Sunday, December 12, 2021

আশাশুনিতে স্কুল ভবন নির্মাণে গাফিলতি: করোনায় আক্রান্ত ও ঝরে যাওয়ার শঙ্কায় প্রাথমিকের ১১০জন শিক্ষার্থী https://ift.tt/3oLdFxE

নাজমুল শাহাদাৎ জাকির: নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর গাফিলতির কারনে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ এখনও শেষ হয়নি।

এতেকরে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই বিদ্যালয়ে অধ্যায়ণরত কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের। জানা যায়, বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করার পরে ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য বিদ্যমান ভবনটি অপসারণ করে শুরু হয় নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। নির্মাণকালীন সময় বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরী করা হয় একটি অস্থায়ী শ্রেণী কক্ষ। তবে বর্ষায় ও শীতের দিনে চরম সংকটে ক্লাস করছে বিদ্যালয়টির শিশু শিক্ষার্থীরা। বর্ষার সময় টিনের শব্দ ও শীতের সময় ফ্লোর ঠান্ডা থাকায় নিয়মিত ক্লাস করতে অসুবিধায় পড়ে যান তারা।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, করোনা কালিন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করানোর কথা থাকলেও ভবন না থাকার কারণে বিদ্যালয়টিতে অস্থায়ী টিনের তৈরী শ্রেণি কক্ষে দুই শিফটে গাদাগাদি করে পাঠদান করানো হচ্ছে ১১০জন শিক্ষার্থীকে। এতে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি করোনার ঝূকিঁ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। এবিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়টির কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে তাদের মাঝে। সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ৭৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয়ে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন তৈরীর দায়িত্ব পায় শ্যামনগরের শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুকুল হোসেন এবং নির্মিতত্ব ভবনের কাজ চলতি বছর ৩ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুকুল হোসেনের গাফিলতির কারনে এখনো পর্যন্ত ভবন নির্মাণের ৫ভাগ কাজও শেষ হয়নি।

দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়টির ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় ভবন নির্মাণের সামগ্রী যত্রতত্রভাবে পড়ে আছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে পেয়ার নির্মাণের জন্য গর্ত খোড়া থাকলেও পেয়ারে ব্যবহৃত রডসহ পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রী বৃষ্টিতে ভিজে মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়টির প্রাঙ্গণসহ যাতায়াতের রাস্তায় যত্রতত্র ভাবে রাখা নির্মাণ সামগ্রীর জন্য নিত্যসময় ছোটবড় দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয় পথচারীরা। এসময় বিদ্যালয়টি অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীরা জানান, করোনার কারনে স্কুল ছুটি থাকায় আমরা বহুদিন ক্লাস করতে পারিনি। আবার স্কুল খুললেও আমরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছিনা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বিদ্যালয়ে কোন ভবন না থাকাতে আমাদের টিনের তৈরী শ্রেণীকক্ষে ক্লাস করতে হচ্ছে। যখন বর্ষার পানি পড়ে তখন টিনের শব্দে আমরা ক্লাস করতে পারিনা। আর শ্রেণী কক্ষের জানালা দিয়ে পানি ছিঁটকে আসাতে আমরাসহ আমাদের বইখাতা ভিজে যায়। তাছাড়া শীতের দিনে ফ্লোর ঠান্ডা থাকে। আমরা বেশিক্ষণ ফ্লোরে বসে ক্লাস করতে পারিনা। এতকরে শারিরীক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এবিষয়ে বিদ্যালয়টির এম,এম,সি কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, চলতি বছর ফেব্রুয়ারীতে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে ৪/৫ ভাগ কাজ করে যাওয়ার পরে ঠিকাদার চলে যান।

 

পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সাতক্ষীরার একটি দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ পেলে ঠিকাদার পুনরায় কাজ শুরু করেন। নামমাত্র কাজ ও কিছু মালামাল রেখে আবারও চলে যান। তবে এসংক্রান্ত বিষয়ে একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা আমাদের কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ করছেন না। বর্তমানে শিশুদের টিন দিয়ে তৈরী অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষে দুই শিফটে গাদাগাদি করে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। এতেকরে বিদ্যালয়টিতে অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা করোনার ঝূঁকিতে রয়েছেন বলে জানান তারা। এবিষয়ে শেখ এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী মুকুল হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন সাইটে কাজ করি। সেখানের বিল আটকে আছে। একারনে ওই বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ শেষ করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, আমরা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটু চিন্তিত রয়েছি। আমরা একাধিকবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে তলব করেছি। তবে ঠিকাদার কাজ করতে বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকে। তবে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণে নিজের গাফিলতির কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তবে ঠিকাদার বর্তমানে আমাদের ফোন কলও রিসিভ করা বন্দ করে দিয়েছে। একারনে আমরা বিপাকে পড়ে গেছি। ঠিকাদারের কারনে বিপাকে পড়লেও কেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবস্থা গ্রহণ করলেতো করা যাচ্ছে।

 

তবে এতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। একারনে আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য। তবে এসম্পর্কিত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে এসময় তিনি প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন। এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, এবিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তকর্তা বরাবর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ঠিকাদার যেন দ্রুত সময়ের ভিতরে ভবন নির্মাণ শেষ করে পরিত্যক্ত মালামাল সরিয়ে নেয় সেকারনে গত ৮ ডিসেস্বর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর এক স্বারক পত্র (স্বারক নং: ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.৩৫.০০১.২০২১-২৬) পাঠানো হয়েছে। আর অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এসময় তিনি উপজেলা প্রকৌশলী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদার ভুলে গেছে যে তারা একটা সময় প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন। আজকে তাদের এই অর্জনের পেছনে প্রাথমিক শিক্ষা অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে।

নাহলে তারা বেঁধে দেওয়া সময়ের ভিতরে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতো। এসময় তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের কারনে আমাদের শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে, আমাদের সরকারের উন্নয়নে বিঘিœত হবে এটি আমরা কোন ভাবে মেনে নিতে পারিনা। বরং প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকার যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চালাচ্ছে তাতে আমাদের সকলকে সহযোগী ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। এবং শিশুদের জন্য শিক্ষার যে একটি সু-ব্যবস্থা সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

এটি যদি আমরা করতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে তারা সরকার বিরোধী আচরণে লিপ্ত রয়েছে।

 

এসময় তিনি আরও বলেন, ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টে যারা রয়েছে (এলজিইডি) তারা বর্তমান সরকারের সরকারি দপ্তর হিসেবে এবং শিক্ষা বান্ধব সরকারের যে কর্মসূটি সেটা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং আমাদের শিশুদের শিক্ষার যে সু-ব্যবস্থা সেটি নিশ্চিত করণে তারা ভূমিকা রাখবে। এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবীর বলেন, বিদ্যালয়টির বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে অবহিত করেছেন। বিদ্যালয়টির নিমার্ণ শেষ করতে যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ গাফিলতি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার যাতে দ্রুত সময়ের ভিতরে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শেষ করে সেজন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

The post আশাশুনিতে স্কুল ভবন নির্মাণে গাফিলতি: করোনায় আক্রান্ত ও ঝরে যাওয়ার শঙ্কায় প্রাথমিকের ১১০জন শিক্ষার্থী appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3DIjj7W

No comments:

Post a Comment