Saturday, December 4, 2021

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত ও ভুটান  https://ift.tt/eA8V8J

ডা. সুব্রত ঘোষ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর এক মাইলফলক। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারছিলেন বিজয় সন্নিকটে। পাকিস্তানি হায়েনাদের মনোবল এ সময়ে তলানিতে ঠেকে। এদিন বাংলাদেশকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত ও ভুটান স্বীকৃতি দেয়। এটা পাকিস্তানিদের জন্য অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায়।
পাকিস্তানিদের পরাজয় সুনিশ্চিত করতে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাঙালি। এর ফলে চারদিকে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানিরা। তাদের অনেক সৈন্য পালাতে শুরু করে এদিন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে পাকিস্তান।
ভারতের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’তে ঘোষণা করা হয়- বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। তবে ইতিহাস বলে ভারতের কয়েক ঘণ্টা আগে তারবার্তার মাধ্যমে ভুটান প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ভারতের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহ এবং সেই সংগ্রামের সাফল্য এটা ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট করে তুলেছে যে তথাকথিত মাতৃরাষ্ট্র পাকিস্তান বাংলাদেশের মানুষকে স্বীয় নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ অসমর্থ। বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা সম্পর্কে বলা যায়, ‘গোটা বিশ্ব এখন সচেতন যে তারা জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়, জনগণকে প্রতিনিধিত্বকারী অনেক সরকারই যেমনটা দাবি করতে পারবে না। গভর্নর মরিসের প্রতি জেফারসনের বহু খ্যাত উক্তি অনুসারে বাংলাদেশের সরকার সমর্থিত হচ্ছে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত জাতির আকাঙ্ক্ষা বা উইল অব দ্য নেশন দ্বারা।
এ বিচারে পাকিস্তানের সামরিক সরকার, যাদের তোষণ করতে অনেক দেশই বিশেষ উদগ্রীব, এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণেরও প্রতিনিধিত্ব করে না।’ ইন্দিরা গান্ধী বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বক্তব্য শেষ না হতেই ভারতের সংসদ সদস্যরা হর্ষধ্বনি আর ‘জয় বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন। এর আগে ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুগ্মভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেন।
ভারতের স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তান’ যুদ্ধের পরিচিতি থেকে মুক্তি দেয়। এ স্বীকৃতির ফলে মুক্তিযুদ্ধের গতি আরও বেগবান হয়। রণযুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও পরাজিত হতে থাকে পাকিস্তান। ভারতে মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্যও বন্ধ হয়ে যায়। উত্তর ভিয়েতনামে যুদ্ধরত দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত মার্কিন ৭ম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু রণাঙ্গনের পাকিস্তানি সেনারা তখন পালাতে শুরু করে। একাত্তরের এদিন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ বিরতি সংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাবের ওপর সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় দফা ভেটো দেয়। নিউজউইক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে।
এদিন সকালে মুক্ত শেরপুর শহরে হেলিকপ্টারে পৌঁছান মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জে. অরোরা। হাজার হাজার মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিপাগল মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানান। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও মুক্ত করে এদিন বীরগঞ্জ ও খানসামার পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের দিকে এগিয়ে যায় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী।

The post ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত ও ভুটান  appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3Gf1jDF

No comments:

Post a Comment