জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বুকে গুলিবর্ষণকারী জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িত- পলাতক খুনি রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিন ভারতে আটক হওয়ার পর তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো।
বুধবার (২২ এপ্রিল) খুনি মুসলেহ উদ্দিনকে আটকের ঘটনা তুলে ধরে ভারতের এনডিটিভি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এছাড়া এ বিষয়ে সরব হয়ে ওঠে দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যম। সেই ধারাবাহিকতায় দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। তবে বাংলাদেশ বা ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না আসা বিষয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা এখনও বিদ্যমান।
এরই মাঝে বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বঙ্গবদনহুর খুনি মোসলেহ উদ্দিন সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও থেকে যাকে আটক করা হয়েছে, সেই বৃদ্ধই জাতির পিতার প্রকৃত ঘাতক রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেউদ্দিন কিনা, তা নিশ্চিত করতে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে বাংলাদেশি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ ‘মোসলেহ উদ্দিন’ গ্রেফতারের ঘটনা যে সত্য তার অন্তত একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য এক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়া গেল। এখন প্রতীক্ষা এই আটক ‘মোসলেহ উদ্দিন’-ই ঘাতক মোশলেহ উদ্দিন কি না তা নিশ্চিত হওয়া।
প্রতিবেদনে আনন্দবাজার জানায়, সত্তরোর্ধ্ব এই বৃদ্ধকে আটকের পর রোববার মধ্যরাতে উত্তর ২৪ পরগনার বেরি গোপালপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র।
এই সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রায় ৪৮ ঘণ্টা যৌথ জেরায় ধৃতকে মুজিব-ঘাতক বলেই মনে হয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। কিন্তু তার পরেও পরিচয় সুনিশ্চিত হতে বাংলাদেশে বসবাসকারী মোসলেউদ্দিনের নিকট আত্মীয়দের জিনের সঙ্গে বৃদ্ধের জিন মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের দাবি, পরিচয় নিশ্চিত না-হলে ওই বৃদ্ধকে যাতে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সেই কারণেই হস্তান্তরের গোটা বিষয়টি বেসরকারি বোঝাপড়ার স্তরে করা হয়েছে।
সম্প্রতি আটক করে ফাঁসিতে ঝোলানো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমানের আরেক ঘাতক ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদকে জেরার পরেই চার দশক ধরে গা ঢাকা দেওয়া মোসলেউদ্দিনের খোঁজ পায় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। এর পরেই শুরু হয় বাঙালির চোখে ঘৃণ্য এই খুনিকে বাগে আনার মাস্টার গেম। ভারতিয় গোয়েন্দাসংস্থার একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিসছিত করেছে।
সূত্রের দাবি, মাজেদের কাছে পাওয়া তথ্যেরভিত্তিতে তার মতো মোসলেহ উদ্দিনও পশ্চিমবঙ্গে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে দাবি জানায় বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। যার প্রেক্ষিতে তৎপরতা শুরু করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিশেষ টিম।
এই মোসলেউদ্দিনের গুলিতেই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির মহানায়ক জাতির পিতা শেখ মুজিব নিহত হন। এর মাত্র তিন মাস পরে ওই বছরই ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে সেনাদের যে দলটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এবং তিন মন্ত্রী মহম্মদ মনসুর আলি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মহম্মদ কামরুজ্জামানকে গুলি করার পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে, তাতেও ছিল এই বর্বর ঘাতকের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা।
এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ২০০৯-এর নভেম্বরে মোসলেউদ্দিন-সহ ১২ জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখে। কিন্তু অতীতে বেশ কয়েক বার গোয়েন্দাদের জাল কেটে পালায় ধুরন্ধর এই ঘাতক।
লকডাউনের মধ্যে সম্ভাব্য মোসলেউদ্দিনের খবর পেয়ে বাংলাদেশি গোয়েন্দারা দিল্লিতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের শীর্ষ কর্তাদের জানান বলে সূত্রে খবরে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি উপশহর থেকে এই বৃদ্ধকে ধরে একটি গোপন জায়গায় জেরা শুরু করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ডেকে নেওয়া হয় বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্তাদেরও। তার পরেই পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের হাতে সন্দেহবাজন এই মোসলেহ উদ্দিনকে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে।
The post ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য: ধৃত বৃদ্ধই মুজিব ঘাতক, নিশ্চিত করতে জিন পরীক্ষা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3auMhJN
No comments:
Post a Comment