মুনসুর রহমান: ঈদের পূর্বে ও পরে জেলার হাজার হাজার বিকাশ গ্রাহকদের একাউন্ট লক হয়েছে। শহরের বিকাশ কেয়ার সেন্টারের সামনে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থেকেও সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী বিকাশের গ্রাহকরা। ফলে গ্রাহকরা নিজ প্রয়োজনে ও ব্যবসায়িক কাজে টাকা লেনদেন করতে না পেরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
জানা যায়, গত দুই মাস ধরে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করতে না ব্যর্থ হওয়ায় কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন লক হওয়া বিকাশ অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা। এতে করে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিতও হচ্ছেন সরকার। এমনকি সাতক্ষীরার ৩টি উপজেলার মধ্যে বিকাশের একটি মাত্র বড় কেয়ার সেন্টার পয়েন্ট জেলা জজ কোর্টের সামনে। টাকা লেনদেনের জন্য সহজ উপায় হিসেবে জেলার মানুষের কাছে বিকাশ যেমন জনপ্রিয় হয়েছে ঠিক তেমনি কাস্টমার সার্ভিস না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এদিকে মঙ্গলবার শহরে বিকাশ কেয়ার সেন্টারের গিয়ে দেখা যায়, কেয়ারের দরজা বন্ধ, সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। প্রবেশ করার মতো অবস্থা নেই ভেতরে। সকাল ১০টা থেকে সেবা দেওয়া শুরু করে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয় বিকাশ কেয়ার সেন্টারের। তবে সেবা গ্রহণ করতে আসা ইচ্ছুক গ্রাহকরা ভোররাতে এসে টোকন সংগ্রহ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে টোকেন যাদের কাছে থাকেনা; তাদেরকে বিকাশ কেয়ার সেন্টারের কর্মকর্তা সেবা প্রদান করেন না বলে অভিযোগও পাওয়া যায়।
বিকাশ কেয়ার সেন্টার পয়েন্টের জুনিয়র কর্মকর্তা শাওন জানান, বিকাশ অ্যাকাউন্টের তথ্য হালনাগাদের কাজ চলছে। যারা সঠিক সময়ের মধ্যে হালনাগাদ করতে ব্যর্থ হবে তাদের অ্যাকাউন্ট অটোমেটিক লক হয়ে যাবে। তারা কাস্টমার কেয়ার পয়েন্টে এক কপি ছবি ও এক কপি ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে এসে লক হওয়া অ্যাকাউন্টটি সচল করতে পারবেন স্বাভাবিক। আমাদের জেলায় ৩টি বিকাশ সেন্টার হওয়ায় সদর সেন্টারে ভিড় বেশি থাকে। এছাড়াও সার্ভারের সমস্যার কারণে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ২৫-৩০ জন্য গ্রাহককে সেবা দিতে পারি আমরা। তবে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক সেবা নেওয়ার জন্য এখানে আসে। কিন্তু আমাদের কথা কেউ বুঝতে চাইনা। এত মানুষের ভীড়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতে আমাদের এই কেয়ার পয়েন্টের মালিক টোকান সিস্টেম চালু করেছেন। উক্ত টোকান যাদের কাছে আছে আমরা তাদের সেবা আগেই দিয়ে দিচ্ছি। আর যাদের কাছে নেই তাদের আগামী দিন এসে তিনি সেবা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আরও জানান, সার্ভারের সমস্যার জন্য তথ্য হালনাগাদ করতে যেয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদেরও। কিন্তু বিকাশের ভুক্তভোগী অ্যাকাউন্ট লক হওয়া গ্রাহকরা তা মানতে নারাজ। আমরা তাদের একটি কথাই বলবো আপনারা সকলে ধৈর্য্য সহাকারে বিকাশ সেন্টার পয়েন্ট থেকে সেবা গ্রহণ করুন। আপনাদের সেবা সর্বদা সকল সময় দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।
বিকাশ কেয়ার সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী শামিম জানান, আমার প্রতিষ্ঠানেই বিকাশ কেয়ার সেন্টার পয়েন্ট। বর্তমানে বিকাশের তথ্য হালনাগাদের কাজ চলমান। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা সামাজকি দুরুত্ব না মেনে চলায় গত দুই মাস বন্ধ করে রেখেছিলাম প্রতিষ্ঠান। কয়েকদিন হলো আবার খুলেছি। কিন্তু লক হওয়া অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কেয়ারের জুনিয়র কর্মকর্তারা। এমনকি স্বাভাবিকভাবে এখান থেকে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন ভুক্তভোগী গ্রাহক সেবা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু প্রতিদিন উপবৃত্তি, সরকারি প্রনোদনার অর্থ ও লক হওয়া অ্যাকাউন্ট সচল করতে ২৫০-৩০০ গ্রাহক এখানে এসে উপস্থিত হন সেবা নেওয়ার প্রত্যাশায়। তবে সকলকে সেবা দিতে না পারায় প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও সেবার মানের স্বচ্ছতা আনায়নের জন্য টোকেন সিস্টেম চালু করে দিয়েছি আমি। এখন যাদের কাছে টোকেন থাকে; তাদেরকে অগ্রধিকারভিক্তিতে আগে সেবা প্রদান করেন বিকাশ কেয়ার সেন্টারের জুনিয়র কর্মকর্তরা।
বিষয়টি সম্পর্কে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মিহির কুমার মন্ডল জানান, গত ১০ দিন বিকাশের লক হওয়া অ্যাকাউন্টটি উদ্ধার করার জন্য তাদের বিকাশ কেয়ার সেন্টারের গিয়েছিলাম; কিন্তু কোনো সুরাহ হয়নি। তাই, আজও এসেছি। এখন দুপুর ১ টা বাজে কিন্তু বিকাশটা ঠিক তো হয়নি। এমনকি তাদের কর্মকর্তাদের সাথেও যোগযোগ করতে দেয়না। তিনি আরও জানান, জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা আলতাফ হোসেন ঈদের খরচ হিসাবে তাঁর বাবাকে ১৪ হাজার টাকা পাঠাতে গিয়ে ভূলক্রমে আমার নম্বরে চলে আসেন। তারা টাকার জন্য একাধিকবার আমাকে ফোন করে। কিন্তু আমার বিকাশ অ্যাকাউন্ট লক হয়ে যাওয়া তাদের টাকা আমি ফেরত দিতে পারিনি। তার বাবার ঈদ কেটেছে খুবই কষ্টে; সেজন্য দিনের পর দিন লক হওয়া অ্যাকাউন্টটি উদ্ধার করে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বিকাশ সেন্টারের হাঁটাহাঁটি করছি। আমার মতো প্রতিদিন শত শত লক হওয়া অ্যাকাউন্টের বিকাশ গ্রাহকরা হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। আমরা এর একটি প্রতিকার চাই; সেজন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিকাশ কেয়ার সেন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তালা উপজেলা থেকে আসা মনিরুল জানান, আমি তিন দিন ধরে তালা থেকে এসেছি। আমার পিন নম্বর লক হয়ে গেছে। প্রথম দিন অতিরিক্ত ভিড় দেখে বসে বসে থেকে না পেরে চলে গেছি। ২য় দিন একই সমস্যা। আজ আবার এসেছি। দেখি সমাধান না হলে বিকাশ আর চালাবো না।
এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা থেকে আসা নাজমুল হুদা জানান, ভাই মহা সমস্যায় আছি। বিকাশে শেষ কতো টাকা লোড করছি আর কতো টাকা আছে তা না বললে বিকাশ ঠিক হবে না। আমরা মূর্খ মানুষ এত কিছু কি মনে থাকে। ৪ দিন থেকে যাওয়া আসা করতে টাকাও নষ্ট আবার সেবা নিতে গেলে দিনটাও শেষ হয়ে যায়। এরপরেও সেবা না পেয়ে গত রাতে শহরে আত্মীয় বাড়িতে ছিলাম। আজ ভোররাতে বিকাশের সেন্টারে এসে সিরিয়াল দিয়েছি। আমরা সিরিয়াল-০৩। এখন সকাল ১১ টা বাজে। আজও সেবা পাবো কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে শহরের পলাশপোলের মর্জিনা বেগম জানান, আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টটি লক হয়ে গিয়েছে। সরকার হতদরিদ্রের টাকাও নাকি ওই অ্যাকাউন্টে পাটিয়েছে। কিন্তু অ্যাকাউন্টটি লক হওয়ার কারণে টাকা তো আজও তুলতে পারিনি। লক হওয়া অ্যাকাউন্টি ফিতে পেতে বিকাশ সেন্টারে কয়েকদিন ধরে আসছি। কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছিনা। এমতাবস্থায় সরকারের উর্দ্ধতন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
The post সাতক্ষীরায় হাজার হাজার বিকাশ গ্রাহকদের একাউন্ট লক; চরম পর্যায়ে ভোগান্তি! (ভিডিও) appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2ZWlLrf
No comments:
Post a Comment