আ: সবুর আল আমীন, কপিলমুনি (খুলনা): খুলনায় মুক্তিযুদ্ধের লোমহর্ষক ঘটনার কালের সাক্ষী পাইকগাছায় কপিলমুনি বিনোদ ভবন। ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক শহর আধুনিক কপিলমুনি রূপকার স্বর্গীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু বাড়িটি বিনোদ ভবন।
এ বাড়ি আর মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মৃতি একই সূত্রে গাঁথা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নতুন প্রজন্মরা ঐতিহাসিক এই বাড়িটি দখলদারদের কবলে থেকে অবমুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সসহ রায় সাহেব স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সামাজিক সংগঠন বিনোদ স্মৃতি সংসদ ও গুণিজন স্মৃতি সংসদসহ এলাকাবাসী।
এই দাবির স্বপক্ষে এ সামাজিক সংগঠন আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। অন্যদিকে এলাকবাসীর মন্তব্য কপিলমুনি বিনোদ ভবন মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকারদের লোমহর্ষক নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ বর্বোরোচিত ঘটনা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বা মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণে স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় সারাদেশে পাঁচটি আধুনিক কমপ্লে¬ক্সের একটি কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লে¬ক্স। অথচ এর কার্যক্রমে বাঁধা প্রদান, সরকারি খাস জমি অবৈধ দখলকারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে কমপ্লে¬ক্স নির্মাণের কার্যক্রম। সম্প্রতি দৈনিক পত্রদূতসহ বিভিন্ন জাতীয়-আঞ্চলীক, অনলাইন পত্রিকায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হবার পর সারাদেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের নতুন প্রজন্মদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভসহ ভূমি দস্যুদের কবল থেকে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে জোর দাবি উঠেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানান যায় ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১। এদিন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি পাক হায়েনা ও তাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত হয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তথা ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কপিলমুনির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কপিলমুনি ছিল রাজাকারদের দুর্গ এবং শক্তিশালী ঘাঁটি। এ ঘাঁটির মাধ্যমে কপিলমুনি, তালা, ডুমুরিয়াসহ খুলনা ও সাতক্ষীরার বিশাল অংশ রাজাকাররা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। খুলনার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নগরী বিনোদগঞ্জ প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারীর বাড়িটি ছিল রাজাকারদের ঘাঁটি। সাড়ে তিনশ’র বেশি রাজাকার ও মিলিশিয়ার ছিল সশস্ত্র অবস্থান। সুবিশাল দোতলা ভবন, চারদিকে উঁচু প্রাচীর অনেকটা মোগল আমলের দুর্গের মতো। সুরক্ষিত দুর্গে বসে চলতো তাদের অত্যাচার। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফার দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার সম্মুখযুদ্ধের পর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে পতন ঘটেছিল দক্ষিণ খুলনার সবচেয়ে বড় রাজাকার ঘাঁটিটির। আত্মসমর্পণ করা ১৫৬জন রাজাকারকে জনতার রায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। যুদ্ধকালীন জনতার রায়ে এতো সংখ্যক রাজাকারদের একসঙ্গে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের ঘটনা সম্ভবত আর নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এই বিনোদ ভবন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন। যোজন-যোজন কাল ইতিহাসের পাতায় বিনোদ ভবন নিরব সাক্ষী হিসেবে আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করবে।
অতচ দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৫০বছর পরও অবমুক্ত হয়নি এ ঐতিহাসিক বাড়িটি। জীবন দশায় বাড়িটি অবমুক্ত দেখে যেতে চান আজও বেঁচে আছেন সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আর এসব বিবেচনা করে উপজেলার কৃতি সন্তান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন এর সার্বিক প্রচেষ্টায় বিনোদ ভবন তথা মুক্তি যোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্ল¬ক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এবং বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ দেন। কিন্তু তাদের সেই উদ্যোগকে বানচাল করার জন্য প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ভূমিদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ নিয়ে কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে পড়েছে গর্তের সাপ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজ্জামেল হক ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনকৃত জায়গা নিয়ে বিবাদমান সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলা প্রশাসন দফায় দফায় জরিপ কার্য করতে যেয়ে ভয়ংকর কাহিনী বেরিয়ে পড়েছে। নির্ধারিত স্থানের পাশে ‘ক’ তালিকা ভিপিসহ কুঞ্জবিহারি সাধুর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার মানসে তার (বড় স্ত্রী) বড় ছেলেকে বাদ দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে ইউপি সদস্য আ. আজিজ বিশ্বাসকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময় মিথ্যা ওয়ারিশ কাম সার্টিফিকেট নিয়েছে দখলবাজরা।
যার ফলে সম্পদলোভীরা নারায়ন সাধুকে অস্বীকার এবং তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে। যেহতু কুঞ্জবিহারি সাধুর বড় ছেলে ভারতবাসী সে ক্ষেত্রে তার সম্পত্তি রাষ্ট্র রক্ষা করবে। অন্যদিকে রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু দানকৃত সম্পত্তির মধ্যে ০.৪৮একর (ভিপি ‘ক’) হতে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কমপ্লে¬ক্স সংলগ্ন জায়গা নেওয়া হোক। কুঞ্জবিহারি সাধু বংশধর হয়ে রায় সাহেব বিনোদ বিহারি সাধু বংশধর পরিচয় দিয়ে রায় সাহেবের দানকৃত সম্পত্তি আত্মসাৎ চেষ্টা আইনের পরিপন্থী বলে সচেতন মহল মনে করেন। যার এস.এ ১৯২ ভিপি ‘ক’ এবং ১৯৩ খতিয়ান কুঞ্জবিহারি সাধু এবং ননীবালা অধিকারী সম্পত্তি মালিক। ভিপি সম্পত্তি সরকারি নীতিমালা অমান্য করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণে বাধা প্রদানকারী দখলদাররা (১৯২) ভিপি সরকারি সম্পত্তি প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে বিক্রি ও ভাড়া দিয়ে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে অবহেলিত কপিলমুনি গৌরবগাঁথা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ইতিহাস। ভুলতে বসেছে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম কপিলমুনি যুদ্ধের ইতিহাস। আজও সংরক্ষণ করা হয়নি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়ীত স্থাপনা ও স্থানগুলো। একে এক নিচিহ্ন হচ্ছে স্মৃতিচিহ্নগুলো।
The post মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়ীত স্থাপনা ও স্থানগুলো সংরক্ষণের দাবী মুক্তিযুদ্ধের লোমহর্ষক ঘটনার কালের সাক্ষী বিনোদ ভবন appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2WPaw4N
No comments:
Post a Comment