Sunday, May 31, 2020

৬৬ দিন পর খুললো দেশ https://ift.tt/eA8V8J

করোনা আতঙ্ক তো ছিলই। কবে দেশে করোনার হানা শুরু হবে। চীনে তখন ভয়াবহভাবে করোনার তাণ্ডব চলছে। বাংলাদেশ অপেক্ষায় কবে হানা দেবে করোনা। এমনই পরিস্থিতিতে গত ৮ মার্চ দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী এবং দুজন পুরুষ। এদের মধ্যে ছিল দুইজন ইতালি ফেরত বাংলাদেশি।রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। দেশে করোনার আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়।

এরপর সরকার করোনা ঠেকাতে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। এর মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষীকির অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। যে অনুষ্ঠানের জন্য জাতি অপেক্ষা করেছিল দীর্ঘদিন। ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সরকার মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপন করবে। দেশের ভেতর ছাড়াও বাইরে উদ্‌যাপিত হবে জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিব বর্ষের আনন্দ আয়োজন।বড় পরিসরে অনুষ্ঠানটি করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় ছোট পরিসরে অনুষ্ঠানটি উদ্‌যাপন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকারি ছুটি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদও বাড়ানো হয়। যা আপাতত খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত ২৬ মার্চ থেকে দেশ ছুটিতে চলে যায়। কয়েক দফা ছুটি বাড়ানোর পর সবশেষ ছুটি ৩০ মে শনিবার পর্যন্ত ঘোষণা করা ছিল। ছুটির কারণে জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। সাত দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে ২৬ এপ্রিল থেকে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয় সীমিত পরিসরে। ঈদের আগে শপিং মল- দোকানপাট খোলা হয়। এর আগে ব্যাংকেরও সময়ও স্বাভাবিক করা হয় অনেকটা।

নাগরিক জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনৈতিক কমকাণ্ড এবং অফিস-আদালত সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ ব্যবস্থায় সীমিত আকারে খুলছে আজ। সে ক্ষেত্রে বয়স্ক, অসুস্থ ও গর্ভবতী কর্মীরা কর্মস্থলে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ১৩ দফা মানতে হবে।

দোকান পাট, ব্যবসাকেন্দ্র আগের মতো সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে আরও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যাত্রীবাহী গণপরিবহন, নৌযান, ট্রেন চলাচল শুরু হবে আজ থেকে।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখাও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আবার করোনা পরিস্থিতিও অবনতি হচ্ছে। এই চিন্তা থেকেই সীমিত আকারে সবকিছু খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সর্বশেষ ছুটির প্রজ্ঞাপনের সময়ই কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছিল। দোকানপাট, তৈরি পোশাক কারখানাসহ কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকও চালু আছে। অফিসও প্রয়োজনে খোলা রাখা যাচ্ছে।

তবে ছুটির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল ছুটির সময় জনসাধারণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগের জারি করা নির্দেশনা (স্বাস্থ্যবিধি) কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল ইত্যাদি) ছাড়া অন্যান্য গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও যাত্রীবাহী ট্রেনও বন্ধ থাকবে। এমনকি অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবা ও গণমাধ্যমসহ কিছু প্রতিষ্ঠান ছুটির বাইরে আছে।

জীবন এবং জীবিকার যে দ্বন্দ্ব; সেই দ্বন্দ্বে জীবিকার প্রয়োজনে সবকিছু খুলে যাচ্ছে আজ থেকে। সরকার অনেকগুলো স্বাস্থ্যবিধি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে। এমন সময় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যখন দেশে প্রায় প্রতিদিন রেকর্ড করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

তবে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের সময় আরও দীর্ঘ হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো খারাপ হতো। সরকারও নিশ্চয় সেটা চাইবে না। জীবন বাঁচানোর মতো জীবিকা ঠিক রাখাও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। গেল দুই মাস বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমজীবী মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করেছে।

শুধু পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকদের কথাই চিন্তা করুন। গাড়ি না চলায় কী অবর্ণনীয় দিন তারা পার করেছেন! এমন অনেক পেশার লোকজনকেই করোনাকাল অর্থনৈতিক দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে। চিড়েচ্যাপটা অবস্থা হয়েছে মধ্যবিত্তদেরও।

টানা দুই মাসের বেশি প্রায় সবকিছু বন্ধ। এভাবে তো আর দেশ চলতে পারে না! আবার আগের মতো সব খুলে দেয়া হলেও মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে এই অচলাবস্থা কতদিন চালিয়ে রাখতে পারে?

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এমন অবস্থায় আবার আমাদের অফিস-আদালত খুলছে। রাস্তায় গণপরিবহনসহ সব গাড়ি চলবে। ঘরে বসে থাকার দিনও ফুরিয়ে এসেছে।

এখন যাদের শরীরের ইমিউন মানে রোগ প্রতিরোধ শক্তি ভালো তারা টিকে থাকবেন। শারীরিকভাবে যারা দুর্বল, যাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম তাদের হয়তো পরিণতি ভালো হবে না (কঠিন শব্দ বলতে চাই না)। করোনায় এখন কায়দা করে (স্বাস্থ্যবিধি মেনে) বাঁচতে হবে। এছাড়া আর বিকল্প নেই। কোভিড-১৯ এর সাথে এখন টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে এখন আমাদের জয়ী হতে হবে।

The post ৬৬ দিন পর খুললো দেশ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2zChMp6

No comments:

Post a Comment