Tuesday, December 7, 2021

অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাতক্ষীরার নদনদী https://ift.tt/eA8V8J

জহিরুল ইসলাম শাহিন

কথায় আছে বাংলাদেশ নদ নদীর দেশ। বাংলাদেশ নদী বহুল দেশ। এক কথায় বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। এদেশে আছে অসংখ্যা খাল-বিল, হাওড়-বাওড় এবং দক্ষিণ অঞ্চলের জেলা গুলোতে অসংখ্যা নদ, নদী, খাল, নালা, বিল এবং ঘের যার মাধ্যমে অসংখ্যা জনগণের আয় রোজগার রুজি, রুটি জীবিকা নির্বাহের পথ নিহিত। আমাদের প্রিয় শহর সাতক্ষীরা তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জেলা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এ সমস্ত জলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহুকাল পূর্ব থেকে পালন করে আসছে।

সাতক্ষীরা জেলার উত্তরে যশোর জেলার সাথে সংলগ্ন কলারোয়া উপজেলা যেখানে অসংখ্য খাল ও নদনদী এ উপজেলা অনেকাংশে জনগনের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই সমস্ত নদ নদী ও খালের পানি সেচের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি ফলের গাছ থেকে ফল উৎপাদন করা হয়। বিশেষ করে শীত কালীন সময়ে কলারোয়া উপজেলা ও পৌরসভার ভিতরে অবস্থিত খাল বা নদ ও নদীর সেচের মাধ্যমে শীতকালীন আলু, টাটকা পালন শাক, মূলা, গাজর, ফুল কপি, ওলকপি, বাধা কপি, বীটকপি, শিম ও বরবটি উৎপাদন করা হয় এবং সেচের মাধ্যমে নদী থেকে জল উত্তোলনের মাধ্যমে ইরি ধানের চাষ করা হয় এবং নদী থেকে অজ¯্র মাছ ধরা হয় তার মধ্যে পূটি মাছ, মায়া মাছ, গুলে মাছ, বান মাছ, টাকি মাছ, শৈল মাছ, বাগদা, গলদা, ছাটি, চিংড়ি, চান্দা মাছ, বেলে মাছ, ট্যাংরা মাছ সহ সাদা প্রজাতির বিভিন্ন মাছ।

যাহা অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব বাড়ে এবং মাছে ভাতে সাতক্ষীরাবাসী ইহা তার সাক্ষ্য বহন করে। কলারোয়া উপজেলা যে সমস্ত নদী বা নদ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কলারোয়া উপজেলা থেকে নদ নদী বা খালগুলি বিভিন্নভাবে তালা, আশাশুনি, সদর সাতক্ষীরা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ভিতর দিয়ে এবং কিছু কিছু নদী দেব হাটার উপর দিয়ে একেবারে শেষ উপজেলা এবং দেশের বৃহত্তর উপজেলার অন্যতম শ্যামনগর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে একেবারে বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে।

এই নদী পথের মাধ্যমে কলারোয়া উপজেলার উপর দিয়ে একেবারে সুন্দরবন অঞ্চল পর্যন্ত জনগন তাদের ব্যবসা, বাণিজ্য, মালামাল বিভিন্ন উপজেলায় আমদানী বা রপ্তানী নৌকা যোগে, ট্রলার যোগে, স্টীমার যোগে বা কখনও কখনও কার্গো যোগে পৌছে দিত। সুতরাং সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার জলজ, ফলজ, কৃষিজ বা অন্যন্য দ্রব্যাদি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত আদান প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত নাম, বিশ্বে নামকরা করি মাইকেল মধূসুদন দত্ত যে নদী নিয়ে বিখ্যাত কবিতা লিখেছেন তার নাম ‘কপোতাক্ষ নদ’ এই ‘কপোতাক্ষ নদ’ ভৈরব নদ গঙ্গা হতে বের হয়ে ক্রমে মুর্শিদাবাদে ও নদীয়া জেলার মধ্যে দিয়ে কুষ্টিয়া ও যশোরে এসেছে। মাথা ভাঙ্গা ও ভৈরব নদীর মিলিত স্থানের দক্ষিণে কপোতাক্ষ নদ এই ভৈরবনদী হইতে উৎপত্তি হয়ে ক্ষুদ্রাকারে জীবননগর, কোটচাদপুর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, ত্রিমোহনী, সাগরদাড়ী, কলারোয়া, ধানদিয়া, সরসকাটী, খোর্দ্দ, সরুলিয়া হয়ে পাটকেল ঘাটা থানার উপর দিয়ে তালা উপজেলায় পৌছে যায়।

তারপর তালা উপজেলার জালালপুর, সেনারা, কপিল মনি ও শেষে সেনপুরের নিকটে খুলনা জেলায় প্রবেশ করে রাগুলির নিকট শিবসায় এসে মিলিত হয়েছে। পরে ইহা সাতক্ষীরা ও খুলনা সীমান্ত চিহিুত করে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়। এরপর উত্তর পশ্চিম দিক থেকে খোলপেটুয়া ও পূর্বদিক থেকে শিবসার শাখা আশাশুনি উপজেলার খাজরা ও আনুলিয়া হয়ে বেদকাশী ফরেষ্ট অফিসের নিকট একত্রে মিলিত হয়েছে। ঐ একই বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ কয়রা উপজেলা ঘুরে শ্যামনগর উপজেলার চাদনী মুখীর কাছে মুক্ত¯্রােত প্রবল হয়ে আড় পাংগাশিয়া নাম ধারণ করেছে এবং গহীন জংগল সুন্দরবন এর ভিতর দিয়ে মালঞ্চ নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

আমাদের সাতক্ষীরা জেলার বিশেষ করে কলারোয়া উপজেলা ও সাতক্ষীরা সদরের উপর দিয়ে প্রবাহিত আরেক বিখ্যাত ও জনগনের কাছে অত্যন্ত প্রিয় নদী বেতনা নদী যাহা কপোতাক্ষের মত ভৈরব নদীর একটা অন্যতম অংশ শাখা। ইহা মহেশপুরের কাছে ভৈরব নদী থেকে বের হয়ে নাভারণ, উলশী, বাঁগআচড়া এবং শংকরপুরের উপর দিয়ে কলারোয় উপজেলা ও পৌরসভার ইলিশপুর, ঘিখালী হয়ে শাকদহ, পানিকাউরিয়া, হেলাতলা, তুলশীডাঙ্গা, মুরারীকাটী হয়ে সদর উপজেলার অর্থাৎ সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা বাজার ভাটপাড়া নারানপুর ও আমতলা এবং বল্লী এরপর আখড়া খোলা বাজার হয়ে রাজনগর বিনেরপোতা ও মাছ খোলা হয়ে আশাশুনি উপজেলা বড় ব্যবসায়ীক কেন্দ্র বুধহাটা এসে বুধহাটা গাঙ্গ নামে পরিচিতি লাভ করে।

ইহা আরও দক্ষিণে প্রসারিত হয়ে কেয়ার গতি নামক স্থানে সরিচ্চাপ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এর এক শাখা আশাশুনির অন্যতম প্রধান ব্যবসায়িক কেন্দ্র বড়দের উপর দিয়ে বিশাল বিস্তৃত কপোতাক্ষ নদে মিলিত হয়েছে এবং অন্য শাখা দক্ষিণ দিয়ে মানিকখালিতে খোলপেটুয়া নদীটি বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী আশাশুনি উপজেলার মানিক খালিতে খোলপেটুয়া নাম ধারণ করে ক্রমশ দক্ষিন দিকে অগ্রসর হয়ে চলেছে। ডান দিক থেকে প্রবাহিত যমুনার ধারা কাকশিয়ালী বাঁশতলা হয়ে পশ্চিম দিক থেকে গলঘেসিয়া নামে ঘোলা নামক স্থানে খোল পেটুয়ার সাথে মিলিত হয়েছে।

ইহা আর ও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে নওয়াবেঁকীর পার্শ্ব দিয়ে বুড়ি গোয়ালিনীতে আড় পাঙ্গাসিয়া নাম ধারণ করে পার্শ্বে মারীর নিকট কপোতাক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে। অন্য দিকে মরিচ্চাপ নদীটি উত্তর দিক থেকে অগ্রসর হয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ভাড়–খালী বাকাল হয়ে এল্লারচর পৌছে। বিট্রিশ শাসন আমলে এই এল্লারে লঞ্চঘাটি ছিল। এই এল্লারচর থেকে তখনকার সময়ে সাতক্ষীরার অতিপ্রিয় ও পরিচিত মুখ জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধূরি একটি খাল খনন করে সাতক্ষীরা শহরের ভিতর দিয়ে থানাঘাটার উপর দিয়ে নৌখালী খালের সাথে সংযোগ করেন যার মাধ্যমে বিহারীনগর, মোহনপুর, রামেরডাঙ্গা, বারুই বাশা, রেউই ও মাধরকাটী বাজারের সাথে সংযুক্ত।

এরপর মরিচ্চাপ নদীটি এল্লারচর থেকে ক্রমশ দক্ষিণ পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আশাশুনি উপজেলায় প্রবেশ করেছে। পরবর্তী ইহা শোভানালী চাপড়া প্রভৃতি স্থান হয়ে কেয়ারগাতীতে বেতনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। মানিক খালিতে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মিলিত প্রবাহের নাম খোলপেটুয়া। ইছামতি নদী গঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি। তার থেকে বেরিয়েছে ভৈরব নদী এর শাখা মাথাভাঙ্গা। এই মাথা ভাঙ্গা ভারতের পশ্চিম দিকে চুর্নী এবং পূর্বদিকেই ইছা মতী, বর্ষাকালে মাথা ভাঙ্গা নদীর পানি বাড়লে সেই পানি প্রবেশ করে ইছামতি নদীতে। ইহা বনগা (পশ্চিম বঙ্গের) অতিক্রম করে সর্বপ্রথম সাতক্ষীরা জেলার উত্তর জনপদ কলারোয়া উপজেলার চান্দুড়িয়া সীমান্ত স্পর্শ করে।

কিছুদুর অগ্রসর হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ভারতের অভ্যন্তরে গোপালপুরে প্রবেশ করেছে। পরবর্তীতে টিপির মোহনায় যমুনা ইছামতী মিলিত হয় এবং এখানে যমুনা ইছামতী নদীর মধ্যে হারিয়ে যায় বা বিলীন হয়ে যায়, এক কথায় যমুনা ইছামতীর কাছে আত্মসমার্পন করে। ইছামতী সোজা দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে বাদুড়িয়া ও বশিরহাট হয়ে পূনরায় বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত এলাকা নির্দেশ করে সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলার রাধানগর, শাখরা, কোমরপুর, টাউনশ্রীপুর এবং ভাতশাল প্রভৃতি গ্রামের উপর দিয়ে কালিগজ্ঞ উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের উত্তর সীমানা দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

উল্লেখ্য যে ইছামতী নদীটি বসন্তপূরে দুভাগে বিভক্ত হয়ে কালিন্দী নামে শ্যামনগরে ঈশরপুর পৌছেছে এবং অন্য শাখা টি বিভাক্ত হয়ে পূর্বমুখী কাকশিয়ালীতে প্রবাহিত হয়েছে। এই ঈশ্বরীপুরের নিকট যমুনা ও ইছামতী আবার দুই ভাগে বিভক্ত। পরে যমুনা কিছুদুর অগ্রসর হয়ে পশ্চিম দিকে মাদার নামে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে এবং পরিশেষে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশে গেছে এবং ইছামতী ঈশ্বরীপুরের পূর্ব পাশ ঘেষে কদমতলা নাম ধারন করে মুন্সীগঞ্জ বরাবর কদমতলী বন অফিসের কাছে মালঞ্চ নামে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

এক সময় যমুনা নদী ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত। গঙ্গা পদ্মার দিকে সরে যাওয়ার ফলে যমুনা নামক বৃহত্তর নদীটি অনেকটা শ্রীহীন বা প্রানহীন বা গৌরবহীন হয়ে পড়েছে। ইহা হুগলী জেলার ত্রিবেনীর কাছে গঙ্গা থেকে উৎপত্তি হয়ে নদীয়া ও বাংলাদেশের যশোর সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যমুনা আবার চব্বিশ পরগনায় প্রবেশ করেছে বালিয়ানের কাছে এবং ক্রমে চৌবাড়িয়া ও গোবরডাঙ্গা ঘুরে অবশেষে চার ঘাটের নিকট ইছামতীর সাথে মিলিত হয়ে উত্তর পূর্বদিকে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়েছে।

এর পর যমুনা দক্ষিণ মুখী হয়ে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে এগিয়ে পড়েছে রায়মঙ্গলে। এরপর রায়মঙ্গল যমুনার মিলিত স্রোত পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। উল্লেখ করা যায় যে, ঈশ্বরীপুরের নিকট যমুনা ও ইছামতী আবার দুই অংশে বিভক্ত। পরে যমুনা কিছুদুর অগ্রসর হওয়ার পর মাদার নামে সুন্দরবনে প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর সহ সাতক্ষীরা জেলার অধিকাংশ মানুষ জানে কালিগঞ্জ থেকে যে খালটি বর্তমানে শ্যামনগরে বহমান আছে তাকে মরা যমুনা বলা হয়।

উল্লেখ্য করার মত আরেকটি বিষয় ১৮৬৭ সনের ১ নভেম্বর অর্থাৎ ১২৭৪ সনের ১৬ কার্তিক এ অঞ্চলে ভীষন সামুদ্রিক ঝড় হয়। সুন্দরবনের এবং এ এলাকায় মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে একরাতে সুন্দরবনে ১২ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়ে যায়। পরের দিনই যমুনার স্রোতে হঠাৎ করে ভীষন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বালি জমে যমুনার গতি শান্ত রূপ ধারন করে। ফলে কিছু দিনের মধ্যে বিশালাকার যমুনা পলি বা বালি জমে ভরাট হয়ে যায়। কালিন্দী নামে যে বিশাল নদীটির কথা সুন্দরবন এলাকার ভিতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করেছে তা ইছামতী কালিন্দী রায়মঙ্গল নামের নদী হিসাবে পরিচিত।

এক এক জায়গায় এক এক নাম। কালিগঙ্গ উপজেলার পশ্চিমে বসন্তপুরে ইছামতী থেকে একটি শাখা সোজা দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। এর শাখা সাধারণ খালের মত ছিল। এই খাল কালিন্দী নামে পরিচিত। যমুনা মজে যেতে থাকায় প্রায় সময় এখানে প্লাবন হতো। সেজন্যে ১৮১৬ সালে খনন করে এই খাল আরও দক্ষিণে কলাগাছির সাথে যুক্ত করা হয়। তখনকার সময় পশ্চিমবঙ্গেও ২৪ পরগনা জেলার ম্যাজিষ্টেট ছিলেন গুডল্যান্ড।

তাই সেই সময় ঐ খালকে গুডল্যান্ড ক্রিক বলা হতো কারন উক্ত ম্যাজিষ্টেটের ব্যবস্থাপনায়, তত্বাবধানে এবং নির্দশনায় খালটি খনন করা হয়েছিল। কিন্তু বার বার কালিন্দী প্লাবনে ভয়ংকর হয়ে ওঠে এবং কোন এক সময় বড় নদীতে পরিণত হয়। পরিশেষে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে এই নদী অগ্রসর হয়ে রায়মঙ্গলের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এ ছাড়া কাকশিয়ালী নামে একটি নদী কালিন্দীকে কলাগাছির সাথে সংযুক্ত করার আগে কালিগঞ্জের কাছে ইছামতী থেকে একটি খাল কেটে পূর্ব দিকে উজিরপুর এর নিকট গলঘেসিয়ার সাথে যুক্ত করা হয়।

এই খালই বর্তমান সময়ের কাক শিয়ালী নদী। বৃটিশ প্রকৌশলী উইলিয়াম কাকশাল এই খাল খনন করান। তার নাম অনুসারে এই খালের নাম হয় কাঁকশিয়ালী খাল। এই খাল খনন করার যে বড় উদ্দেশ্য ছিল কলকাতার সাথে সহজ নদীপথ তৈরী করা। অপর দিকে অন্যতম আরেক টি নদী যার নাম গলঘোষিয়া নদী ওতিয়াখালী ও উজিরপুরের কাটাখালের সঙ্গম স্থাল থেকে গলঘোষিয়া নদী কল্যাণপুর ও শ্রীউলা গ্রামের নিকট দিয়ে ঘোলা নামক স্থানে খোলপেটুয়া নদীতে পড়েছে। এক সময় নৌকা যৌগে উজিরপুর, কাটাখাল ও গুতিয়াখালী খাল দিয়ে কলকাতার পন্য দ্রব্য আসাম ও পূর্ববঙ্গে বহন করত।

গলঘোরিয়া সুন্দরবনে যাতায়াতের একটি বিশিষ্ট নদী পথ ছিল। বর্তমানে নদীটি অনেকটা বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে আগের মত নৌযান চলাচল করতে পারেনা। এ ছাড়া ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাথে সংযুক্ত এবং বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং পশ্চিম বাংলার সীমান্তবর্তী অনেকগুলো জেলা বা গ্রামাঞ্চল সংলগ্ন অনেক নদ নদী আছে। এর সাথে অনেক খাল, নালা, ঘের বা অনেকাংশে বিল ও বাওড় রয়েছে যা সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত।

এর মধ্যে সোনাই নদী কলারোয়া উপজেলা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আংশিক অংশের সাথে সংপৃক্ত। সোনাই নদীর কোল ঘেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার, বালতি, নবাতকাটী আমুদিয়া বাজার হাকিমপুর সহ একেবারে বল্লীর বিলের সাথে সংপৃক্ত। এ ছাড়া সালতা, শালিখা, মাদার, সোনাকুড়, মীরসাং, চুনার, হামকুড়া, কোদালদাহ প্রভৃতি নদী উল্লেখ যোগ্য। নদী তার নিজস্ব গতিতে চলার সময় যে সবউল্লেখ যোগ্য অবদান রেখে যায় তার মধ্যে খাল বিল হাওড় বাওড় সৃষ্টি অন্যতম।

যেখানেই নদী থাকবে তার পাশে খাল, নালা, বিল, বাওড় ও হাওড় ইত্যাদি থাকতেই হবে। আবার নদ নদী থেকে সৃষ্ট খাল সমুহের অধিকাংশই আজ ভরাট হয়ে বিল বা হাওড়ে পরিণত হচ্ছে যা বর্ষাকালে বেশ দৃশ্যমান। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কিছু উল্লোখ যোগ্য খালের নাম পাঠকের সম্মুখে তুলে ধরার প্রচেষ্টা করেছি।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মধ্যে উল্লেখ করা রমত খাল সমুহ লস্কর খাল, বামনালী খাল, নকাঠীখাল, মেয়েবেচি খাল, চাঁদ মাল্লিকের খাল, দিক দানার খাল প্রভিৃতি, সদরের উল্লেখ করার মত খালের মধ্যে নৌখালি প্রানসায়ের খাল, খিৃষ্টান সাহেবের খাল, ভাংড়ার খাল, গদাই খাল, ওয়াপদার খাল, আমতলা/ হাজীপুরের খাল, ভাটপাড়ার খাল, শ্যামার খাল, হোনলা খাল ইত্যাদি আশাশুনি উপজেলার উল্লেখ করার মত খালের মধ্যে হিমখাল, ধোপাখাল বোশখাল, শইলময়া, হলদে পোতার খাল, ঢেউটিয়ার খাল ইত্যাদি, তালা উপজেলার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য সোনামুলার খাল, ঘোনার খাল দোহার খাল, মাধবখালী খাল, ঘোনা খাল, হরি খাল, বাঁশতলা খাল, রাজপুর খাল, ধেড়েখালী খাল, তেয়ালীখাল ইত্যাদি, কালিগঞ্জের মহেশ্বর কাটির খাল, হাসঁখালির খাল, সাউতলার খাল, বদামোরীর খাল, কনকালির খাল, বইন তলার খাল, চাতরা খালির খাল, বাঁশ বাড়ির খাল, ইত্যাদি।

দেবহাটার খাল সমুহ লাবন্যবর্তী, সাপমারা, টিকেট খাল, দরগা খাল, পাগলার খাল, উল্লেখ যোগ্য শ্যামনগর উপজেলার খালের সংখ্যা অনেক বেশী। পাশাপাশি অনেক খানি হাওড় বাওড় ও আছে। সবখাল গুলির নাম উল্লেখ করা আসলেই খুব কষ্ঠসাধ্য ব্যাপার। তবুও আমি কিছু কিছু খালের নাশ আমার লেখার মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি, ইচ্ছা ছিল জেলার সব উপজেলার সমস্ত খালের নাম উল্লেখ করার চেষ্টা করবো। কিন্তু কিছুটা অসম্বভ হয়ে দাড়িয়েছে। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে আমাকে দেখবেন।

আমরা সাতক্ষীরা জেলার অধিবাসী। সকল নাগরিকের সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে সমস্ত খাল নদনদী সম্পর্কে জানা বিশেষ করে প্রয়োজন। কোন এক সময় নদী পথে আমরা সমস্ত মালামাল, পন্য দ্রব্যাদি জেলার একস্তান থেকে অন্যস্থানে আনয়ন করতাম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বড়বড় নদী ধবংস বিলীন হয়ে যাচ্ছে। খালতো নেই বললেই চলে, আশাশনি বা দেবহাটা বা কালিগঞ্জ থেকে আর কোন স্টীমার লঞ্চ, নৌকা বা ট্রলার সাতক্ষীরা সদর উপজেলা, তালা উপজেলা ও কলারোয়া উপজেলার মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনা। এক সময় সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজার বেনের পোতা এবং কলারোয়ার হাট বাজর নদীপথে ব্যবস্যা বানিজ্যের জন্য ছিল অবাধ।

তাই অত্যন্ত পরিতাপের সাথে সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা দলীয় নেতা কর্মী এবং বিশেষ করে উপজেলা পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গণ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের ধারক ও বাহক আমাদের ৪ জন অত্যন্ত সুযোগ্য, দক্ষ, ও জনবান্ধব সাংসদ সবাই মিলে চেষ্টা করি সাতক্ষীরা জেলার সকল বিলুপ্ত নদনদী খাল বিল পূন খননের মাধ্যমে আবার আমরা আমাদের পদ্মা পাড়ের পূরানো ব্যবসা বানিজ্য এবং যোগাযোগ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বর্তমান উন্নয়নমুখী ও বাস্তবমুখী সরকারের হস্তক্ষেপে পূরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। সবাই আমরা ভাল থাকি সুস্থ থাকি।

লেখক: জহিরুল ইসলাম শাহিন, সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, কলারোয়া, সাতক্ষীরা।

 

The post অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাতক্ষীরার নদনদী appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3lEz49S

No comments:

Post a Comment