১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে দুইটি দারুণ জয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আইসিসি সহযোগী সদস্য স্কটল্যান্ড এবং সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে ক্রিকেট বিশ্বে রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু চারবছর পর দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে চরম ব্যর্থ, খালেদ মাসুদ পাইলটের অধিনায়কত্ব আর পাকিস্তানের মহসিন কামালের কোচিংয়ে চরম ভরাডুবি ঘটেছিল বাংলাদেশের। ইতিহাস জানাচ্ছে, ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে কানাডার কাছেও হেরে গেছিল বাংলাদেশ।
শুধু তাই নয়, ঐ বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশের সামগ্রিক পারফরমেন্সই ছিল খুব খারাপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচটি ছাড়া ঐ আসরে সব খেলায় হেরেছিল বাংলাদেশ।
প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে স্কটল্যান্ড আর পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয়া দল, দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে প্রথম ম্যাচেই কানাডার মত অনভিজ্ঞ দলের কাছে হারতে পারে- তা কল্পনায়ও আসেনি কারও। কিন্তু বাস্তবে সে অপ্রত্যাশিত পরাজয় ঘটেছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই গোটা দেশে নেমে এসেছিল হতাশা।
যে দলকে হারিয়ে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জিতেছিল আকরাম খানের দল, ছয় বছরের মাথায় সেই কেনিয়ার কাছেও বিশ্বকাপে হারতে হয়েছিল। সে হারেরও আসলে কোন অজুহাত নেই। তবু কথা থাকে যে ঐ কেনিয়ান দলে ছিলেন স্টিভ টিকোলো ও মরিস ওদুম্বের মত ক্রিকেটাররা।
নিঃসন্দেহে টেস্টে খেলিয়ে দলের বাইরে দুজনই অত্যন্ত বড় মাপের ক্রিকেটার, ভাল পারফরমার। যেকোন দলের বিপক্ষেই ভাল খেলার সামর্থ্য ও রেকর্ড আছে তাদের। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেবার কেনিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালও খেলেছে।
তাই কেনিয়ার সাথে হারকে অতিবড় বাংলাদেশ ভক্তও পুরোপুুরি অপ্রত্যাশিত মনে করেন না। কিন্তু কানাডার কাছে পরাজয় কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কেনিয়ার ক্রিকেট ইতিহাস, চর্চা, প্রচার-প্রসারের তুলনায় যোজন যোজন পিছিয়ে কানাডা। যে দলের কাছে বিশ্বকাপে পরাজয় এখনও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে পরিগণিত।
সে হারের যন্ত্রণা, কষ্ট এখনও অনেক ভক্তের মনে রক্তক্ষরণ করায়। সবাই কারণ খুঁজে বেড়ান, যে দেশের সারা বছর ক্রিকেটই হয় না, কিছু অভিবাসী ক্রিকেটারই যাদের মূল শক্তি, সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই শুধু যে দলের ক্রিকেট চর্চা- সেই দলের কাছে একটি পুরোদস্তুর টেস্ট দল হারে কী করে? দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর অবশেষে সে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করেছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন।
সোমবার ঈদের রাতে নামি ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের সঙ্গে লাইভে কানাডার কাছে সেই হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন প্রথমেই বলেছেন, ‘ঐ পরাজয় মেনে নেয়া ছিল খুব কঠিন। তবে সত্য অনেক সময় বলতেই হয়, কঠিন সত্য হলেও আজ বলব। ডারবানে যে উইকেটে আমরা কানাডার সঙ্গে খেলেছিলাম, সে পিচের ওপরে সবুজ ঘাস ভরা ছিল। আমরা ঘাসের উইকেটেও বাড়তি পেসার নিয়ে নামিনি। কেন আমরা থার্ড পেসার নিয়ে খেললাম না, আর সিজানকে (এহসানুল হক) কেন থার্ড সিমার (আসলে চতুর্থ সিমার, কারণ মাশরাফি বিন মর্তুজা , মঞ্জুরুল ইসলাম আর তাপস বৈশ্য- এই তিন পেসার ঐ ম্যাচ খেলেছিলেন) হিসেবে খেলান হয়েছিল সেটা বোধগম্য হয়নি।’
সুজন বোঝানোর চেষ্টা করেন, ঘাসে ভরা উইকেটে বোলিং করার যেমন বোলিং কারিশমা লাগে সিজান কখনওই ঐ মানের বোলার নন। কিন্তু কেন একজন বাড়তি স্পেশালিস্ট পেসার না নিয়ে সিজানকে খেলান হয়েছিল তার মাথায় আসেনি। সেটা কোচ ও ক্যাপ্টেনই হয়ত ভাল বলতে পারবে।
তার ব্যাখ্যা, ‘আমরা কানাডার সঙ্গে একজন সিমার কম নিয়ে খেলেছিলাম। আমরা তো আর সেটা জিজ্ঞেস করতে পারি না। কারণ সেটা কোচ-ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্ত। তারা হয়তো সম্ভাব্য সেরা দলকেই নির্বাচন করেছিলেন। তবে আমার মতে ঐ পিচে কানাডার বিপক্ষে অতি অবশ্যই দল সাজানোয় ত্রুটি ছিল। আমাদের অবশ্যই একজন বাড়তি পেসার নিয়ে খেলা উচিৎ ছিল।’
বলে রাখা ভাল, কানাডা ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম দুই ম্যাচ খেলেনি খালেদ মাহমুদ সুজন। তবে তার কথা, ‘আমি খেলিনি সেটা বড় কথা নয়। দলে আরও সিমার ছিল। তাদেরও খেলান যেত। কানাডার মতো দলের বিপক্ষে আমরা আমাদের বোলিং স্ট্রং করব, ঘাসের উইকেটে ভাল বোলার দরকার, একজন বাড়তি পেসার থাকলে আমরা তাড়াতাড়ি ওদের উইকেট তুলে নিতে পারতাম। কেন আমরা নেইনি, সেটা এখনও আমার মনে হয়। তবে সন্দেহ নেই আমরা ভাল ক্রিকেট খেলিনি। তারপরও আমার মনে হয় আমাদের প্ল্যানিংয়েও অনেক ভুল ছিল।’
The post বিশ্বকাপে কানাডার কাছে যে কারণে হেরেছিল বাংলাদেশ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3glKAm4
No comments:
Post a Comment