Sunday, April 26, 2020

রোজার প্রস্তুতি: আত্মার পরিশুদ্ধিই রোজার উদ্দেশ্য https://ift.tt/eA8V8J

রোজা মুমিনের দেহ-মন-আত্মা সবকিছুকেই সুস্থ ও পরিশুদ্ধ করে। তবে আত্মাকে কেন্দ্র করেই যেহেতু সবকিছু আবর্তীত হবে এবং আত্মাই দেহ-মনের নিয়ন্তা তাই আত্মার পরিশুদ্ধিই রোজার মূল উদ্দেশ্য।মাটির তৈরী মানব দেহ একদিন মাটিতেই ঠাই করে নেবে, মাটিতেই মিশে যাবে, পচে গলে শেষ হয়ে যাবে শারীরিক শক্তিমত্ত্বার সকল উৎস, সমস্ত বাহারী সৌন্দর্য, প্রয়োজনীয় যত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অবশিষ্ঠ থাকবে শুধুই আত্মা। আত্মা অমর, অবিনশ্বর, অসীম ক্ষমতার আঁধার। আত্মা বেঁচে থাকবে অনন্তকাল। পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে, মানুষের অবয়ব তৈরির পূর্বে আত্মারই অস্তিত্ব ছিল লৌহ মাহফুজে,  আবার পৃথিবী ও মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবার পরেও আত্মাই বেঁচে থাকবে, আত্মাকেই উপনীত হতে হবে মহান রবের সামনে, আত্মারই হিসাব হবে, ফয়সালা হবে। মৃত্যু থেকে শুরু করে সমস্ত আজাবের ঘাটিগুলোতে আত্মাকেই শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আর মিজানের দুই পাল্লায় যার নেক আমলের পাল্লা ভারি হবে, ডান হাতে আমলনামা দিয়ে খোশখবর জানানো হবে সেই খোশখবরের শান্তিও সে আত্মা দিয়েই অনুভব করবে। তাই এই নশ্বর ধরাধামে আত্মার অধঃপতন-উৎকর্ষতার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন। অধঃপতিত আত্মা আমাদের কারোরই কাম্য হতে পারে না। তাই আত্মাকে কিভাবে উন্নত করা যায় সেদিকেই আমাদের মনযোগী হতে হবে।প্রিয় নবী ( সঃ ) বলেছেন—‘মানুষের দেহের মধ্যে এমন একটি মাংসপিন্ড আছে যেটা সুস্থ থাকলে মানুষের সমস্ত শরীর সুস্থ থাকে। আবার যেটা অসুস্থ হলে মানুষের সমস্ত শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তা হল তার অন্তঃকরণ’। বস্তুত এই অন্তঃকরনেই মানুষের আত্মার বসবাস। আর এই আত্মাই মানব দেহের পাওয়ার হাউজ বা শক্তির উৎস। এই আত্মাই সঠিক পথ নির্দেশক, একমাত্র নিয়ামক শক্তি, যার হুকুমের গোলাম হয়ে মানুষের দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে তার জীবদ্দশায়। এই আত্মা যদি সুস্থ-সবল হয় তাহলে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গও সুস্থ-সবল ও কার্যক্ষম থাকে। আত্মা যদি নিষ্কলুষ হয়, পরম প্রভূর ফরমাবরদার হয়, তাহলে সমস্ত শরীর আত্মার হুকুমে যে সকল কার্য সম্পন্ন করে তাও শুদ্ধ, সুন্দর ও পরমাত্মার সন্তুষ্টির কারণ হয়। আর আত্মা যদি অসুস্থ-কলুষিত হয় তাহলে ঐ আত্মার তাবেদার সমগ্র দেহও অসুস্থ-কলুষিত হয়ে পড়ে আর ঐ দেহ সম্পাদিত সকল কাজও রবের অসন্তুষ্টির কারণ হয়। দেহাভ্যন্তরের ষড়রিপু সমূহ তখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে, শরীর-আত্মার নিয়ন্ত্রণভার শয়তানের হাতে সোপর্দ হয় আর জীবন হয়ে ওঠে পরম প্রভুর রহমত, বরকত, সত্য ও শান্তি বিবর্জিত অন্ধকারাচ্ছন্ন, পথভ্রষ্ট। প্রভুর কাছে তখন ঐ মানুষের অপদস্তের সীমাপরিসীমা থাকে না। তাই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা এবং আত্মার উতকর্ষ সাধনই মানব জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। মানুষের শরীর ও মনের চাহিদাগুলো তখনই অবদমিত থাকে যখন পেটে ক্ষুধা থাকে। তাই রোজা বা সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামিন মানুষকে ক্ষুধার যন্ত্রনায় জ্বালিয়ে শুদ্ধ করার মাধ্যমেই আত্মিক শক্তি অর্জনের শিক্ষা দিয়েছেন। আবু সুলাইমান দারানী (রঃ) বলেন, ক্ষুধার্ত থাকার অভ্যাস পয়দা কর, ইহা নফসকে অনুগত করে। অন্তর নরম করে। আসমানী এলেম হাসিল হয়। হযরত সাহল ইবনে আব্দুল্লাহ (রঃ) বলেন, হেকমত ও এলেম ক্ষুধার্ত থাকার মধ্যে রহিয়াছে, মুর্খতা ও গুনাহ পেট ভরিয়া খাওয়ার মধ্যে রহিয়াছে। তিনি আরও বলেন, মানুষ ঐ পর্যন্ত আব্দাল হইতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষুধার্ত থাকা, চুপ থাকা, এবং রাত্রি জাগরণে অভ্যস্ত না হয়। ক্ষুধার্ত থাকলে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা কম আসে। হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, যেদিন আমি ক্ষুধার্ত থাকিয়াছি, আমার মধ্যে জ্ঞান ও হেকমতের একটি দরজা খোলা পাইয়াছি। আর এই জন্যই হযরত লোকমান হাকিম (আঃ) স্বীয় পুত্রকে নসিহত করিয়াছেন, বেটা! যখন পেট ভরিয়া যায়, তখন চিন্তা-ফিকির ঘুমাইয়া যায়, হেকমত বোবা হইয়া যায়।      মহাত্মা ঈমাম গাজ্জালি (র) না খেয়ে থাকার দশটি উপকারের কথা বলেছেন—১।  অন্তরের সাফাই হাসিল হয়। জ্ঞান-বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়, সূক্ষ্ম জ্ঞান বাড়িয়া যায়। বেশি খাওয়ার দ্বারা স্বভাবের মধ্যে স্থুলতা পয়দা হয়, অন্তরের নূর চলিয়া যায়। পাক্সথলিতে গ্যাস হইয়া মস্তিস্ক ঘিরিয়া ফেলে আর অন্তরের উপরে উহার প্রভাব পড়ে, ফলে মস্তিস্ক চিন্তা-গবষণায় অক্ষম হইয়া যায়। এমন কি কম বয়সের বাচ্চারাও যদি বেশি খাইতে শুরু করে তবে তাহাদের স্মরণশক্তি, মেধাশক্তি নষ্ট হইয়া যায়।২। দিল নরম হয় ফলে জিকির ইত্যাদির প্রভাব দিলের উপরে পড়ে, আর তখন ইবাদাতে, দোয়া ও মোনাজাতে স্বাদ পাওয়া যায়।৩। মানুষের মধ্যে বিনয় ও নম্রতা পয়দা হয়, দম্ভ ও অহংকার দূর হইয়া আল্লাহতায়ালার অনুগত বান্দা হওয়া যায়।৪। বিপদ্গ্রস্থ এবং ক্ষুধার্ত মানুষের ব্যাপারে গাফলতি ও অবহেলা পয়দা হয় না।৫। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক যে ফায়দা তাহা হইল, সব ধরণের গুনাহ হইতে হেফাজত থাকা যায়। কারণ, ক্ষুধা সব ধরণের খাহেশাতকে ধ্বংস করিয়া দেয়। মানুষের বড় সৌভাগ্য হইল, সে নিজের নফসের উপরে নিয়ন্ত্রন রাখে। আর দুর্ভাগ্য হইল, নফস তাহাকে নিয়ন্ত্রণে লইয়া লয়। ঘোড়াকে যেমন ক্ষুধার্ত রাখিলে নয়ন্ত্রণে থাকে। ৬। ক্ষুধার্ত থাকিলে ঘুম কম পায়, রাত্রি জগরণে ইবাদত নসীব হয়। বেশি খাইলে পিপাসাও বেশি পায় আর পানি যত বেশি পান করা হয় তত বেশি ঘুম পায়। আর বেশি ঘুমাইলে জীবনের বড় একটি অংশ বরবাদ হইয়া যায়। ৭। খাওয়া দাওয়া যত কম করা যায় তত বেশি সময়ের ব্যাপারে সাশ্রয়ী হওয়া যায়। খাবার রান্না করিতে হইলে তো বটেই রান্না না করিতে হইলেও বার বার খাওয়া, হাতমুখ ধোওয়া, পানি পান করা, এস্তেঞ্জায় যাওয়া ইত্যাদি কাজে অনেক সময় ব্যয় হয়। ৮। শরীর সুস্থ থাকে, শরীর সুস্থ থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে আর আত্মাও প্রশান্তিতে থাকে। এজন্য বলা হয় যে, মানুষ খেয়ে মরে না খেয়ে মরে না।  ৯। ব্যয়ভার অনেক কমিয়া যায়। তাই অতিরিক্ত খরচ মিটাইতে অবৈধ পথে উপার্জনেরও প্রয়োজন পড়ে না। হালাল রুজি ভক্ষন সম্ভব হয়। ১০। অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও অন্যকে নিজের উপরে প্রাধান্য দেওয়ার গুণ হাসিল হয়। ফলে যাকাত-ফেতরা, দান-সদকা, ইত্যাদি বিষয়ে আমলের তৌফিক হয়। রাসুল (সঃ) বলেন, মানুষ কেয়ামতের দিন আপন আপন সদকার ছায়াতলে থাকিবে। রমজানের রোজা মানেই কম খাওয়া, না খেয়ে থাকা। অতএব রোজা আমাদের জন্য অনেক বড় বড় নেয়ামত বয়ে আনতে পারে যদি আমরা সহি জ্ঞান নিয়ে সঠিকভাবে এর আমল করতে পারি। আমিন………।

কোহিনূর বিনতে আবুবকর।

The post রোজার প্রস্তুতি: আত্মার পরিশুদ্ধিই রোজার উদ্দেশ্য appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2yMO4MZ

No comments:

Post a Comment