Monday, September 6, 2021

দিনাজপুরের রামসাগর এশিয়ায় সবচেয়ে বড় দীঘি https://ift.tt/eA8V8J

মোঃ কায়ছার আলী

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি রামসাগর প্রখ্যাত, দয়ালু, সুশাসক, প্রজাপ্রিয় রাজা রামনাথের রাজত্বকালের (১৭২২-১৭৬০) শুধু অমর কীর্তিই নয়, আমাদের মায়াভরা, জাদুমাখা দিনাজপুরের এক সোনালী অধ্যায় বা ইতিহাস। আজ রাজা, মহারাজা, বাদশাহ বা তৎকালীন ক্ষমতাশালীরা বেঁচে নেই কিন্তু তাঁদের ভালমন্দ ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সম্পদগুলো আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। আজকের দিনের মত সুইচ টিপলেই সংগে সংগে ভূগর্ভস্থ পানি অলৌকিক ভাবে উপরে উঠত না।

তখন ছিল না বিদ্যুৎ, গভীর, অগভীর নলকূপ বা আধুনিক সেচব্যবস্থা। পানীয় জলের জন্য লোকেরা কূপ খনন করত। চাষাবাদ বা মাছচাষ সহ নানাবিধ প্রচুর পানির প্রয়োজনে পুকুর, পুস্করিণী এবং বড় বড় দীঘি খনন করা হয়েছিল। দেশ, বিদেশের প্রায় প্রতিটি জনপদে অসংখ্য দীঘি সেকালের স্বাক্ষ্য বহন করছে। বিভিন্ন স্থানে দীঘিগুলোর খনন ইতিহাস নিয়ে ছড়িয়ে আছে অনেক কিংবদন্তি ও উপাখ্যান।

অনেক লোক ইতিহাসের চেয়ে কিংবদন্তিকে বেশি বিশ্বাস করে। অতীতের শাসকেরা তাঁদের অফুরন্ত ধনদৌলত প্রজা সাধারণের জন্য কেউ কেউ ব্যয় করতে কার্পণ্য করতেন না। রামসাগরের ঐতিহাসিক ইতিহাস পাঠ করলে আপনার বুকের মধ্যে নদী ভাংগনের মতো নদীপাড়ের বালুকারাশি চুর চুর করে ভেংগে পড়বে।

লোককথা আছে ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকৃতির নিষ্টূর তান্ডব, একটানা অনাবৃষ্টি, খরা তথা পানির অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে হাজার হাজার প্রজা। অনাবাদি রয়ে গেল মাঠ বা জমি, ফসল শস্য নেই একমুঠ পরিমাণ। প্রচন্ড খাদ্যভাব বা দুর্ভিক্ষ রাজ ভান্ডার হতে কিছুটা খাদ্য সমস্যার সমাধান হলে, দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি ও খরায় খালবিল, দীঘিনালা শুকিয়ে খাঁ খাঁ বিরাজ করে। চারিদিকে কান্নার রোল, হতাশা আর দুর্ভাবনা বৃদ্ধ রাজার আহার নিদ্রা কেড়ে নেয়।

এমনপ্রেক্ষিতে রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মাত্র ১৫ দিনে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক নিয়ে একটি পুকুর খনন করেন। কিন্তু সেই পুকুরে একফোঁটা পানি মিলল না। তখন রাজা স্বপ্নে দৈববাণী পেলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্র রামনাথকে দীঘিতে বলি দিলে পানি উঠবে। স্বপ্নাদিষ্ট রাজা দীঘির মাঝখানে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করলেন। গ্রামে, গঞ্জে ঢাকঢোল পিটিয়ে মহরত বাজিয়ে প্রজাদের জানানো হলো কাল ভোরে দীঘির বুকে পানি উঠবে।

সেইভোরে যুবরাজ রামনাথ সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে হাতির পীঠে চড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলেন মন্দিরে। তৎক্ষনাৎ দীঘির নিচ থেকে অঝোর ধারায় পানি চোখের পলকে ভরে গেল বিশাল দীঘি। যার এখন আয়তন দৈর্ঘ্য ১০৩১মিটার প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। যুবরাজের মাথার সোনার মুকুট পানিতে ভেসে গেল। যুবরাজ রামের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য দীঘির নাম রাখা হল “রামসাগর”।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দক্ষিণে তাজপুর গ্রামে মানবসৃষ্ট বা তৈরি রামসাগরের আয়তন ৪৩৭৪৯২ বর্গকিঃমিঃ, গভীরতা গড়ে ১০মিঃ ও পাড়ের উচ্চতা ১৩’৫মিঃ। এতবড় দীঘি আজ আমরা পেলেও সঠিক পরিকল্পনা বা পুরোপুরি যতেœর অভাবে বনবিভাগের আওতায় তা ১৯৬০ সাল থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে অনাদরে পড়ে আছে।

দীঘির চারিদিকে প্রায় আড়াই কিঃমিঃ সড়কের দুইধারে রয়েছে দেবদারু, ঝাউ ও মুছকন্দ ফুলের গাছ, উন্নতমানের ২শত প্রজাতির গোলাপ, লালমাটির ছোটখাট টিলা, পুকুরের পানি কিছুটা নীলাভ বর্ণের এবং সবুজ প্রান্তর তথা বৃক্ষরাজিতে শোভিত। পশ্চিম পাড়ে ২ একর জমির উপর নির্মিত কৃত্রিম “শিশুপার্ক” এবং মিনি চিড়িয়াখানায় মায়াবী চিত্রা হরিণের সংসার।

৭ টি পিকনিক কর্ণার, পশ্চিমে দ্বিতল ডাকবাংলো, পাষাণ বাঁধার দীঘির পাকা ঘাট, নানা কৌতুহল ভরা উত্তর দিকে ভগ্ন নগ্ন সৌধ, চটপটি-ফুচকার দোকানের পাশাপাশি দৃষ্টিকটু অসামাজিক পরিবেশ। আমরা দিনাজপুর বাসী যারা রামসাগর দেখেছি তারা চাই কাগজে কলমে নামমাত্র “জাতীয় উদ্যান” নয়, বাস্তবে “জাতীয় উদ্যান”। যেখানে থাকবে আধুনিকতার স্পর্শ, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অবাধ বিচরণ, যাতায়াত সহ নিরাপদ রাত্রিযাপন।

জরুরী ভিক্তিতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাফিক ঝুলন্ত সেতু, ৫০ আসন বিশিষ্ট ডরমিটরি, মিনি ট্রেন, পানির উপরে উন্নতমানের ক্যাফেটেরিয়া, সকল নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি ইত্যাদি। যত বেশি অর্থ বিনিয়োগ হবে তত বেশি রাজস্ব আয় বাড়বে। অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি এই বাজেট আসছে, টেন্ডার হচ্ছে। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আমাদের রামসাগর এশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র বা নগরী হিসেবে গড়ে উঠুক সরকারের কাছে তা বিনীত অনুরোধ করছি।
লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।

সদস্য, দিনাজপুর কলামিস্ট এসোসিয়েশন, দিনাজপুর।
মোবাঃ ০১৭১৭৯৭৭৬৩৪, ০১৮১৮২৩০৯৭০

The post দিনাজপুরের রামসাগর এশিয়ায় সবচেয়ে বড় দীঘি appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/38KktCQ

No comments:

Post a Comment