ডজনের অধিক মামলার আসামী হুমায়ন কবীর গ্রেপ্তারের পর তার সহযোগীরা বেসামাল হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের প্রচারণার পাশাপাশি মামলার বাদীদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। ফলে বহুল আলোচিত হুমায়ন গ্রেপ্তার হওয়া সত্ত্বেও এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতি ও চাপা আতংক কাজ করছে। হুময়ান কবীর মানিকখালী গ্রামের আবুল হোসেন গাজীর ছেলে।
উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারটার দিকে শ্যামনগর থানা পুলিশের একটি টিমের প্রায় সাত সদস্য হুমায়ন কবীরকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে। ডজনের অধিক মামলার আসামী হুমায়ন তার বিরুদ্ধে সদ্য দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সর্বশেষ তিনটি মামলায় জামিনে না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান যায়।
তবে পুলিশ হুমায়নকে আটক করতে গেলে হুমায়ন এর লোকজনের পাশাপাশি তার পরিবারের লোকজন পুলিশের উপর হামলার মত ঘটনাও ঘটায়। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশ হুমায়নকে আটক করে নিয়ে আসতে সমর্থ হলেও পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক মারাত্মকভাবে আহত হয়ে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এছাড়া শ্যামনগর থানা পুলিশের আরও চার সদস্য হুমায়ন বাহিনীর হামলায় সামান্য আহত হলেও তারা শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথিমক চিকিৎসা নেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছে এক্স-রে রিপোর্টে উপ-পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাকের ডান হাতের পিছনের অংশে মারাত্মক ইনজুরি দেখা গেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে জানা গেছে ডজনর অধিক মামলার আসামী হওয়ার কারনে হুমায়ন মামলা আর আইন আদালতের ধার ধারতেন না। বরং সে নিজেকে কখনও আইনজীবি আবার কখনও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করে। তার অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললেই হুমায়ন তাকে মামলা মোকদ্দমায় ফাঁসিয়ে দিয়ে হয়রানী করতো বলে অভিযোগ রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনার সত্যতা না মেলায় মামলা না নেয়ায় হুমায়ন আদালতের দারস্থ হয়ে কৌশলে মামলা নিতে আদালতের মাধ্যমে থানা পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করতো। এমনকি মহামান্য উচ্চ আদালতে যেয়েও পুলিশকে মামলা নিতে বাধ্য করাসহ অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তাকে সে উচ্চ আদালতে টেনে নিয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে ভেটখালী বাজারের সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা সরকারি খাদ্য গুদামের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার নির্মাণ কাজে বাধা দেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিয়ে হুমায়ন ঐ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে নানাভাবে হয়রানী করেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে সম্প্রতি হুমায়ন একটি অনলাইন পোর্টাল খুলে সেখানে নিজেকে সম্পাদক পরিচয় দিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা বিষোদগারমুলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। স্থানীয় কয়েক সংবাদকর্মীসহ রমজাননগর ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যকে নিয়ে হুমায়ন তার নিজস্ব অনলাইন পোর্টালে মানুষের জন্য মানহানীকর অনেক ‘পোষ্ট’ সংযুক্ত করে সকলের জন্য রীতিমত ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সামাজিকভাবে মানহানীকর এসব পোষ্ট করা থেকে বিভিন্ন মহল থেকে তাকে বারংবার সতর্ক করা হলেও হুমায়ন সেসব কথায় কর্ণপাত না করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায়ে তৎপর হয়ে ওঠে।
অভিযোগ রয়েছে প্রায় এক যুগ আগে সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের তিনটি শাবক পাচারের ঘটনায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়। পরবর্তীতে বাঘ শাবকগুলো ঢাকার শ্যামলী এলাকা থেকে উদ্ধারের পর শাবক পাচারের সত্যতা নিশ্চিত হলেও হুমায়ন কৌশল করে পাচার চক্রের সদস্যদের মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দিতে সমর্থ হয়। এক পর্যায়ে জলজ্যান্ত তিনটি বাঘ শাবক উদ্ধারসহ পাচারের ঘটনা পরিস্কার দিবালোকের মত সত্য হওয়ার পরও কেবলমাত্র হুমায়ন ও বনবিভাগের যোগসাযশে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে রমজাননগর ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য দীর্ঘদিন ধরে বনদস্যুদের সাথে সখ্যতা রেখে চলে। ইতিমধ্যে একাধিকবার র্যাব সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যায়। উক্ত ইউপি সদস্যের মুল আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা হিসেবে স্থানীয়রা বার বার হুমায়ন কবীর এর নাম প্রকাশ করেছে।
অভিযোগ রয়েছে বর্তমান রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের শক্তিশালী একটি জনপ্রতিনিধি গ্রুপকে হাত করে হুমায়ন গোটা এলাকায় তার রাজত্ব কায়েম করেছে। ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলা হুমায়ন শেষ পর্যন্ত পুলিশের খাঁচায় বন্দি হওয়ায় স্থানীয়রা খুশি হওয়া সত্ত্বেও হুমায়নের সাঙ্গপাঙ্গদের হুমকি ধমকিতে আতংকে রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ইতিমধ্যে হুমায়ন গ্রেপ্তার হওয়ার পর হুমায়নের অন্যতম অর্থ যোগানদাতা এক জনপ্রতিনিধি তার ফেইসবুকে ‘নিন্দা জানায়’- এমন মন্তব্য করেছেন। এছাড়া তার আরও কয়েক সহযোগী হুমায়নকে এলাকার ত্রাতা হিসেবে উপস্থানের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা ইচ্ছা ‘পোষ্ট’ করে হুময়ানের অনুপস্তিতি সত্ত্বেও হুমায়ন আতংক বহাল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে।
হুমায়ন ও তার সমর্থকদের ভয়ে আতংকগ্রস্থ অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে ‘তার লোকজন বলছে হুমায়নকে বেশীদিন আটকে রাখা যাবে না, সে বেরিয়ে এলে হুমায়ন গ্রেপ্তারে যারা জড়িত আর খুশি হয়েছে সকলকে দেখে নেয়া হবে’। তারা হুমায়নের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অুনসরনের জন্য মাননীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
পত্রদূত ডেস্ক:
The post মানিকখালীর হুমায়ন গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2BudbFZ
No comments:
Post a Comment