরে আসলে হাই স্কুল, কলেজ ও একাডেমী প্রতিষ্টা করবেন। প্রতিদিন ৪/৫ জন আমার কাছে জানতে চায় দাদা কবে আসবেন? আমি ভেবে পাইনা ২০ বছরে অনেকবার আসতে চাইলেন, কেন দাদার আকিলপুরে আগমন হচ্ছেনা? দাদার ইচ্ছে আছে আপন গ্রামে আসার। শিকড়ের টানে। আপন গ্রাম সাজানোর জন্য। ঢাকা ও সিলেট থেকে মানুষ আসে বিখ্যাত ব্যক্তিদের গ্রাম দেখতে তাঁদের তেমন কোনো স্মৃতি দেখতে পায়না। শুধু বলে তারা ইচ্ছে করলে তো অনেক কিছু করতে পারে। কেন করেনা? আমার একটাই প্রশ্ন কেন আসেনা? কেন করেনা বিভিন্ন প্রতিষ্টান?
The post অরূপ রতন/ সুমন বিপ্লব appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3daYMMn
No comments:
Post a Comment