দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ৫৩তম দিনে বাংলাদেশ মৃত্যুর হারের দিক থেকে সর্বোচ্চ ও সুস্থতার হারে সর্বনিম্ন অবস্থানের রেকর্ড গড়েছে। এরফলে, এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থান দখল করে আছে বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে তাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।
ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও অন্যান্য এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশে একই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে ১৬৩ জন।
পাকিস্তানে করোনাভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত রেকর্ড হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি ইরানফেরত এক শিক্ষার্থী ছিলেন। এর ৫৩ দিনের মাথায় পাকিস্তানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা অঞ্চলটির আট দেশকে ছাড়িয়ে যায়। একইসাথে, ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪৩ জন।
আফগানিস্তানে প্রথম ৫৩ দিনে ৩০ জন, ভারত ৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করলেও অঞ্চলের বাকি দেশগুলো করোনাভাইরাসে একটি মৃত্যুও রেকর্ড করেনি।
পাকিস্তানের মত, বাংলাদেশেও গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এই দু’দিনেই যথাক্রমে ৫৪৯ ও ৬৪১ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে এই দু’টি দেশই চার-সংখ্যার করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার রেকর্ড করেছে। বাকি পাঁচটি দেশে তিন-সংখ্যা, দুই এমনকী, একক সংখ্যারও শনাক্ত রেকর্ড হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের হিসেব মতে, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মত পর্যটনকেন্দ্রিক দেশগুলো বিশ্বে সংক্রমণ শুরু হওয়ার একদম প্রথমদিকেই কঠোরভাবে লকডাউন করে দিয়েছিলো। একইসাথে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং সীমান্তগুলো তৎক্ষণাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভারত এখন পর্যন্ত ২২,৯৮২ জন শনাক্ত ও ১,০০৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
শ্রীলঙ্কা গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম শনাক্ত রেকর্ড করেছে। ৪৪ বছর বয়সী চীনের এক নারী হুবেই থেকে দেশটিতে এসেছিলেন। তিনিই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। পরবর্তীতে, শ্রীলঙ্কা ১৩তম দিনে গিয়ে দ্বিতীয় আক্রান্ত শনাক্তের রেকর্ড করে।
নেপালে, কাতার হয়ে ফ্রান্সফেরত ১৯ বছরের এক তরুণী শনাক্ত হন গত ১৭ মার্চ। এটি ছিলো দেশটির দ্বিতীয় করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্তর ঘটনা।
মালদ্বীপের বাংলাদেশি অভিবাসীরা সেখানকার স্থানীয়দের তুলনায় অনেকবেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ২৯ এপ্রিলের মধ্যে দেশটিতে মোট আক্রান্ত ২৫৬ জনের মধ্যে ১১৫ জনই বাংলাদেশি বলে জানা গিয়েছে।
তবে বাংলাদেশে এখন অনেকবেশি শনাক্ত পাওয়া যাচ্ছে কেননা, প্রথম সংক্রমণের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
সর্বনিম্ন সুস্থতার হার
২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭,১০৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরমধ্যে ১৫০ জন সুস্থ হয়েছেন। যেখানে অন্যান্য দেশে অনেকবেশি হারে সুস্থতা রেকর্ড হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার হার মাত্র ২.১১% রোগীর। গত ২৮ এপ্রিল এই হার ছিলো, ২.১৫%।
গত ২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছিলেন, আক্রান্ত রোগীদের কয়েকজন বাড়িতে বাসায় সুস্থ হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এখনও দেশে পুনরুদ্ধারের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, এখন কেবল হাসপাতালগুলোতে চিকিত্সা শেষে কোভিড-১৯ পুরোপুরি নিরাময়ের পরে ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতেই এখন সুস্থ রোগীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য পুনরুদ্ধার করা সমস্ত রোগীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
সার্ক তহবিলের জন্য ২ কোটি ১৮ লাখ ডলারের অঙ্গীকার
এর আগে গত ১৫ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রধানের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়তে একটি জরুরি আঞ্চলিক তহবিল গঠন করার প্রস্তাব দেন।
রাষ্ট্রপ্রধানরা দক্ষিণ এশিয়ায় এই মহামারির প্রভাব ও বিস্তার নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে একটি ইনস্টিটিউট গঠন করার অনুরোধ জানান।
২২ মার্চ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ছাড়া বাকি সবদেশ যৌথ তহবিলে অর্থসহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করে। ভারত ১ কোটি, বাংলাদেশ দেড়কোটি, আফগানিস্তান ও নেপাল ১০ লাখ করে, মালদ্বীপ ০.২ মিলিয়ন ও ভুটান ডলার সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
পরবর্তীতে ২৪ মার্চ, শ্রীলঙ্কা ৫০ লাখ ও ৯ এপ্রিল পাকিস্তান ৩০ লাখ ডলার অর্থসহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
যারফলে, সর্বমোট ২ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার পরিমাণের জরুরি তহবিল দিয়ে মহামারি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে দক্ষিণ এশিয়া।
The post দক্ষিন এশিয়ায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি: সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3aT5IvZ
No comments:
Post a Comment