দুই বছর আগে জ্যামে আটকে থাকা বাস থেকে নেমে আবার সেই বাসে উঠতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল। কিন্তু চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টো তার মুখমন্ডল নির্মমভাবে ইট দিয়ে থেতলে বিকৃত করে তাকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছিল হানিফ পরিবহনের একটি বাসের কয়েকজন স্টাফ। রোববার এ মামলার রায় হয়েছে। রায়ে আসামীদের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, অদক্ষ গাড়িচালক, বেপরোয়াভাবে বাস চালানো, গাড়ি চলাচলের অযোগ্য রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে এই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সড়কে প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, নাকি হত্যা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বসাধারণের মনে। রায়ে বলা হয়, প্রতিটি সড়ক যেন হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। সড়ক দুর্ঘটনা তো ঘটছেই, মারা যাচ্ছে সব বয়সী মানুষ। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীও রেহাই পাচ্ছে না বেপরোয়া বাসচালকদের হাতে। সড়ক যোগাযোগ মাধ্যম এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দিনে দিনে সড়কে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কোনোভাবেই এই মৃত্যুর মিছিল থামছে না। সাম্প্রতিক আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আদালত বলেছেন, তাহলে আর কবে আমরা সজাগ হব। নিহত ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল মেধাবী ছাত্র ছিলেন। উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের জন্য যখন নিজেকে তিনি প্রস্তুত করেছিলেন, সেই মুহূর্তে বাসচালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারির নির্মমতার শিকার হয়ে তাঁকে অকালেই প্রাণ দিতে হলো।
সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আদালত চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। প্রথমত; গাড়ি চালাতে দেওয়ার আগে চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারি মাদক গ্রহণ করেছেন কি না, সে জন্য তাঁদের প্রত্যেককেই ডোপ টেস্ট করাতে হবে। দ্বিতীয়ত; গাড়ির চালক, সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারিরা প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে কর্কশ ও অভদ্র আচরণ করেন। গাড়ির চালক সুপারভাইজার এবং চালকের সহকারি অবশ্যই যাত্রীদের সঙ্গে ন¤্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে। চালকসহ অন্যদের গাড়ি চালানোর বিষয় এবং যাত্রীদের সঙ্গে আচরণসংক্রান্ত কাউন্সেলিং বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত; মহাসড়কের প্রতি তিন কিলোমিটার পরপর গাড়ির চালক, চালকের সহকারি এবং সুপারভাইজার এবং যাত্রী সাধারণের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আধুনিক বাথরুম স্থাপন করতে হবে। এজন্য বাসমালিকদের সরকারের সড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের নির্ধারিত হারে মাসিক চাঁদা প্রদান করতে হবে। চতুর্থত; ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) মাধ্যমে মহাসড়কে যান চলাচলের ওপর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
এই মামলার রায়ে বিচারক যে পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরেছেন সম্ভব হলে আজই তার উত্তর খুঁজে সমাধানের পথে যাওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য। সারাদেশে প্রতিদিন যেসব দুর্ঘটনা ঘটে; বলতে গেলে তার পেছনের সব মূল কারণই তুলে ধরেছেন বিচারক। এখন সেগুলোর সমাধানটাই জরুরি।
আমরা জানি, সড়ককে নিরাপদ করা নিয়ে গত কয়েক বছর প্রচুর কথা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে টানা আন্দোলন করেছেন। এমন কি আইন পরির্বতন করে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের সাজাও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কি সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে? বাস্তবে আমরা তার সুফল দেখিনি। কেননা অদক্ষ গাড়িচালক, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, গাড়ি চলার অযোগ্য রাস্তা আর ফিটনেসবিহীন গাড়ির পছনে শক্তিশালী এক গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িয়ে আছে। সেখানে ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাই সরাসরি আর্থিকভাবে লাভবান। তাই আইন করার চেয়ে তার বাস্তবায়ন করাটা জরুরি।
আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, বিদ্যমান আইন দিয়েই সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য চাই সদিচ্ছা আর দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের প্রতি আস্থা। তাহলেই কাক্সিক্ষত ফলাফল মিলবে। আমরা মনেকরি বিচারক তার পর্যবেক্ষণে যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন; তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।
The post সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে আদালতের পর্যবেক্ষণ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/384ZVWk
No comments:
Post a Comment