বিশেষ প্রতিনিধি: কালিগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাবু নামে এক ভÐ কবিরাজের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার প্রতিশ্রæতিতে অর্ধলক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চাম্পাফুলের এক ইউপি সদস্য ও এক দফাদার। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের ঘুষুড়ি ১০ শয্যা হাসপাতাল সংলগ্ন ঋষি পাড়া এলাকায়।
সরেজমিন গেলে ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা ও মা জানান, মেয়ে অসংলগ্ন আচরণ করছে এমন ধারণা থেকে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে তার চিকিৎসার জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর বরেয়া গ্রামের মৃত বয়ে গাজীর ছেলে কবিরাজ গুনিন বাবু (২৩) এর স্মরণাপন্ন হন তারা। এসময় ওই কবিরাজ তাদের মেয়ের উপরিদোষ আছে এবং এক্ষুনি ঝাডফুঁক না করালে মেয়ে বাঁচবে না বলে ভয় দেখায়। এরপর তাদের মেয়ে এবং মেয়ের ছোট আরেক বোনকে সাথে নিয়ে চিকিৎসা করানোর নামে মোটরসাইকেলে করে কবিরাজ তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
বাড়িতে নিয়ে কবিরাজ খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ বা অন্য কোন চেতনানাশক জাতীয় ওষুধ সেবন করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তারা ঘুমিয়ে পড়লে বাবু কবিরাজ তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে।
বিকেলে মেয়ের ঘুম ভাঙলে সে প্রচন্ড যন্ত্রণায় কান্নাকাটি শুরু করলে কবিরাজ বাবু তাদের দু’জনকে দ্রæত বাড়িতে রেখে চলে যায়। বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে সে বিষয়টি তার মাকে জানায়। পরিবারের সদস্যরা দ্রæত স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় তাকে।
ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা ও মা আরও জানান, মেয়েকে বাড়িতে আনার পর চাম্পাফুল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আবু বক্কর এর নিকট সবকিছু খুলে বলা হয়। তখন মেম্বার আবু বক্কর ঘটনাটি ইউপি চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে দফাদার তপনকে সংবাদ দিয়ে তার পরদিন বাবুকে খবর দিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে এনে মেম্বর, চৌকিদারসহ স্থানীয় একটি গ্রæপ কবিরাজ বাবুকে মারধর করে মোটরসাইকেল আটকে রেখে দেয়। এসময় তারা ৫০ হাজার টাকা না দিলে তাকে থানায় দেওয়ার ভয় দেখায়। পরদিন কবিরাজ বাবু ৫০ হাজার টাকা মেম্বর আবু বক্কার ও দফাদার তপনের হাতে দিয়ে মোটরসাইকেল ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
এরপর মেম্বর এবং তপন দফাদার এসে আমাদের হাতে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে এবং কাউকে কিছু জানাতে নিষেধ করে।আমরা সেই ভয়ে কাউকে কিছু না বলে অসুস্থ মেয়েকে বাড়িতে রেখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। আমরা থানায় যেতে চাইলে দফাদার তপন ও মেম্বর আবু বক্করসহ তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলে থানায় মামলা করতে গেলে তোমার মেয়ের বিয়ে হবে না এবং তোমার মেয়েকে কাটা ছেড়া করবে। কাউকে কিছু না বলে বাড়িতে চুপচাপ থাকো। কেউ আসলে কারও সাথে কথা বলবে না।
এ বিষয়ে দফাদার তপনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রীর বাবাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল। পরে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি থানার তরুণ বাবুকে জানিয়েছিলাম। তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। পরে আমি মেম্বরকে জানালে মেম্বর এসে মীমাংসা করে দেন।
একজন দফাদার হয়ে থানায় না জানিয়ে মীমাংসা করতে পারে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে দফাদার কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি খবরের কাগজে না লেখার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করতে থাকেন।
ইউপি সদস্য আবু বক্কারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, দফাদার তপন আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমার মাধ্যমে ছাত্রীর পিতা-মাতার হাতে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে মিমাংসা হয়ে গেছে বলে আমাকে জানায়।
থানা ফাঁড়ির দিকটি তপন দেখবেন বলে কবিরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একটি ধর্ষণে ঘটনা জরিমানা দিয়ে মিমাংসা করানোর সুযোগ আছে কী না জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথম আপনাদের মুখ থেকে এই বিষয়টি জানলাম। তখন পাশে দাঁডানো দফাদার তপনকে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এতবড় একটা ঘটনা আমাকে জানালে না কেন? তখন তপন দফাদার ভুল হয়েছে বলে জানান।
থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক তরুণ কুমারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদিন তপন দফাদার ফোন করে বলে ছোট একটি নারীঘটিত ব্যাপারে মিমাংসা করেছে বলে জানিয়েছিলো। এত বড় ঘটনা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।
থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এঘটনায় কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
The post কালিগঞ্জে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ভন্ড কবিরাজের বিরুদ্ধে ঘটনা ধামাচাপা দিতে অর্ধ লক্ষ টাকার অর্থ বাণিজ্য ইউপি সদস্য ও দফাদারের appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3CN15lK
No comments:
Post a Comment