Wednesday, April 29, 2020

বাংলাদেশে ২০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে https://ift.tt/eA8V8J

অর্ডার কমিয়ে দেয়ার ফলে বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে। লকডাউনের কারণে সারা বিশ্বের হাইস্ট্রিট ফ্যাশন এম্পোরিয়ামগুলোর দরজা বন্ধ। কিন্তু গ্লাস আর স্টিলে তৈরি এসব শপিং মলগুলো থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এর শিকারে পরিণত হচ্ছেন যারা, তাদের কথা ভুলেই যাওয়া হয়েছে। অনলাইন বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

যেসব শ্রমিক এমন অবস্থার শিকার তার মধ্যে অন্যতম সাবিনা আকতার। ইউরোপের মার্কেটে বাংলাদেশে তৈরি শার্ট সরবরাহ দেয় ঢাকার বাইরে এমন একটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন তিনি। কয়েকদিন আগে তার বস ঘোষণা দেন যে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ইউরোপের ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করেছে। ফলে তার পক্ষে আর কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে না।

এমন অবস্থার শিকারে পড়া সাবিনা বলেন, জানি না কিভাবে বেঁচে থাকবো। আমি চাকরি হারিয়েছি। জানি না, কি দিয়ে খাবার কিনবো।

একই অবস্থার শিকারে পরিণত হয়েছেন আনিসা বেগম। ঢাকার উপকণ্ঠে পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। আনিসা বলেছেন, তার স্বামী ও তিনি দিনে একবেলা খাবার খেয়ে বাঁচতে পারবেন। কিন্তু বাচ্চারা তো তা পারবে না। তার ভাষায়, যদি আমাদেরকে বাঁচাতে সরকার এগিয়ে না আসে, তাহলে বাঁচার কোনোই পথ নেই।
খালেদা পারভীন নামে এক শ্রমিক বলেছেন, তার কারখানার মালিক কোনো সতর্কতা নোটিশ না দিয়েই লে-অফ করে দিয়েছেন। তার ভাষায়, ছুটি থাকায় আমি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। ৫ই এপ্রিল কারখানা খোলার কথা ছিল। সেদিন কাজে যাওয়ার পর দেখি কেউ একজন একটি সাইনবোর্ড ঝুঁলিয়ে দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সব কর্মীকে লে-অফ দেয়া হয়েছে।

চীনের পরই বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। এ ব্যবসা খুব বেশি নির্ভরশীল ইউরোপ ও আমেরিকার অর্ডারের ওপর। বাংলাদেশ রপ্তানি খাত থেকে যে রাজস্ব আয় করে তার শতকরা ৮৩ ভাগই আসে গার্মেন্ট শিল্প থেকে। বছরে এর মোট পরিমাণ ৩২০০ কোটি ডলারের বেশি। এই শিল্পে কর্মরত কমপক্ষে ৪০ লাখ শ্রমিক। তার মধ্যে বেশির ভাগই নারী। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অংশে দোকানপাট বন্ধ থাকায় বৈশি^ক খুচরা বিক্রেতা ব্রান্ডগুলো ভীতশঙ্কিত এবং তারা কমপক্ষে ৩০০ কোটি ডলার মূল্যের বেশি অর্ডার বাতিল করেছে।

শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ৫৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই অর্থ শতকরা ২ ভাগ হার সুদে ঋণ হিসেবে পাবেন কারখানা মালিকরা। এই অর্থ শ্রমিকদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হলে তা দিয়ে শুধু এক মাসের বেতন দেয়া যাবে। যদি কারখানা বন্ধই থাকে তাহলে আনিসা, খালেদা ও সাবিনারা জানেন তাদের জন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা থাকবে না।

পশ্চিমা পোশাকের কিছু ব্রান্ডের মনোভাবের নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। কোন রকম আর্থিক বা নৈতিক দায়িত্ব ছাড়াই অর্ডার বাতিল করার জন্য খুচরা ক্রেতাদের সমালোচনা করেছে তারা। এমনকি তাদের জন্য অনেক শ্রমিক পোশাক তৈরির কাজ শেষ করেছে।  ক্রমবর্ধমান সমালোচনা ও চাপের পরে এইচঅ্যান্ডএম এবং জারা’র মালিকানাধীন ইন্ডিটেক্সের মতো কিছু ব্রান্ড পোশাক প্রস্তুতকারকদের বর্তমান অর্ডারের পূর্ণাঙ্গ অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু সেন্টার ফর গ্লোবাল ওয়ার্কার্স রাইটসের সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, অর্ডার বাতিল করা এই ব্যবসা এবং কর্মীদের ওপর ভয়াবহ এক প্রভাব ফেলবে। ওই জরিপে বলা হয়েছে, যখন অর্ডার বাতিল করা হয়, তখন সরবরাহকারীরা তার মধ্যেই যেসব কাঁচামাল কিনে ফেলেছেন তার মূল্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন শতকরা ৭২.১ ভাগ ক্রেতা। আবার ‘কাট-মেক-ট্রিম’-এর দাম অথবা উৎপাদন খরচ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ক্রেতাদের শতকরা ৯১.৩ ভাগ। ফল হিসেবে জরিপে অংশ নেয়া কারখানাগুলোর শতকরা ৫৮ ভাগ হয়তো পুরোপুরি না হয় বেশির ভাগ কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট রুবানা হক সতর্ক করেছেন যে, এসব কারণে কমপক্ষে ২০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক কাজ হারাতে পারেন। কোনো ক্রেতাই এখন শার্ট বা ট্রাউজার কিনছেন না। ক্রেতারা এখন করোনা ভাইরাস মহামারিতে তাদের খাদ্য ও ওষুধ খাতেই খরচ বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী হয়েছেন।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে মারা যান কমপক্ষে ১০০০ শ্রমিক।  এর পর গার্মেন্ট শিল্পে নিরাপত্তার মান উন্নয়নে বৈশি^ক প্রচেষ্টা সফল হয়। একই সঙ্গে সাপ্লাই চেইন আরো বেশি স্বচ্ছ হয়। বার্ষিক ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের রেকর্ড রাজস্ব আয় করে বৈশি^ক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। পক্ষান্তরে গড়ে বাংলাদেশে একজন শ্রমিক মাসে ১০০ ডলারের কিছু বেশি অর্থ উপার্জন করেন। এসব ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে আরো অনেক কিছু করার বাকি এখনও। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন এরই মধ্যে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। তারা খুচরা বিক্রেতা, কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবে। চেষ্টা করবে বর্তমান সঙ্কট সমাধানে একটি পন্থা বের করতে।   

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের (আইটিইউসি) শারণ বারো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ব্যবসা অব্যাহত রাখার সুবিধা হলো কাজ, আয় ও সামাজিক সুরক্ষা। এই বিবৃতিতে একটি জরুরি তহবিলের আহ্বান জানানো হচ্ছে। আমাদের দরিদ্র দেশগুলোতে গার্মেন্ট শিল্প টিকে থাকার জন্য শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার আহ্বান জানাই।

এ আহ্বানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইন্ডিটেক্স ও এইচঅ্যান্ডএম। জারা মালিকানাধীন ইন্ডিটেক্স এক বিবৃতিতে বলেছে, মূল শর্ত অনুযায়ী আমরা আমাদের সরবরাহকারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা পুরোপুরি পূরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের অর্ডারের যেসব পণ্য তৈরি করা হয়ে গেছে অথবা বর্তমানে প্রডাকশনে আছে তার পূর্ণাঙ্গ অর্থ পরিশোধ করা হবে।

এইচঅ্যান্ডএম বলেছে, সব দেশে গার্মেন্ট প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারীদের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতি অটল থাকবে তারা। যদি যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে উৎপাদিত গার্মেন্ট সরবরাহ করা হয় তাহলে তারা উৎপাদিত এবং উৎপাদনে আছে, এমন পোশাক সরবরাহ নেবে।

কিন্তু সময় এবং গতি এ দুটি বিষয় বাংলাদেশী মালিকদের জন্য খুব জরুরি বিষয়। মিসামি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরণ আলি। ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরুর পর তার কারখানায় তৈরি হয় এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক। তিনি বলেন, আমরা ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি। সুনির্দিষ্ট এক ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা। তার কারখানায় কাজ করেন প্রায় ১৬,০০০ শ্রমিক। তিনি শিগগিরই চালু করতে চান। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। কারণ, শ্রমিকরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে, কাছাকাছি বসে কাজ করেন।

২৬ শে মার্চ থেকে লকডাউনের অধীনে রয়েছে বাংলাদেশ। গণপরিবহন চলাচল ও ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। ২৮ শে এপ্রিল মঙ্গলবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪৬২। মারা গেছেন ১৫৫ জন। লকডাউন থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে গার্মেন্ট শিল্পকে। তবে কিছু কারখানা পিপিই তৈরির জন্য খোলা ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, প্রায় দুই লাখ গার্মেন্ট কর্মী কাজে ফিরেছেন। তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য। একই সঙ্গে হাইজিন সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।

কিন্তু শ্রমিকরা বলছেন, কিছু কারখানায় এই আহ্বান তোয়াক্কাই করা হয় না। একজন শ্রমিক বলেছেন, প্রতিদিন কাজে যাচ্ছি। কিন্তু ভীতি শঙ্কার মধ্যে রয়েছি। আমার কারখানায়, ছোট্ট একটি স্থানে আমাদের অনেকজনকে কাজ করতে হয়। এ জন্য সেখানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। ফলে আমার জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি।

The post বাংলাদেশে ২০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2WfxRs5

No comments:

Post a Comment