Thursday, April 1, 2021

মধু মৌসুম শুরু, আনুষ্ঠানিকতার পর সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে মৌয়ালরা https://ift.tt/eA8V8J

লোকজন ঠিক করা থেকে ড্রাম কিংবা দা সব কিছু রেডি করেলাম বেশ আগেই। নৌকা সাজানোর কাজও শেষ করিছি পাঁচ/সাত দিন হয়েছে। অপেক্ষা শেষে পাশ (অনুমতিপত্র) হাতে এসেছে সকালে। একটু পরেই বনে নামবো। কথাগুলো বলেন সুন্দরবন সংলগ্ন দাতিনাখালী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়সী খোকন গাজী।

নীলডুমুর খেয়াঘাটে দাড়ানো কদমতলা গ্রামের আশরাফুল ইসলামের দাবি নৌকার বিএলসি নেয়ার পর বাজার সদয় এর কাজ অনেক আগেই গুছিয়েছেন। সঙ্গে যাওয়া শ্রমিকদেরও আগাম মজুরী মিটিয়ে দিয়েছেন আগেভাগে। বনবিভাগের অনুমতি পাওয়ার পর এখন তারা সুন্দরবনে উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

তবে শুধু দাতিনাখালীর খোকন গাজী আর কদমতলা গ্রামের আশরাফুল না। বরং কালিঞ্চি, মীরগাং, সোরা, আর গাবুরাসহ সুন্দরবন তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মৌয়াল দল প্রস্তুতি শেষে বৃহস্পতিবার থেকে সুন্দরবনে ঢুকতে শুরু করেছে। পুর্বেই নৌকা সাজানোর সকল কাজ সম্পন্নের পাশাপাশি সুন্দরবনে অবস্থানকালীন সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় কেনা কাটাও গুছিয়ে নিয়েছিল তারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বনবিভাগের পাশ (অনুমতি পত্র) হাতে পাওয়া মাত্রই তারাও সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে।

উল্লেখ্য প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আজ ১ এপ্রিল বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে মৌয়াল দলগুলো মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সুন্দরবনে মৌয়ালদের প্রবেশাধিকার বা পাশ দেয়া উপলক্ষে বেলা দশটায় বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশন অফিসে সংশ্লিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার পরপরই মৌয়ালদের হাতে মধু সংগ্রহের পাশ উঠিয়ে দেয়া হয়।

বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশন অফিসার সুলতান হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে নির্দেশণামুলক বক্তব্যের পর মৌয়ালদের হাতে ‘পাশ’ উঠিয়ে দেন পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান। পশ্চিম সুন্দরবনের চারটি ষ্টেশন থেকে প্রথম পর্যায়ে দুই শতাধিক মৌয়াল দল পাশ বা অনুমতিপত্র গ্রহন করেছে বলে বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশন অফিস সুত্র নিশ্চিত করে।

মৌয়াল দলগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে কাটুনি বাউলে, আড়িয়ালা, কড়ের বেবলে, বাহির ছাটা ওলাসহ প্রতিটি দলে সাত থেকে নয় জন পর্যন্ত সদস্য থাকে। প্রথম পর্যায়ে তারা পনের দিন সুন্দরবনে অবস্থান করে সংগৃহীত মধু ও মোম নিয়ে লোকালয়ে ফিরে পুনরায় সুন্দরবনে প্রবেশ করে দ্বিতীয় বারের মত। এভাবে টানা দু’মাস মৌয়াল দলগুলো সুন্দরবন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করবে।

এদিকে আজ থেকে মৌয়াল দলগুলো সুন্দরবনে প্রবেশ করলেও এবার আশানুরুপ মধু পাওয়া নিয়ে তারা সংশয়ের কথা জানিয়েছে। মুলত আগাম বৃষ্টি না হওয়ার পাশাপাশি চোরাইভাবে এ বছর দেদারছে মধু সংগ্রহের কারনে ‘চালান’ বাঁচানো নিয়ে তারা রীতিমত শংকায় পড়ার কথা জানিয়েছে। সোরা গ্রামের মোসলেম উদ্দীন ও আবুল হোসেন আর কদমতলা গ্রামের আলম গাজী জানায় প্রতি বছর প্রথম পনের দিনে বার থেকে পনের মণেরও অধিক মধু পাওয়া যেত। কিন্তু এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় চাক-এ মধুর পরিমান তুলনামুলকভাবে কম থাকার সম্ভবনা।

সাত থেকে নয় জনের একটি বহর নিয়ে বনে যেতে প্রতিটি চালানে ষাট/সত্তর হাজার টাকা খরচ -উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, মহাজনের থেকে চোটাই (সুদে) টাকা নিয়ে সুন্দরবনে যাচ্ছি। যদি চালান মার যায়, তবে ঋণের বোঝা টেনে বেড়াতি হবে। তবুও উপায়ন্তর না থাকায় বাধ্য হয়ে এবছর মধু সংগহে যাচ্ছে বলেও জানায় তারা।

কালিঞ্চি গ্রামের হাফিজুর রহমান ও চাঁদনীমুখা গ্রামের নওহর আলী জানায়, এলাকায় কাজ না থাকার সুযোগে এবছর মাছ কাঁকড়া শিকারের আড়ালে প্রচুর বনজীবি সুন্দরবনে যেয়ে চোরাইভাবে মধু কেটেছে। এসব চোরাই মৌয়ালদের কারনে প্রায় সবগুলো চাক ইতিমধ্যে দু’একবার কাটা পড়েছে। তাই ধরনা করা হচ্ছে বিগত বছরগুলোর তুলনায় মধু অনেক কম জুটবে। তারপরও বাপ-দাদাার পেশা মেনে আর পরিবারের সারা বছরের ভরোণ পোষন যোগাতে বাধ্য হয়ে বনে যাতি হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক মৌয়াল দলের সদস্য জানায় প্রতিবার মধু নিয়ে ফেরার পথে ‘পাশ’ সারেন্ডারের সময় বনবিভাগকে কিছু কিছু মধু দিতে হয়। এবছরও একই অবস্থা হলে মৌয়াল দলগুলো খুব বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এদিকে গত কয়েক বছর সুন্দরবনে বাঘের উপদ্রব না থাকায় মৌয়াল দলগুলো অনেকটা নির্বিঘেœ মধু সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু এবছর গোলপাতা মৌসুমের শেষ দিকে পশ্চিম সুন্দরবনের পায়রাটুনি এলাকায় বাঘের আক্রমে এক বনজীবি নিহতের ঘটনায় সুন্দরবনে ঢুকতে প্রস্তুত মৌয়ালদলের সদস্যরা কিছুটা আতংকে রয়েছে বলে জানিয়েছে। নীলডুমুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম, পানখালীর জহিরুল ইসলাম ও কালিঞ্চির মনোরঞ্জন মন্ডল জানায়, বনদস্যুদের সাথে সাথে বাঘের ভয় গত কয়েক বছরে কমলেও এবছর আবারও বনে মানুষ পড়েছে। তারপরও মধু সংগ্রহ পেশা বিধায় সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে বনে যাচ্ছে সবাই।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের পশ্চিম বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান জানায় প্রতি বছর ১ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে মৌয়ালদের হাতে পাশ উঠিয়ে দেয়ার রীতি থাকলেও করোনা মহামারীর কারনে এবছর তা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার মৌয়ালদের হাতে অনুমতি দেয়ার পর তারা মধু সংগ্রহে বনে প্রবেশ করবে। এবছর ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল মধু এবং ২ শত ৬৫ কুইন্টাল মোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আব্দুল হালিম, বুড়িগোয়ালীনি (শ্যামনগর):

The post মধু মৌসুম শুরু, আনুষ্ঠানিকতার পর সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে মৌয়ালরা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3dq7cRD

No comments:

Post a Comment