নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ সেই ভয়াল ২৬ আগস্ট। সাতক্ষীরার ইতিহাসে এক জঘন্যতম দিন। ২০১৩ সালের এই দিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ-সম্পাদক রবিউল ইসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। আজ তার ৭ম শাহাদাৎ বার্ষিকী। রবিউল হত্যার দীর্ঘ ৬ বছর অতিবাহিত হলেও আজও বিচার হয়নি। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও রবিউল হত্যার বিচার না হওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা বলেন, একজন দক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন রবিউল ইসলাম। তবে রবিউল হত্যার বিচার যদি দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় করতে না পারে, তাহলে আমাদের মতো সাধারন কর্মীদের অবস্থা কি হবে? রবিউল হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ ৭ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। অথচ কেউই ওনার হত্যার বিচারের ব্যাপারে খোঁজ- খবর রাখে নাই। বরং শোক দিবসে মঞ্চ গরম করার বক্তব্য দিতে ব্যস্ত থাকে সবাই তবে কেউ রবিউল হত্যা কান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কোনপ্রকার সহযোগীতা করিনি।
এসময় তারা বলেন, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হুসাইন সাঈদীর যাবজ্জীবন রায় কার্যকর হওয়ার পর পরই সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নে বিএনপি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারা এলাকায় ব্যাপক তান্ডবলীলা শুরু করে। তারা সড়কের পাশের গাছ ও সর্বসাধারনের চলাচলের রাস্তা কেটে এলাকাটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। অবরুদ্ধ করে ফেলে শিবপুরের সাথে অন্যান্য জায়গার যোগাযোগ। একপর্যায় ২৬ আগস্ট রাতে পরানদহা থেকে বাড়ি ফেরার পথে আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলামকে ইউনিয়নের সোনাডাঙ্গা রাস্তার ধারে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার এই মৃত্যুতে শিবপুর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে জানান তারা।
জনপ্রিয় এ কর্মীবান্ধব নেতাকে হারিয়ে শিবপুরের মানুষের মাঝে নেমে আসে এক অন্ধকারের ঘনঘটা। হত্যার পরবর্তী প্রতিবছর এই দিনটি স্মরণ করে মিলাদ-মাহফিল, স্মরণসভা, কবর জিয়ারতসহ নানা আয়োজন করা হয়। তবে আজ পর্যন্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ সহযোগী-সংগঠনের নেতাকর্মীরা রবিউল ইসলামকে ভূলতে পারেন না।
সূত্রমতে, সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম হত্যাকা-ের একদিন পর ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট রবিউল হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে জেলা জামায়াতের আমীর সাবেক-এমপি মাওলানা আব্দুল খালেকের ছেলে শামীম হোসেন, আগরদাঁড়ীর কাজী আকরাম হোসেন, পায়রাডাঙ্গার রফি, শফি ও দেলোয়ারসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনকে আসামি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন রবিউল ইসলামের ভাই আনারুল ইসলাম। তবে ঘটনার দিন (২৬ আগস্ট সোমবার) দুপুরে একটি গ্রাম্য শালীসে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে রবিউল ইসলামের হাতাহাতি হয়। এসময় রবিউল হত্যাকান্ড নিয়ে রবিউলের পরিবারের মাঝে সংশয় সৃষ্টি হয়। হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করেও রবিউলকে হত্যা করা হতে পারে বলে দাবি করেন তারা।
একারণে তারা রবিউল হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য সিআইডি কে তদন্তভার দেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে বারবার অনুরোধ করলেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। এছাড়াও তৎকালিন সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি শাহজাহান আলী খান আ’লীগ নেতা রবিউল হত্যার মামলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন! ঐসময় তিনি তার বক্তব্যে সাংবাদিকদের জানান, হাতাহাতির ঘটনার সাথে রবিউল হত্যার গভীর সম্পর্ক থাকতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। এঘটনাকে কেন্দ্রকরে তারা রাজনৈতিক কোন্দলকে ব্যবহার করে এই হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে তবে চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-, সেহেতু তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে সব কিছুই গোপন রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এরপরেই সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে বদলী করা হয় ওসি শাহাজাহান আলীকে। একারনে রবিউল হত্যাকান্ড তদন্তে ধীরগতি নেমে আসে। এরপর থেকে রবিউল হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য মামলার তদন্তভার সিআইডি’র কাছে হস্তান্তরের জন্য রবিউলের পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করলে সেটা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এবিষয়ে মরহুম রবিউল ইসলামের সহোদর ও শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ-সম্পাদক ওবায়দুর রহমান (মানি) বলেন, সেদিনের (২৬ আগস্ট ২০১৩) গ্রাম্য শালীসের হাতাহাতি নাকি জামায়াত-শিবিরের হাতে আমার ভাই নৃশংসভাবে হত্যা হয়েছে সেটা সম্পর্কে আজও অজ্ঞাত আমরা। আমার ভাই হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনোর জন্য পুনরায় হত্যা মামলাটি সিআইডি দিয়ে তদন্ত করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পারিবারিকভাবে মরহুম রবিউল ইসলামের রূহের মাগফিরাত কামনা করে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
The post আজ সেই ভয়াল ২৬ আগস্ট: সাতক্ষীরার ইতিহাসে এক জঘন্যতম দিন appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2YAwVQP
No comments:
Post a Comment