Thursday, December 2, 2021

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ https://ift.tt/eA8V8J

ছবির ক্যাপশান: একাত্তরের ২৬ নভেম্বর দেবহাটার পারুলিয়া এলাকায় জেনারেল ওসমানী, মেজর জলিল ও ক্যাপ্টেন হুদা

ডা. সুব্রত ঘোষ

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস। মুক্তিবাহিনীর একের পর এক হামলায় পাক হানাদাররা দিশাহারা। দেশে সব অঞ্চলেই বিজেয়ের বেশে একের পর এক এগিয়ে যেতে লাগলো মুক্তিযোদ্ধারা। উপায়ান্তর না দেখে পাকবাহিনী এ দেশের সাধারণ জনগণের ওপর হত্যা, নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিল কয়েকগুণ।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতে বিমান হামলা করে পাকিস্তান। তাদের উদ্দেশ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা আদায়। পাকিস্তান ভেবেছিল মুক্তিযুদ্ধকে দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধ হিসেবে দেখানো গেলে জাতিসংঘের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা আসবে। জাতিসংঘ তখন উভয় পক্ষকে বাধ্য করবে এবং উভয় দেশে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবে। আর এতে করে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের মাটিতে অবস্থান করতে পারবে অনির্দিষ্টকালের জন্য।

পাকিস্তান বিমানবাহিনী এদিন বিকেলের দিকে ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোর্ট, শ্রীনগর, অবনত্মীপুর, উত্তরালইসহ দিল্লির কাছাকাছি আগ্রার বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। ভারতের উপর পাকিস্তান বাহিনীর এ হামলা পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে ১১টায় ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের ওপর পাল্টা হামলা চালায়।

৩ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তান সংক্ষিপ্ত এক বিশেষ সংবাদ প্রচার করে যে, ‘ভারত পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে আক্রমণ শুরু করেছে। বিস্তারিত খবর এখনো আসছে।’ পাঁচটা ৯ মিনিটে পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় কাশ্মীরের শ্রীনগর ও অনন্তপুরের উদ্দেশে এবং সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি মিরেজ বিমান উড়ে যায় অমৃতসর ও পাঠানকোর্টের দিকে। দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে পাঠানো হয় ভারত ভূখ-ের গভীরে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই আক্রমণে।

৩রা ডিসেম্বর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতাকালে ভারতের বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তানের উল্লিখিত বিমান-আক্রমণ শুরু হয়। অবিলম্বে তিনি দিল্লি প্রত্যাবর্তন করেন।

মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর মধ্যরাত্রির কিছু পরে বেতার বক্তৃতায় তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, ‘এতোদিন ধরে বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।’ ভারতও এর জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে।

ভারত ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা করার পর ভারতীয় কমান্ডের অধীনে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং পাকিস্তানিরা আগেভাগেই তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটায় সেসব স্থানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ‘মুক্তাঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করে।

ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এদিনে তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন জানায়, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে যেকোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তারা ভেটো দিবে।

The post ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3IpM2lA

No comments:

Post a Comment