বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএম নজরুল ইসলাম
দুর্নীতি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, সম্পূর্ণ একটি রাষ্ট্রের পরিবেশ পরিস্থিতির বিষয়। অনায়াসলব্ধ অর্থ উপার্জনের নামই দুর্নীতি। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে যতগুলি আপেক্ষিক অর্থে ধর্মের সন্ধান পাই তার মধ্যে সুকর্ম ও দুষ্কর্মের একটি নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। যার প্রতিফলন ঘটে ব্যক্তির আচরণের মধ্য দিয়ে। যার প্রতিশ্রুতিতে আমরা প্রেস মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বুঝতে এবং অনুধাবন করছি। সৎ এবং অসৎ কর্মের ধারক-বাহকই একটি রাষ্ট্রের স্থায়ী কোন বিষয় নয়। রাষ্ট্র বা সমাজে এই যে বিরুপ অবস্থা তা সহজেই একটি দেশের সরকার রাষ্ট্রের নির্বাহীগণ দ্রুত নিরসন করার প্রয়াস নিচ্ছে। আমাদের আজ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের সশস্ত্র বিপ্লবের দিকে ফিরে যেতে হবে।স্বাধীনতা যুদ্ধের মাত্র নয় মাসের মধ্যে জাতির স্বাধীনতা অর্জনের মর্মকথা উপলব্ধি করার সুযোগ ঘটেনি। তার পরও বাস্তব যে, যার আহবানে এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল সেই সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের বহুমুখী প্রতিভার সূচনা লগ্নে তার ও তার পরিবারকে হত্যার মধ্য দিয়ে সে সুযোগটুকুও নষ্ট করে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল ১৯৭১ সালে পরাজিত শত্রুরা এই নির্মম হত্যা কান্ডের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনার নামে স্বাধীনতার চেতনাকে ধূলিসাৎ করা এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে অবাধ লুটপাট করা। সম্ভাবত: ১৯০৫-১৯০৬ সালের বিষয়। বিভিন্ন কারনে আমাকে প্রায়ই ঢাকা যাওয়া-আসা করতে হতো। তখন আমার জৈষ্ঠ্য কণ্যা ঢাকার অদুরে চাকরি সূত্রে মানিকগঞ্জে বসবাস করতো,বাহন থেকে নেমে মানিকগঞ্জের একটি ফুটপাতের দোকান থেকে একটি দিয়াশলাই খরিদ করি। প্রয়োজনের সময়ে শলা প্রজ্বলিত করতে গিয়ে বোধ হলো ভুল করে দোকানদার ব্যবহৃত দিয়াশলাইটি আমার কাছে বিক্রয় করেছে।
মানিকগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরবার পথে তুলনামূলক আগের চেয়ে বড় একটা দোকান থেকে আর একটি দিয়াশলাই খরিদ করে বাড়িতে ফিরে নতুন কেনা দিয়াশলাইটি থেকে শলা প্রজ্জ্বলন করতে গিয়ে যেয়ে দেখলাম দ্বিতীয় দিয়াশলাইটি তুলনামূলক প্রথমটির চেয়েও শলা কম, বলা চলে দুটির শলা একই রকম। উপরোক্ত ঘটনাটি আমি অনেক সময় আলাপ প্রসঙ্গে অনেকের কাছে প্রকাশ করেছি। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন সামান্য একটা দিয়াশলাই নিয়ে আমি আবার অবতারণা করছি কেন? বিষয়টি মূল্যমানের নয়, বিষয়টি দ্রুত ধনি হওয়ার প্রবনতার জন্য। ক্ষুদ্র হলেও দু’জন ব্যবসায়ীর দ্রুত ধনী হওয়ার প্রবনতা নিয়ে। যে কোন খারাপ প্রবনতা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে হয়, তানা হলে অতি দ্রুত তা বৃদ্ধি পেতেই থাকে। বাংলাদেশের দুর্নীতি তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকের অধিকার মাত্র পাঁচটি নয় আরো একাধিক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় দুই বেলা খাদ্যের অধিকার কেবল নয়, মান সম্মত খাদ্যের অধিকার বর্তমানে একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারের আওতাভুক্ত। কেবল বাসস্থান আজ আর মৌলিক অধিকার নয়, রাতে নিভৃতে পরিবার পরিজন নিয়ে নির্বিঘেœ ঘুমানোর অধিকার-এমনকি সব কিছুই মৌলিক অধিকারের আওতাভুক্ত। দেশের একটি বৈষয়িক উন্নতির সাথে সাথে দূর্ণীতি মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠে তা যেমন সত্য, তেমনি দুনিয়ার যা কিছু এমনকি ধর্ম পর্যন্তও পালন করতে সীমা অতিক্রম না করতে বারবার নিষেধ করা হয়েছে। একটি দেশের বৈষয়িক উন্নতির সাথে সাথে দুর্নীতি মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠে সত্য কিন্তু তা সীমা অতিক্রম করে নয়। আজকে দেশের প্রতিদিনের সার্বিক অবক্ষয়ের চিত্র রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি কারো অজানা নয়। যে মাতৃকোল সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় সেই মা হয়ে উঠেছে সন্তানের হত্যাকারী যার কারন আর কিছুই নয়, পরকীয়া। কত স্ত্রী তার স্বামীকে হত্যা করছে, স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি নির্মম নিষ্ঠুর আচরন করছে তার আর কতটুকুই আমরা জানতে পারছি।
দুর্নীতি বা চতুর্পাশে দুর্নীতির নিষ্ঠুর পদাঘাত, জীবন যুদ্ধের ব্যর্থতার গ¬ানি নারীকেই সহ্য করতে হচ্ছে। পুরুষের পরকীয়া ও বহুলাংশে স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের টানা পোড়ে নের জন্য দায়ী। দুই, দশ টাকা পাওনা নিয়ে লকজন আর একজনকে হত্যা করছে। মৃত্যু ব্যক্তির পরিচয় গোপন করার জন্য দেহ খন্ড বিখন্ড করে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত করছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশের নাগরিকের মনের সকল কোমলতা দুর্নীতির তপ্ত আবহাওয়ায় পুড়ে পুড়ে ভস্ম গতে বসেছে। নেশা বর্তমানে বাংলাদেশের স্বচ্ছল অস্বচ্ছল নাগরিকের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। খুন খারাবি, নেশার বৈকলতা এর একটি বড় কারণ। সবচেয়ে ভয়াবহ যে চিত্র সেটি হচ্ছে নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা আজ মারাত্মক আকার ধারন করেছে। সরকারের আনুকুল্যে এবং আমার দুটি কন্যা বিশ্বের দুটি রাষ্ট্রে থাকার কারনে এ পর্যন্ত ১০টি দেশে গমন করা সম্ভব হয়েছে। আমার চাক্ষুষ দেখা বিশ্বের সকল দেশের যে চিত্র তা হচ্ছে বিমান বন্দরে বা শপিংমলে পুরুষ লাগেজ বাহক আর নারী মোবাইল টিপতে টিপতে হাঁটছে পিছনে তাদের এক বা একাধিক সন্তান ছুটছে। বিমান বন্দরে বিমানের জন্য অপেক্ষারত স্বামী স্ত্রী সেই মোবাইল টিপা টিপি করছে। বর্তমান সভ্যতার নামে নকল সভ্যতার জোয়ারে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যে প্রতি মুহূর্তের বিপর্যয় বিষয় একথা ভুলতে বসেছে। বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে বাঙালি জাতির কৃষ্টি ও সাংস্কৃতির বড় শত্রু ধর্মের জ্ঞানপাপি ও ধর্মান্ধ শ্রেণি। খেলাধুলা, গান বাজনা, পাঠ্য পুস্তকের বাইরে বহুবিধ জ্ঞানার্জনের বিষয়াদি সম্পর্কে কোন ধারনা না রাখা দ্রুত সামাজিক অবক্ষয়ের আরও একটি বড় কারণ। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অযোগ্যরা অর্থের এবং স্বজনপ্রীতির কারণে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা নিজের প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের বিবাহ করে কেবল তাই নয় অবৈধ সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ে তোলে। এর চাইতে সমাজও রাষ্ট্রের অবক্ষয়ের আর কি থাকতে পারে! সত্য কথা বলতে কি চারিদিকে কেবল হতাশা আর হতাশা, যেন দেখার কোথাও কেহ নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রথম পরিচয় জাতির জনকের কন্যা, তার পরের পরিচয় দেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রতক্ষ্যভাবে রাজনীতির সাথে প্রায় ৩৮ বছর জড়িত। রাজনীতির অনেক চড়াই উৎরাই আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন। বর্তমান দেশের যে অবস্থায় আপনি উন্নত করেছেন, বিশেষ করে অতি দরিদ্র (প্রান্তিক) গৃহহীন আশ্রয়হীন মানুষের জন্য জমি ও ঘর নির্মাণ করে দিয়ে প্রতি ক্ষনে স্রষ্টার কাছে প্রান্তিক মানুষের কাছে আপনি দোয়া’র পাত্রী হয়ে উঠেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আপনি মৃত্যুকে জয় করেছেন। পিছনে ফিরে তাকানোর আর কোন প্রয়োজন নাই। এই মুহূর্তে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে হয় না, কেননা যদি আজ প্রশ্ন করা হয় তাহলে সহজ উত্তর ব্যতিক্রম বাদে যার সুযোগ আছে সবাই দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। কথায় বলে কম্বলের লোম বাছতে গেলে কম্বল থাকবেনা। এই মুহূর্তে প্রয়োজন আপনি আপনার দলের বহু অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং দেশ প্রেমিক আমলাদের সমন্বয়ে দ্রুত কোন পদক্ষেপ নিলে দুর্নীতির ফাঁক ফোঁকরে বন্দ হয় সেই চেষ্টাই করা উচিত। দুর্নীতি বন্ধ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর অতিতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হবে বিচক্ষণতার কাজ। মাহাথির মুহম্মাদ কে বলা হয় আধুনিক মালয়েশিয়ার রুপকার। দেশের উন্নয়ন যখন চলছে চলতেই থাকবে, আপনি দেশের দুর্নীতি বন্ধ করে দেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভবিষ্যৎ ইতিহাসে স্থান করে নিন।
The post দুর্নীতিই রাষ্ট্র ও সমাজ অবক্ষয়ের প্রধান কারণ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3qG84ry
No comments:
Post a Comment