Tuesday, April 28, 2020

মুক্তমত: ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর https://ift.tt/eA8V8J

সাঈদ মেহেদী:
‘বীর’ বিশেষণটি আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ব্যবহার করে থাকি আমাদের গৌরবান্বিত মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের ক্ষেত্রে।
কারণ জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে সেদিন তারা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। জীবনমায়াকে তুচ্ছ করে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও লড়েছিলেন সম্মুখ সমরে। ছিনিয়ে নিয়েছিলেন স্বাধীনতা। যার সুফল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ, যেখানে আমাদের অবাধ বিচরণ।
পৃথিবীতে সবকিছুই নশ্বর, সবাইকে একদিন চলে যেতে হয় ¯্রষ্টার ইচ্ছায় প্রকৃতির নিয়মে, শুধু করোনাতে নয়, যে কোন মুহূর্তে আমি আপনি মারা যেতে পারি অন্য কোন ওছিলায় বা উপসর্গে। সুতরাং আমাদের ভাবনাটা হওয়া উচিত সুদূরপ্রসারী যেটি আমাদের পুর্বপুরুষেরা করে গেছেন।
মনে রাখবেন মৃত্যু ভয়ে তটস্থ থেকে কখনো উত্তরণ সম্ভব নয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যদি মৃত্যু ভয়ে ন্যুয়ে পড়তেন তাহলে আমরা কি পেতাম এই স্বাধীন দেশ? ইতিহাসের বড় বড় যোদ্ধা, দার্শনিক, ধার্মিক, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, বিজ্ঞানী সকলেই যদি তাদের কর্মকান্ড ও চিন্তাচেতনা তাদের জীবদ্দশা কেন্দ্রিক করতেন তাহলে কি আমরা তাদের মৃত্যুর শত সহ¯্র বছর পরেও তাদের সুফল ভোগ করতে পারতাম? পারতাম না।
আজকের এই আধুনিক সভ্যতা; যার পিছনে আছে শত সহ¯্র বছর আগের আমাদের পূর্বসুরীদের মেধা ও শ্রম। পূর্বসুরীদের পথ ধরে আমাদেরও কিছু করণীয় আছে, যেটি করতে হবে আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। এই মুহূর্তে আমাদের একটি যুদ্ধে নামতে হবে, সেটি হল মৌন যুদ্ধ, টিকে থাকার যুদ্ধ।
এ সমাজের নিষ্পাপ শিশু ও প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠ সকলের অসহায় মুখ আমাদের পানে চেয়ে আছে পরম নির্ভরতায়। যে কারণে যুদ্ধটি অত্যাবশকীয়, এই যুদ্ধের অস্ত্র কোন ধাতব বা রাসায়নিক অস্ত্র নয়। এই যুদ্ধের একমাত্র অস্ত্র হল ‘সচেতনতা’ অনেকেই সেটা শুরুও করেছেন। যারা করেন নি তাদেরও করতে হবে আজ থেকে, এখন থেকেই। সেটা যদি আমরা না করতে পারি তাহলে আমাদের শহীদ আত্মত্যাগীদের প্রাণ বিসর্জন বৃথা যাবে, তাদের আত্মা কষ্ট পাবে। সময় এসেছে মানুষ হিসেবে মনুষ্য ঋণ আর নাগরিক হিসেবে নাগরিক ঋণ শোধ করবার।
হ্যাঁ, আমি সাঈদ মেহেদী বলছি, আপনাদের সাঈদ মেহেদী। আপনাদের সহোযোগিতা, আস্থা, বিশ্বাস, ভালবাসায় হয়েছি এ জনপদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মী (আওয়ামী লীগ), হয়েছি একজন জনপ্রতিনিধি। জানি না আপনাদের আস্থার প্রতিদান কতটুকু দিতে পারি বা পেরেছি। তবে আমি চেষ্টা করি আমার দৃষ্টিকে সবসময় সার্বজনীন পর্যায়ে রাখার, কারণ আপনারা প্রত্যেকেই আমার শক্তির উৎস, আমার পরমাত্মীয়। আমি ভীষণ ভাবে ঘৃণা করি কর্তৃত্বের নেতৃত্ব। আমি বিশ্বাসী উজ্জীবনের নেতৃত্বে। নেতা সত্তা নয় উজ্জীবক সত্তাই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করে এবং পরিচালিত করে।
আমি আলোতে মুগ্ধ তবে বিস্মিত নই, আমি বিস্মিত আলোর উৎস সূর্যে, তেমনি আমি ভালোতে খুশি তবে তৃপ্ত নই, আমি তৃপ্ত ভালোর উৎকৃষ্টে।
জানি করোনার থাবায় হতবিহ্বল পৃথিবীর এই ক্রান্তিলগ্নে উপরিউক্ত কথাগুলো খুব বেশি মানানসই নয়, তবু বললাম, কারণ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪৪ বছর আগে এদেশের অর্থনীতিতে কৃষিকে সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে কৃষক ও কৃষি নিয়ে স্বপ্নের যে বাতাবরণ তৈরি করেছিলেন সময় হয়েছে সেটির যথার্থ মূল্যায়নের। এজন্য আপনাদের প্রতি আমি আবারো একবার অনুরোধ রাখবো- এটাকে আবদার বা দাবিও বলতে পারেন। মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে এই অনাকাক্সিক্ষত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একটি নির্দেশনাও দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, সর্বোপরি এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নেত্রীর নির্দেশনা এবং আত্মোপলব্ধি মোতাবেক আপনাদের কাছে আহবান রাখব।
আশাকরি গুরুত্ব বুঝে পূর্বের ন্যায় সকলেই সাড়া দেবেন। দেখুন মহামারি এই পৃথিবীতে এবারই প্রথম নয়, আগেও এসেছে আবার থেমেও গেছে, এই বিপর্যয়ও কেটে যাবে, একটু সচেতনতার সহিত এই মন্দাকালিন সময়টা পার করে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেই আলো আসবে সুদিন আসবে।
তবে, এটা সহজেই অনুমেয় যে করোনাকালীন সময়ে আমাদের সব থেকে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে খাদ্য নিয়ে, খাদ্য সংকট থেকে দুর্ভিক্ষ হওয়া থেকে বাঁচতে হলে আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন, এ কারণেই নেত্রী বলেছেন এক ইঞ্চি জমি যেন এই মুহূর্তে পতিত না থাকে, আমরা যেন আমাদের বাড়ির আশেপাশে, আঙিনা, টবে, ছাদে বা যে কোন পতিত জায়গার সর্বাত্মক ব্যবহার ঘটিয়ে চাষ করে আমদানি নির্ভর মসল্লা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় শাকসবজির আবাদ করি। আমাদের করতে হবেও সেটি। আমার আজকের আলোচনার মূল প্রতিপাদ্যও এটিই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই আরো একবার কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি পৃথিবীর মানুষ, মূলত সবাই বেকার হয়ে পড়েছি, সবাই আজ গৃহবন্দী। এ কারণে খাদ্যের উপর প্রচুর চাপ, গচ্ছিত সঞ্চয় খরচা করে জীবন বাঁচিয়ে যাচ্ছি। এক সময় সেটাও ফুরাবে। কারণ করোনার আক্রমণ কতদিন চলতে থাকবে সেটিও অজানা কিংবা এখনই যদি করোনা মুক্ত হয়েও যাই তবুও যতটুকু প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে পড়েছে সেখান থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে। কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে। আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হল কৃষি, শিল্প ও রেমিট্যান্স। শিল্প ও রেমিট্যান্সের সাথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্পৃক্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্ব আছে ঝুঁকিতে। যে কারণে আমাদের শিল্প ও রেমিট্যান্স এখন ধরাশায়ী। তাই আপদকালীন সময়ে টিকে থাকার একমাত্র ভরসা হল কৃষি। একটা সময় এদেশের অর্থনীতিতে ৬৫% অবদান ছিল কৃষির। শিল্পবিপ্ল¬বের পূর্বে কৃষির উপর পুরোপুরি নির্ভর করেই মানুষ এগিয়েছে। মনে রাখবেন প্রত্যেকের গায়ে আগুন লাগলে কেউ কাউকে বাঁচাতে আসে না, পৃথিবীর প্রতিটি দেশ আজ করোনার আগুনে দগ্ধ, এমতাবস্থায় বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশা করাটাও বোকামি, তাছাড়া দান খয়রাত আর ত্রাণের উপর নির্ভর করে তিন দিন চলা যায়, দিনের পর দিন নয়, এভাবে চলতে থাকলে বিত্তবানরাও অস্বস্তিতে পড়বে, সরকারও পারবে না সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই নির্ভরশীলতায় আশাবাদী না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে মনোযোগী হতে হবে এখুনি।
আমাদের সরকার মেহনতি মানুষের সরকার। পূর্বের নানান প্রতিকূলতার ন্যায় এবারো সহায়তা ঘোষণা করেছেন মহান নেত্রী। তাই আমাদের উচিত স্থানীয় সকল উৎপাদনশীল উৎসকে কাজে লাগিয়ে কৃষির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। তা না হলে ক্ষুধা সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে এবং আসছে অনিবার্য।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে আমাদের একটা বাড়তি সুবিধা হল আমাদের মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগই তরুণ জনগোষ্ঠী, তাই তরুণদেরই বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ হতে হবে কারণ সক্ষমতাটা তরুণদেরই বেশি। ইতোমধ্যে আমি নিজেও কাজ শুরু করেছি। আমার বাড়ির আশে পাশে সকল পতিত জায়গা, যেমন কল পাড়, পানির ট্যাংকের আশপাশ সব জায়গাকেই চাষের আওতায় এনেছি, আপনারাও শুরু করেন, আপাতত সকলেই কৃষক সত্তাকে ধারণ করেন। নিজে রাজনীতিক হলেও অস্থিমজ্জা মগজে আমি একজন কৃষক আগে থেকেই, এবং কৃষক পরিচয় দিতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই আপনাদের প্রতিও আমার সুদৃষ্টি থাকবে।
কৃষি, মৎস, প্রাণী, গণমাধ্যম কর্মী, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও তাদের স্টাফদের সাথে নিয়ে শুরু হবে আমাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম, সহযোগিতায় থাকবে তরুণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসেবী, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মী সহ নানান শ্রেণি পেশার উপর্যুক্তরা। সকলেই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে গেলে, নেত্রীর নির্দেশনাকে আমরা যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারব এবং উপজেলার প্রতি ইঞ্চি জায়গায় আবাদ করে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করে এই করোনাকালিন যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারব ইনশাল্লাহ।
লেখক: উপজেলা চেয়ারম্যান, কালিগঞ্জ ও সিনিয়র সহ-সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগ, কালিগঞ্জ

The post মুক্তমত: ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3bN3DDk

No comments:

Post a Comment