Saturday, April 25, 2020

রোজার প্রস্তুতিঃ মোবারক হোক মাহে রমজান https://ift.tt/eA8V8J

সেই ছোটবেলা থেকে রোজা আমাদের অনেকেরই সঙ্গী হয়েছে। রোজা থেকেছি আগ্রহ সহকারে রাতের ঘুম হারাম করে, দিনের মজাদার সব আকর্ষণকে পিছনে ফেলে কী এক স্বর্গীয় আর পবিত্র অনুভূতিকে পুঁজি করে! এখনও রমজানের পুরোমাস বেশিরভাগ মানুষই আমরা রোজা থাকি। আল্লাহ্‌র হুকুমকে সামনে রেখে তাঁর নির্দেশিত ফরজ এই আমলকে পালনের মাধ্যমে ইসলামের তিন নম্বর স্তম্ভকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি। হয়তো জীবনের কঠিন বাস্তবতা, জাগতিক নানাবিধ ব্যস্ততা, ঘর ও বাইরের জটিল-কুটিল হিসাব আর স্বার্থের টানাপোড়েন আজ আমাদের ঈমান ও আমলের দৃঢ়তা আর পবিত্র ভাবগাম্ভীর্য কিছুটা ম্লান করে দিতে পারে। রমজানে সারাদিন উপবাসের কৃচ্ছতায়, সন্ধ্যার ইফতারি আর শেষ রাতের সেহরির স্বর্গীয় সেই অনাবিল আনন্দের অনুভূতিতে হয়তো কিছুটা ভাটাও পড়তে পারে। কারণ মানুষ মাত্রেই গোনাহগার, আর সময়ের কঠিন দোলাচলে আমাদের গোনাহগুলো যদি বেড়েই চলে তাহলে মুক্তির পথ আমাদের রুদ্ধ হয়ে যায়। আজ আমাদের রোজা, সিয়াম সাধনা, রবের আরাধনা কেন প্রাণহীন, অন্তঃসার শূণ্য? কেন আমাদের ইফতারি-সেহরীর স্বর্গীয় স্বাদ উঠে গিয়ে তা পর্যবসিত হয়েছে বাহারি খবারের লাগামহীন রসনা বিলাসের প্রতিযোগিতায়, সেই অন্তর্নিহিত কারণকে আজ অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে, জানতে হবে আমাদের অতি বড় অজ্ঞতাকে, সত্যের আলোহীন অন্ধত্বকে, যে অজ্ঞতার সীমাহীন অন্ধকার চোরা গলিতে পথ হারিয়ে দিশেহারা আজ তামাম মুসলিম উম্মাহ।মহান আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামিন মানুষের জন্য অফুরন্ত রহমত ও নেয়ামত হিসাবে পবিত্র রমজানের যে বরকতময় মাস দান করেছেন এবং এর একটি মহিমান্বিত রাতে মানুষের জন্য কোরআন নাজিল করেছেন আর সেই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ঘোষণা দিয়ে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এ সবই মানুষের দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জাহানের জন্য অনেক বড় কল্যাণকর একটি দিক। প্রতি বছর মহান রবের পক্ষ থেকে রমজানের মহিমান্বিত মাস সমগ্র মুসলিম জাহানের দরজায় নিয়ে আসে অফুরন্ত রহমত আর ক্ষমার প্রতিশ্রুতি। নিরঙ্কুশ আত্মসমর্পণ, তওবা আর ক্ষমা ভিক্ষার মাধ্যমে বিগত জীবনের পাপরাশি মোচন করিয়ে প্রায় প্রত্যেক মুসলমান নবায়নকৃত এক একটি নতুন জীবন লাভ করে। আসমানী এলেমের চর্চা আর আল্লাহ্‌র ক্ষমতা ও একচ্ছত্র অধিকারের প্রতি নিরঙ্কুশ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পুরো রমজান মাস জুড়ে পৃথিবীর প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে, প্রত্যেকটি দেশে, সারা দুনিয়া জুড়ে মহান রবের প্রতি মহব্বতের এক অপার্থিব মায়াময় পরিবেশ তৈরী হয়। এ হল পবিত্র রমাদানের এক অনন্য, অভাবনীয় বৈশিষ্ঠ্য।   
কেন রমজানের কৃচ্ছ সাধনা ?প্রতি বছর পুরো একটি মাস কেন মুসলমানগণ নিজ নিজ শরীরকে কঠিন কৃচ্ছসাধনায় ব্যাপৃত রাখে, কেনই বা প্রত্যেকে আপন আপন ষড় রিপুর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান কায়েম করে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তা কি আমরা ভেবেছি কখনও? অথবা গভীর বিশ্লেষণধর্মী  মনোভঙ্গী ও আবেগ নিয়ে রমজানের তাৎপর্য ও মাহাত্বকে অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি কোনদিন? মাটি থেকে তৈরি দেহ মাটিতে উৎপন্ন ফল-ফসল এবং মাটি থেকে আহরিত নানাবিধ উপাদান গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, বেঁচে থাকে, সুস্থ থাকে। এই উপাদান দিয়ে আত্মার কোন উপকার হয়না। আত্মার বিশুদ্ধতা বা সুস্থতা নিশ্চিত হয় না। আত্মা স্বর্গীয় পবিত্রতা ও প্রশান্তির বৈশিষ্ট্য ধারণ করে শান্তি লাভ করতে পারে না। দুনিয়া এবং আখিরাতে এই শান্তি লাভের জন্য প্রয়োজন পরমাত্মার স্মরণ, তাঁর হুকুমের প্রতিপালন, তাঁর ধ্যান ও আরাধনা। আর এই ধ্যান ও সাধনা নিম্নস্তর থেকে শুরু করে যে যত বেশি উচ্চস্তরে উঠতে পারবে তাঁর আত্মা তত বেশি পরিশুদ্ধ হবে, শক্তিশালী হবে। এইরূপ আত্মাশ্রয়ী জীবনই নিজে আলোকিত হয়ে তার চারপাশ আলোকিত করতে পারে আর পৃথিবীতে বইয়ে দিতে পারে শান্তির ঝর্ণাধারা। আখিরাতও তার হয়ে ওঠে মহান রবের সন্তুষ্টির আধার। অতএব মহান রব্বুল আলামিনের হুকুম সমুহের দিকে আমরা যদি মনোযোগী হই তাহলে দেখব, রোজা বা সিয়ামের কৃচ্ছ সাধনার মাধ্যমেই মানুষ আত্মিকভাবে বলিয়ান হতে পারে। রোজার সাধনা এমন যে, সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মানুষের শারীরিক যে সকল চাহিদা সেই চাহিদাগুলোকে বৈধ উপায়ে হলেও পূরণ করা থেকে বিরত থাকা। যেমন- আমাদের জিহবা কতকিছু খাওয়ার লোভ করে, কিন্তু রোজা অবস্থায় তা খাওয়া যাবে না। পিপাসা পেলে মন চায় ঢক ঢক করে খানিকটা ঠাণ্ডা পানি পান করে নিতে, কিন্তু রোজা অবস্থায় মনের এই ইচ্ছাকে পুরণ করা যাবে না। নারী-পুরুষ একে অপরের সাথে মিলনের যে অদম্য আকাঙ্ক্ষা তা অবৈধ উপায়ে তো নয়ই, বৈধ উপায়েও পুরণ করা যাবে না। রাগ দেখানোর জন্য কারও বৈধ কোনো কারণ যদি থাকেও তবু সে রাগ দেখাতে পারবে না। এইভাবে মানুষের শরীর এবং মনের চাহিদাগুলোকে রোজার মাধ্যমে যখন দমন করে রাখা হয় তখন তাঁর আত্মার উন্নতি হয়, আত্মা পরিশুদ্ধ, শক্তিশালী হয়। যেমন, সোনাকে জ্বালিয়ে খাদ মুক্ত করে খাটি সোনায় রূপান্তরিত করা হয়। তেমনি মানুষের শরীরকে রোজার মাধ্যমে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শুদ্ধ-পবিত্র করা হয়।তাই আমরা রোজার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ও মাহাত্বকে আগে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করবো এবং হয়তো এটাই হতে পারে আমার জীবনের শেষ রমজান, এই অনুভূতি অন্তরে ধারণ করে শুরু করি প্রথম দিনের সিয়াম সাধনা। আমিন……….।। কোহিনূর বিনতে আবুবকর।

The post রোজার প্রস্তুতিঃ মোবারক হোক মাহে রমজান appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3cKR0bN

No comments:

Post a Comment