Sunday, December 5, 2021

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা ৬ ডিসেম্বর: ঐতিহাসিক দেবহাটা মুক্ত দিবস https://ift.tt/eA8V8J

দেবহাটা ব্যুরো/দেবহাটা সংবাদদাতা: আজ ৬ ডিসেম্বর, রবিবার মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা ঐতিহাসিক দেবহাটা হানাদার মুক্ত দিবস। মুক্তিকামী বাংলার বীর সেনানীদের কাছে পরাজিত হয়ে এই দিনে দেবহাটা ছেড়ে চলে যায় পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী। সাথে সাথে হানাদার মুক্ত হয় দেবহাটা উপজেলা। বিজয়ের পতাকা হাতে উল্লাসে ফেটে পড়ে মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ। সারা এলাকার মানুষের মুখে ফুটে ওঠে বিজয়ের হাসি। এই দিনেই দেবহাটা উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ খুঁজে পেয়েছিল দীর্ঘদিনের যুদ্ধ জয়ের আনন্দ।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে এই দিনটি স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন পরবর্তী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র দেবহাটা ছিল ৯ নং সেক্টরের অর্ন্তভুক্ত। সাতক্ষীরা কোর্ট চত্ত্বরের ট্রেজারীর ৪শত রাইফেল লুট করে তৎকালীন সময়ে আবদুল গফুর, এমএলএ আইয়ুব হোসেন ও ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার জীবন বাজি রেখে ৯ নং সেক্টর গঠন করেন। এই ৯ নং সেক্টরের আওতায় তিনটি সাব-সেক্টরও গঠন করা হয়। তার মধ্যে প্রথম সেক্টরটি ছিল শমসের নগর। যার নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা। দ্বিতীয়টি হেঙ্গলগঞ্জ ও তৃতীয়টি ছিল ভারতের টাকীতে। তৃতীয়টির নেতৃত্বে ছিলেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার।

বাংলাদেশের ১১টি সেক্টরের মধ্যে ৯ নং সেক্টরটি ছিল সর্ববৃহৎ। ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের উদ্যোগেই ভারতের টাকীতে গড়ে তোলা হয় ৯ নং সেক্টর। সেজন্য তাকে ৯ নং সেক্টরের প্রতিষ্টাতা ও সাব সেক্টর কমান্ডারের খেতাব দেয়া হয়। সমগ্র দেবহাটা থানা ৯ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল।

শাহজাহান মাস্টারের নেতৃত্বেই এই অঞ্চলের যুবকেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি দেশ মাতৃকার টানে এলাকার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তখন দেবহাটা এলাকার খানজিয়া ক্যাম্প, দেবহাটা ক্যাম্প, টাউনশ্রীপুর ক্যাম্প, সখিপুর ক্যাম্প, পারুলিয়া ক্যাম্প, কুলিয়া বাজার ও পুষ্পকাটি ইটেরভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনারা ঘাঁটি গড়ে তোলে।

দেবহাটা এলাকায় টাউনশ্রীপুর ফুটবল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর এক রাজাকার পাক সেনাদের কাছে পৌঁছে দেয়। ফলে পাক সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। বিষয়টি ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার বুঝতে পেরে অসীম সাহসের সাথে যুদ্ধ করেন। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্ত হয়। এই যুদ্ধে বহু পাক সেনা নিহত হয়। এছাড়া ভাতশালাসহ বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার।

ভাতশালা যুদ্ধের শেষের দিকে হঠাৎ একটি বুলেট এসে মুক্তিযোদ্ধা গোলজারের মাথায় লাগে। সেখানেই তিনি নিহত হন। এক পর্যায়ে টাউনশ্রীপুরের সেনা ঘাটির পতন হয়। তখন প্রধান সেনাপতি এম.এ.জি ওসমানী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মেদ ও সেক্টর কমান্ডার এম.এ জলিল সকলে মিলে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারকে নিয়ে বিজয় উল্লাস করেন। তবে পাক সেনারা দেবহাটা ছেড়ে যাওয়ার সময় শাহজাহান মাস্টারের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।

অক্টোবর মাসে পাকিস্থানী সেনারা খাঁনজিয়া ক্যাম্প ছেড়ে পলায়ণ করে। তারা যাওয়ার সময় ঐ এলাকায় বেশ কিছু এ.পি মাইন পুতে রেখে যায়। যে মাইন গুলো অপসারণ করতে যেয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব শহীদ হন। পরে পারুলিয়া, সখিপুর ও কুলিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্ত হয়। তারা চলে যাওয়ার সময় বহু মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং পারুলিয়া ব্রীজ ধ্বংস করে দেয়। এভাবে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয় এবং মুক্তিকামীদের হাতে উড়তে শুরু করে বিজয়ের পতাকা।

The post মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা ৬ ডিসেম্বর: ঐতিহাসিক দেবহাটা মুক্ত দিবস appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3rCUfg5

No comments:

Post a Comment