Monday, December 6, 2021

অসময়ের বৃষ্টিতে কাহিল জনজীবন: বেড়েছে শীতের প্রভাব https://ift.tt/3DAUKda

শীতকালীন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা, পানিতে ভাসছে কাটা আমন
পত্রদূত ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের ফলে রোববার (৫ ডিসেম্বর) রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে ঝরেছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। এর আগে শনিবার থেকে আকাশ গুমোট আকার ধারণ করে। ঘন মেঘে আচ্ছন্ন থাকায় সূর্যের দেখা মেলেনি। বৃষ্টির কারণে নিতান্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়ে চরম বিপাকে। ইজিবাইক চালকরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও পা ও ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালকরা পড়েন বিপাকে। এদিকে হেমন্তের শেষে বৃষ্টির কারণে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। ঘন কুয়াশা ও কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন। নিম্নচাপের প্রভাবে গত তিন দিনে সূর্যের দেখা মেলেনি। এর ফলে বয়ে চলা হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ শক্তি হারিয়ে বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে।

 

তবে, বড় ধরণের আঘাতের কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। এদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকায়। বিশেষ করে জরাজীর্ন বেঁড়িবাধ নিয়ে তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ সংস্কারে স্থানীয়রা বালির বস্তা, বাঁশ ও খুটি দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বেঁড়িবাধ রক্ষায় কাজ করছেন। উপকুলীয় এলাকা আশাশুনি ও শ্যামনগরের নদ নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই দিনের টানা বর্ষনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। সাতক্ষীরার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ শক্তি হারিয়ে বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে রবিবার থেকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জাওয়াদের প্রভাবে উপকুলীয় এলকায় ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বর্তমানে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি রয়েছে। তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় জেলেদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের খবর এলেই সাতক্ষীরার উপকূল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রতি বছরই দূর্যোগের কবলে পড়ে সর্বশান্ত উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। জরাজীর্ন বেঁড়িবাধ নিয়ে তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ সংস্কারে স্থানীয়রা বালির বস্তা, বাঁশ ও খুটি দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বেঁড়িবাধ রক্ষায় কাজ করছেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ শক্তি হারিয়ে বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। তবে, বড় ধরণের আঘাতের কোন সম্ভাবনা নেই। তারপরেও আমরা প্রস্তুত আছি। সাতক্ষীরা জেলার উপকুলীয় এলাকা আশাশুনি ও শ্যামনগরের প্রায় ২শ’ মতো আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তুত রাখা হয় এবং স্থানীয় প্রশাসন পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবস্থা রাখেন।

 


এদিকে হেমন্তের আকাশ থেকে অঝরে বৃষ্টি ঝরায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে আন্দাজ করছে কৃষি বিভাগ। ভরা সবজির ক্ষেতে এ বৃষ্টি যেনো মই দিয়েছে। বিশেষ করে ওলকপি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গোলআলু, মূলা, লালশাক, বেগুন, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে উঠতি আমন ধানের। ক্ষেতে কেটে রাখা ধানের সর্বনাশ হয়েছে। এতে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেক কৃষক।
এদিকে কলারোয় থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি আরিফ মাহমুদ জানান, অসময়ের টানা বৃষ্টির ফলে ক্ষতির সম্মুখীন শীত মৌসুমের আবাদকৃত ফসল, শীতকালীন সবজি চাষী ও সরিষা চাষীরা। সবজির মধ্যে আলু, পটল, পেয়াজ, রসুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি ফসলের চরম ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
আমাদের পাটকেলঘাটা প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান জানান, আমনচাষিদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগাম শীতকালীন সবজি ও আলুচাষিরা। আধা-পাকা ধানের গাছ ও সবজিক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। মাটিতে নুয়ে পড়া ধানগাছ গোছা বেঁধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন অনেক কৃষক। অনেকে আবার সবজি ও আলু, পেয়াজ, ফুলকপি, বাধাকপি ক্ষেতের পানি ড্রেন করে বের করতে ব্যস্ত।
কেঁড়াগাছি (কলারোয়া) প্রতিনিধি জানান, কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সরিষা ও আমনধানের জমিতে বৃষ্টির পানি জমে সরিষা ও ধান পানিতে ভাসছে। কৃষক লালটু, শরিফুল, মিজানুর, আক্তার, মুনছুর জানান, সৃষ্ট নিন্মচাপে সরিষা, ধানসহ সবজির ব্যাপকহারে ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। সৃষ্ট নিম্নচাপের জন্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
কৈখালী (শ্যামনগর) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় বিপকে পড়েছে উপকূলের কৃষক। অসময়ের বর্ষণের ফলে সবজিসহ হাজার হাজার বিঘা জমির আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ সবজির খেতে সবজি পানিতে ডুবে গেছে। তালা থেকে এসএম বাচ্চু জানান, অনেক কৃষক ভাইদের জমিতে আমন ধান ও মাঠে ধানের বীজ তলা পানিতে তলিয়ে গেছে।

 


কেশবপুব (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোরের কেশবপুরে বারী সরিষা ও বোরো বীজতলা পানিতে নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইটভাটায়ও ক্ষতি হয়েছে। ইটভাটা মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আরমান গাজী বলেন, কেশবপুরে ১৬টি ইট ভাটা রয়েছে, প্রতিটি ভাটায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার ইট বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। অসময়ে বৃষ্টিতে ১৬টি ভাটায় প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদ এর প্রভাবে তিন দিনে অবিরাম বর্ষনের ফলে কেশবপুরে ৮৬১ হেক্টর সরিষা ক্ষেতে পানি জমেছে। এছাড়া ৮৫ হেক্টর বোরো আবাদের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কি পরিমানে ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, অনেক ক্ষেতে পাকা ধান বাতাস ও বৃষ্টিতে হেলে পড়েছে। এতে পাকা ধানের সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে কৃষকের মধ্যে আশঙ্কা বিরাজ করছে। উপজেলায় এ বছর ১৭ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। আর ৭-৮ দিনের মধ্যে কৃষকরা এ ফসল ঘরে তুলতে পারতেন।
খুলনা প্রতিনিধি জানান, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। এমন শীত ও কুয়াশায় ধানের বীজতলাসহ মৌসুমি শাকসবজির ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। বিপাকে রয়েছে স্থানীয় দিনমজুর ও নি¤œ আয়ের মানুষ।

 

The post অসময়ের বৃষ্টিতে কাহিল জনজীবন: বেড়েছে শীতের প্রভাব appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3lE70mO

No comments:

Post a Comment