পত্রদূত রিপোর্ট: জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাতক্ষীরার বিভিন্ন সড়কে মরে গেছে অসংখ্য গাছ। সাতক্ষীরা সদরের বৈকারি সড়ক, আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি-বাঁকা সড়ক, তালা উপজেলার ইসলামকাটি সড়ক, পাটকেলঘাটার কুমিরা-তালা সড়ক, সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে মরে গেছে হাজার হাজার গাছ।
আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি এলাকার শিক্ষক সুব্রত দাস, সাইদুল বাশার, ইমরান হোসেনসহ অনেকেই জানান, কাদাকাটি থেকে বাঁকা পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে মরে গেছে অসংখ্য গাছ। ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আমম্পান আঘাত হানার পরে গাছগুলো মরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যানবাহন ও মানুষের যাতায়াতের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে বলে জানান তারা। তারা আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় গাছগুলো মাসের পর মাস এভাবে রয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী সড়কে একইভাবে মরে রয়েছে শতশত গাছ। গাছগুলো মরে সাদা ফ্যাকাশে হয়ে রয়েছে। যেকোন মুহূর্তে গাছ ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার সেলিম হোসেন, নাজমুল হুসাইন, মশিউর রহমান, আতাউর রহমানসহ অনেকই।
এদিকে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা এলাকার শিক্ষক মুজিবুর রহমান, এসআর আওয়াল, নজরুল ইসলাম, আবু রায়হানসহ স্থানীয়রা জানান, কুমিরা-তালা সড়ক, ইসলামকাটি সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে শতশত গাছ মরে বিবর্ণ হয়ে গেছে। গাছগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
দেবহাটার ধোপাডাঙ্গা এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন, নজিবুল¬াহ, মিলন সরদার, মুকুল হোসেনসহ স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর মরে গেছে হাজার হাজার গাছ। সাতক্ষীরার প্রধান সড়ক ছাড়াও আভ্যন্তরীন সড়কেও মরেছে অসংখ্য গাছ। এছাড়া জেলার আম্পান দুর্গত এলাকায় এখনো মরে রয়েছে হাজার হাজার গাছ। কিন্তু সড়কের দুপাশে মরে থাকা গাছগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন গাছগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গাছগুলো দাম বাজার ছাড়া বেশি হওয়ায় তা কিনতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, গাছ বিক্রয়ের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ৩১ মে বিকালে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দরপত্র দাতাদের সামনে দরপত্রের সিডিউল খোলা হয়। এ দরপত্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব, জেলা পরিষদের সদস্য মো: আল-ফেরদাউস আলফা, মনিরুল ইসলাম, মাহফুজা পারভীন রুবি, মো: মতিয়ার রহমান প্রমুখ।
জেলা পরিষদের সদস্য মো: আল-ফেরদাউস আলফা জানান, ১১টি প্যাকেজের মধ্যে ৩টির বিপরীতে ৬টি সিডিউল ড্র হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলেন- পাটকেলঘাটা ডাক বাংলো’র আবুল হাশেম, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সামনে রক্ষিত প্যাকেজ নং-১ এই প্যাকেজে সর্বোচ্চ দরদাতা ফরহাদ হোসেন হীরা, দেবহাটা ডাক বাংলো’র ৭নং প্যাকেজে সর্বোচ্চ দরদাতা ফরহাদ হোসেন হীরা। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত গাছ দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় জেলা বনবিভাগ থেকে যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল সেই কাক্সিক্ষত দরে ক্রয় করতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী নয়। কারণ গাছগুলি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করতে রাজি হয়নি। এরমধ্যে তিনজন সর্বোচ্চ দরদাতাকে ৬ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা জমা দিয়ে মালামাল বুঝে নেওয়ার নির্দশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা বনবিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ বিল্লাহ বলেন, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বনবিভাগের দুই শতাধিক মরা গাছ রয়েছে। গাছগুলোর জরিপ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, সড়ক বিভাগ ইচ্ছে করলেই টেন্ডার দিতে পারে না। এজন্য রয়েছে ‘বৃক্ষ প্রতিপালন বিভাগ’। সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে বৃক্ষ প্রতিপালন বিভাগকে মরা গাছের সার্ভে করে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো দ্রুত অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে কোন মানুষের জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি না হয়। সংস্থাটি ১০-১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন সড়কে মরা গাছের তালিকা প্রস্তুতির কাজ বেশ কয়েটি শেষ হয়েছে। আরও কয়েকটির কাজ চলমান আছে। তালিকা প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে অতিদ্রুত গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে।
The post সাতক্ষীরায় সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ মরা গাছ: দুর্ঘটনার আশঙ্কা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3cbAeVB
No comments:
Post a Comment