কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। গত এক মাসে বিশ্বে আক্রান্ত কিংবা মৃতের হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আক্রান্ত কিংবা মৃতের সংখ্যা এক দিন কমছে তো পরের দিন আবার বেড়ে যাচ্ছে। সামরিক কিংবা অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এ মাসেই মৃতের সংখ্যা লাখ ছাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। আরেক পরাশক্তি রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারে দেয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৫২ জন। এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ২৭৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ১২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৫ জন। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২ লাখ ১৫ হাজার ৭৯০ জন। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
যুক্তরাষ্ট্রে এ মাসেই লাখ ছাড়াবে মৃত্যু!
গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৩ হাজার ১০ জন (বিশ্বে মোট আক্রান্তের ৩৩ শতাংশ)। মৃতের সংখ্যা ছিল ৭০ হাজারের বেশি। গত রবিবার ফক্স নিউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আর লকডাউন ছাড়া এই সংখ্যা দাঁড়াতে পারে এক লাখ ২০ হাজারে।’
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সংখ্যা বাস্তবতা থেকে অনেক কম। কারণ দেশটিতে পুরো এপ্রিল মাসে প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে অনেক অঙ্গরাজ্যে। ট্রাম্পের নিজের দপ্তর—হোয়াইট হাউসও বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) উদ্ধৃতি দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখে দাঁড়াতে পারে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ঠেকতে পারে তিন হাজারে। এমনকি লকডাউন শিথিলের নেতিবাচক প্রভাব না পড়লেও যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগামীতে বাড়বে।
ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির ‘বায়োস্ট্যাটিস্টিকস’ বিভাগের অধ্যাপক নিকোলাস রেইস বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত ধারণা, জুনের শুরুতেই আমরা এক লাখ মানুষের মৃত্যু দেখতে পাব।’
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’ (আইএইচএমই) বলছে, মানুষজন আর আগের মতো লকডাউন মানছে না। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের তথ্য বলছে, মানুষ এখন ঘরের বাইরে যাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। আইএইচএমইর ধারণা, ২১ মের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা লাখ ছাড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা দেওয়া ডা. জর্জ দিয়াজ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘অর্থনীতি পুনরায় সচল হলে করোনাভাইরাস দ্বিতীয়বার আঘাত হানবে। সেই আঘাতের তীব্রতা হবে এখনকার চেয়ে আরো ভয়াবহ।’
‘বিশৃঙ্খলার’ ঝুঁকিতে স্পেন
স্পেনে দ্বিতীয় দফা জারি করা জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হবে ৯ মে। এরপর আরো দুই সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াতে চান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। শিগগিরই প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে তুলবেন তিনি। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল পপুলার পার্টি এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই প্রস্তাবে সমর্থন দেবে না। সানচেজ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো না গেলে স্পেনের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অরাজকতা তৈরি হবে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে করোনা পরিস্থিতি। স্পেনে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ৩০১; যা যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
দেশে দেশে করোনাচিত্র
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনাভাইরাসের ‘ঘাঁটি’ হয়ে উঠছে রাশিয়া। ১০ দিনের ব্যবধানে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় লাখে। এর মধ্যে গত তিন দিন ধরে সেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৪৫১ জনের। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনে গতকাল আক্রান্ত হয়েছে মাত্র একজন। এ ছাড়া দেশটিতে গতকাল করোনাভাইরাসে কারো মৃত্যু হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ায় গতকাল কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে ৩ জনের মধ্যে। গতকালের ৬৩ জনসহ ইরানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৪০ জনে। পাশের দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৫৭১ জনের।
সার্বিক পরিস্থিতি
বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, এক মাস ধরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করছে। গত সোমবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৯ হাজার ৫৮২। গত এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ২৪ এপ্রিল, ৯৩ হাজার ৯৫৬ জন। সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয় ২৭ এপ্রিল, ৭২ হাজার ৩১৬ জন। এদিকে গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪৭। মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৫৩ হাজার ১৬৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১২ লাখ ১০ হাজার ৫৯১ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ২২ লাখ পাঁচ হাজার ৯৮৭ জন। এঁদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ রয়েছে ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৬ জনের (৯৮ শতাংশ)। বাকি ৪৯ হাজার ৬২১ জনের (২ শতাংশ) অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া বিশ্বের প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৭১ জন। বৈশ্বিক মৃত্যুর হার ৬.৮৯ শতাংশ। সূত্র : এএফপি।
The post করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৫২ জন, আক্রান্ত ৩৭ লাখ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2W59oGO
No comments:
Post a Comment