পত্রদূত ডেস্ক: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাঁধ মেরামত, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা পুনজ্জীবিত করার লক্ষ্যে উপকূলীয় এলাকার মানুষের উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর কোভিড-১৯ এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব’ বিষয়ক এক ভার্চুয়াল কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশ্বাস দেন। এসময় অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. আবুল বারাকাত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, কোভিড-১৯ অ-প্রাতিষ্ঠানিক (ইনফরমাল) খাতকে খুব বেশি আঘাত করেছে এবং মার্চ-২০২০ এর পর থেকে শ্রেণি-বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের পরিচিত শ্রেণি কাঠামো সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং মানুষ অতি-দরিদ্র থেকে আরো নিচে নেমে গিয়েছে। পরবর্তী পরিকল্পনায় তিনি এই সমস্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রাখার জোর তাগিদ দেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ আ ফ ম রুহুল হক উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন টেকসই করার জন্য বেড়িবাঁধগুলো ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেন। খুলনা-৬ (কয়রা ও পাইকগাছা) আসনের সাংসদ আকতারুজ্জাম বাবু বলেন, কয়রা ও পাইকগাছার টেকসই উন্নয়নের জন্য অতিদ্রুত এই এলাকার বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই জরুরী। তিনি আরো বলেন, উপকূলীয় এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে পশু পালনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা দরকার।
কর্মশালা থেকে উপকূলীয় মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার সাইক্লোন ‘ধাম্পান’ এ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহকে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম এর আওতায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য এটির পরিধিকে বিস্তৃত করা, সাইক্লোন ‘আম্পান’ এ ক্ষতিগ্রস্ত পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসমূহের মেরামত ও সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/দপ্তর থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বাঁধ মেরামত ও সংস্কার, বিশেষ করে কয়রা ও আশাশুনি উপজেলার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন সমূহের সক্ষমতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা, করোনা এবং সাইক্লোন ‘আম্পান’ এর কারণে কমিউনিটি পর্যায়ের যেসমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেবাদান ব্যাহত হয়েছে, সেগুলি থেকে সেবাদান কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য সহযোগিতা প্রদান, মারাত্মক দুর্দশাগ্রস্ত পরিবার সমূহের জীবিকায়ন এবং উন্নয়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি এবং লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিরসনে সামাজিক আচরণগত পরিবর্তন কার্যক্রমকে প্রসারিত করার সুপারিশ করা হয়। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউএসএআইডি বাংলাদেশ মিশনের পরিচালক ডেরিক এস ব্রাউন। প্যানেল আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন, হাচিন জাহান (কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়াটারএউড বাংলাদেশ), মাহা মির্জা (গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী) এবং তুষার মোহন সাধু খান (অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর) প্রমূখ। এছাড়াও কর্মশালায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নবযাত্রা প্রকল্পের সিনিয়র নলেজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার সায়কা কবির। কর্মশালায় ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ডভিশন বাংলাদেশ বাস্তবায়িত নবযাত্রা প্রকল্প কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল ও অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করা হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক সহনশীলতার উন্নয়নে এবং কোভিড-১৯ ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। ইউএসএআইডি’র নবযাত্রা প্রকল্পের আওতায় দাকোপ, কয়রা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার ১৫,০০০ পরিবারকে এককালীন নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থ সহায়তা পরিবারগুলোকে তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে যেমন খাদ্য সামগ্রী ক্রয় অথবা কোভিড-১৯ ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ জীবিকা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছে। পরিবারগুলোর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নবযাত্রা প্রকল্পের আওতায় ১২,৫০০ পরিবার ও ১,১১৫টি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্যানিটেশন কিটস্ প্রদান করেছে। এছাড়া নবযাত্রা প্রকল্প কোভিড-১৯ বিষয়ক শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ভয়েস মেসেজ এর মাধ্যমে ৪৮,০০০ জন নারী পুরুষের কাছে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি, জেন্ডার বেজড্ সহিংসতা ও বাল্য বিবাহ বিষয়ক বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।
কর্মশালাটির মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ উপস্থিত বিভিন্ন পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ, ইউএসএআইডি বাংলাদশ মিশন, আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, শিক্ষাবিদ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আলোচনা ও সকল স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়। নবযাত্রা প্রকল্পের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর মোহাম্মদ নূরুল আলম রাজুর সঞ্চালনায় কর্মশালার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নবযাত্রা প্রকল্পের চিফ অফ পার্টি রাকেশ কাটাল এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর সুরেশ বার্টলেট।
The post উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্প সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে: এমএ মান্নান appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3hzPvjK
No comments:
Post a Comment