Monday, July 5, 2021

সামেক হাসপাতালের রোগীরা বেড়াতে ও চা-সিগারেট খেতে যাচ্ছেন বাইরে! https://ift.tt/eA8V8J

ওয়ার্ডের আশে পাশেই দালাল-রিপ্রেজেন্টটেটিভদের আনা গোনা
নাজমুল শাহাদাৎ জাকির: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের করোনাভাইরাস ইউনিট ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ওয়ার্ডের বাইরে বিরাজ করছে থমথমে নিরবতা। প্রায়শই শোনা যাচ্ছে বুকফাটা কান্নার শব্দ। কারো চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরলেও বের হচ্ছে না শব্দ। এভাবেই স্বজনের লাশ নিয়ে আহাজারি করতে করতে হাসপাতাল ত্যাগ করছেন অনেকে।
এই দৃশ্যগুলো যখন ভয়াবহ এক পরিস্থিতির বার্তা দিচ্ছে-ঠিক সে সময় স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই মেডিকেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীরা আইসোলেশনে না থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্যবিধি ও চলাফেরার নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আইসোলেশন সেন্টার থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে ও হাসপাতালের বাইরে রোগীরা ঘুরতে থাকাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে মেডিকেল কলেজের আশপাশের এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে। সোমবার দিনভর সরেজমিনে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থানকালে হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে জরুরি বিভাগ, হাসপাতালে সামনের খাবারের দোকান থেকে চায়ের দোকান, ফার্মেসি থেকে আবার হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে করোনা উপসর্গ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীদের। এছাড়াও চিকিৎসাধীন রোগীদের চেয়ে রোগীর স্বজনরাসহ দালাল ও মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভীড় সবচেয়ে বেশী লক্ষ করা গেছে। কোন স্বাস্থবিধির তোয়াক্কা না সাতক্ষীরার একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চেয়ে রোগীর স্বজন, দালাল ও মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের চলাচলের কারনে তাদের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি বলেই ধারণা করছেন অনেকে।
সূত্রমতে, করোনায় আক্রান্তের প্রথম পর্যায়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ৯০জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে সামেক কর্তৃপক্ষ। তবে জেলায় দিনদিন করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা গাণিতিক হারে বাড়তে থাকলে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে সম্পূর্ণ রূপে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
তবে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণার পর করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৯০টি বেড ধাপে ধাপে বাড়িয়ে বর্তমানে ২৫০টি করা হয়েছে। কিন্তু, বর্তমানে মেডিকেল কলেজে নির্ধারিত ২৫০টি বেডের বিপরীতে সোমবার (৫ জুলাই) নাগাদ করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ব্যক্তির সংখ্যাই ৩০জন বেশি।
এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আনসার সদস্য জানান, বিগত কয়েকদিনধরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কয়েকজন করোনা রোগীকে ভবন থেকে নেমে হাসপাতালের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে দেখছেন তারা। এদের অনেকে আবার সিগারেট, খাবারসহ ঔষধপত্র ক্রয়ের জন্য ফার্মেসীতে আসতেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এ দৃশ্য শুধুমাত্র গত কয়েকদিন ধরেই হচ্ছে। বিকাল বেলা কিংবা সন্ধ্যার দিকে আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে রোগীরা বেরিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই আবার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও দেখা করছেন।
সরেজমিনে হাসপাতালের ভিতরে গেলে সত্যতা মেলে প্রত্যক্ষদর্শীসহ আনসার সদস্যদের কথায়। আইসোলেশন সেন্টারের করোনা ওয়ার্ডের ভেতরে রোগীর স্বজনরা দেখা করতে এসেছেন। এদের অনেকে আবার কোনপ্রকার স্বাস্থবিধি না মেনে করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত রোগীদের বিছানায় বসেই গল্পে মেতে উঠেছেন। আবার অনেক রোগী হাতে ক্যানোলা পরা অবস্থায় চলাচল করে বেড়াচ্ছেন।
এবিষয়ে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখভালে থাকা একাধিক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোগীসহ রোগীর স্বজনদের এভাবে চলাচলের কারণে আমাদের অনেক সহকর্মী বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এবিষয়টা নিয়ে আমরা বড় স্যারদের নিকট একাধিকবার অভিযোগ করেছি। তবে তাদের কাছে আমাদের কোন কথার গুরুত্ব নেই। তারপরেও আমরা চেষ্টা করে রোগীরদের সাথে রোগীর স্বজনরা যেনো কম দেখা করতে পারে। তবে একেকজন একেকজনের সুপারিশে আসেন। দেখতে আসা এসব স্বজনদের অধিকাংশ আবার স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে ফটোসেশনে ব্যস্ত থাকেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমাদের কাজ রোগীর সেবা দেওয়া। আমরা সেটাই করি। বর্তমানে প্রয়োজনের চাইতে আমাদের নার্সদের সংখ্যা অনেক কম। তারউপর করোনা আক্রান্তসহ মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন অর্ধশতাধিক নার্স। বড় স্যাররা তো শুধু রাউন্ড মেরে চলে যান। বাকিসময় আমাদেরকে থাকা লাগে জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের অল্পসংখ্যক নার্স দ্বারা কীভাবে ২৮০জন রোগীকে নজরে রাখা সম্ভব? আমরা তাদের সেবা দেয় আর তারা আমাদের পাহারা দেন। কখন আমরা ওয়ার্ড থেকে বের হবো এবং তারা বাইরে যেতে পারবে!
এবিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো: কুদরত ই খুদা জানান, এবিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বেও আমি একাধিকবার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান তিনি।

 

 

The post সামেক হাসপাতালের রোগীরা বেড়াতে ও চা-সিগারেট খেতে যাচ্ছেন বাইরে! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3hG8DO0

No comments:

Post a Comment