বিশ্বের কয়েকটি এলাকা আছে যেখানে মানুষের গড় আয়ু তুলনামূলকভাবে বেশি। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, জীবনযাপনের ধরণ, খাদ্যাভ্যাস আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়গুলো এসব অঞ্চলে দীর্ঘ আয়ুর সহায়ক।
স্বাভাবিক গড় আয়ুর থেকে যেসব অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বেশি সেসব অঞ্চলকে ‘ব্লু জোন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। মার্কিন গবেষক এবং লেখক ড্যান বুয়েটনার প্রথম ‘ব্লু জোন’ শব্দটির ব্যবহার করেন।
বুয়েটনারের ‘দীর্ঘ জীবনের রহস্য’ শিরোনামে একটি লেখা ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের কভার স্টোরিতে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানেই তিনি প্রথম বেশি গড় আয়ুর অঞ্চলসমূহকে ‘ব্লু জোনস’ হিসেবে অভিহিত করেন। জনতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসক ড. গিয়ান্নি পেস এবং জনতত্ত্ববিদ মিশেল পাওলাইন ইতালির সারদিনিয়ার বিশেষ কয়েকটি অঞ্চলের জনতাত্ত্বিক গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন, সেখানে সবচেয়ে বেশি শতবর্ষ বয়সী মানুষের বসবাস।
ইতালির সারদিনিয়াতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শতবর্ষী মানুষের বসবাস। সারদিনিয়ায় শতায়ু অর্জনকারী নারী-পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। ২০১০ সালের মে মাসে সারদিনিয়াতে ৩৫০ জন শতায়ু জনগণ ছিল। এখানে গড়ে প্রতি এক লাখ মানুষের ২২ জন শতবর্ষী। সারদিনিয়ার সবচেয়ে বেশি বয়স লাভ করার ক্ষেত্রে তিয়ানা গ্রামটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গ্রামটির বেশিরভাগ মানুষের বয়সই ৯০ বছরের বেশি। শতায়ু জনগণের হারও এখানে অনেক বেশি।
হাস্যোজ্জ্বল এক বৃদ্ধতিয়ানা গ্রামের বাসিন্দা অ্যান্থেনিয়ো টডে ১১০ দশ বছর বয়সে পৌঁছানো প্রথম মানুষ। তিনি পৃথিবীর একমাত্র স্বীকৃত মানুষ যিনি তিনটি শতক পেয়েছেন। ১৮৮০’র দশকের শেষ দিকে জন্মগ্রহণ করা অ্যান্থেনিয়ো মৃত্যুবরণ করেন ২০০২ সালে ১১৩ বছর বয়সে। অর্থাৎ তার উনিশ, বিশ এবং একুশ শতকে জীবিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। তার ছেলে ৮৪ বছর বয়সী টোনিয়ও শতায়ু হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সারদিনিয়ার আরেকটি ছোট গ্রাম সেলো। প্রায় হাজারের মত জনসংখ্যা বিশিষ্ট পার্বত্য অঞ্চলের এই গ্রামে ১৯৯৬ সাল থেকে ১০১৬ সাল পর্যন্ত ২০ জন শতবর্ষ অতিক্রম করে। এছাড়া জাপানের ওকিনওয়া, গ্রিসের ইকারিয়া, কোস্টারিকার নিকোইয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডাও জনগণের দীর্ঘ আয়ুর জন্য ‘ব্লু জোনের’ অন্তর্ভুক্ত।
এই বয়সেও তারা কৃষিকাজ করেন২০০৯ সালের এপ্রিল মাসের একটি গবেষণায় জানা যায়, গ্রিসের ইকারিয়ায় শতকরা হারে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ৯০ বছরের বেশি জনগণের বসবাস। সেখানে প্রায় প্রতি তিন জনের একজনের বয়স ৯০ এর বেশি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ইকারিয়ার জনগণের রোগ ব্যাধিও অনেক কম।
‘ব্লু জোনের’ জনগণের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের দীর্ঘায়ুতে বড় অবদান রাখে। এছাড়া উন্নত জিনগত বৈশিষ্ট্য, সুষম খাদ্য গ্রহণ, শারীরিক কসরত সবাই তাদের দীর্ঘজীবী হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। গবেষণা থেকে জানা যায়, পরিবারিক বন্ধন ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক, জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ ব্লু জোনের মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
হাঁটছেন তিন বৃদ্ধএছাড়াও তারা নিয়মিত শাকসবজি ও উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণ করায় দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। অনেক গবেষকই মনে করেন, বেশিদিন বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে জীবন যাপনের ধরণ, খাদ্যাভ্যাস, জিনগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো সমান ভূমিকা পালন করে।
সূত্র: সিএনএন
The post শত আয়ুর মানুষের বসবাস এসব গ্রামে! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2KVGT80
No comments:
Post a Comment