ইসলামের ৫টি স্তম্ভের ৩টি মোটামুটি সবাইকে পুরণ করতেই হয়, যেমন- কালিমা, নামাজ, রোজা। সবচেয়ে গরীব মুসলমান যে, তাকেও এই ৩ টি শর্তের মধ্যে থাকতেই হয়, না হলে তার মুসলমানিত্ব থাকে না। আর যারা একটু সামর্থ্যবান, সারা বছরের খরচ বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ যাদের হাতে থাকে তাদেরকে যাকাত দিতে হয়। সর্বশেষ ৫ নং স্তম্ভ হজ্জ ও যাদের সামর্থ্য আছে শুধু তারাই আদায় করবে।কালিমা মুখে উচ্চারণ করে অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে কাজে এর প্রতিফলন দেখাতে হয়। যেমন, আমরা যখন বলি- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ’ তখন অন্তরে এই বিশ্বাসকে এক শ’ থেকে এক শ’ ভাগই বসাতে হবে যে, সত্যিই এক আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর কোনো মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সঃ) তার প্রেরিত রাসুল। আর আমাদের প্রত্যেকটা কাজেই এই বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখাতে হবে। নামায, রোজা এগুলো অন্তর দিয়ে স্বীকার করে নিয়ে দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতার সাথে পালন করতে হয়। আর যাকাত আল্লাহ্ রব্বুল আলামিনের এমন একটি হুকুম যেখানে দৈহিক, মানসিক, আত্মিক এবাদতের সাথে সম্পদও ব্যয় করতে হয়। অর্থাৎ যাকাতের মাধ্যমে আল্লাহতাআলা বান্দার দৈহিক-মানসিক-আত্মিক ও আর্থিক পরিক্ষাও নিয়ে থাকেন। তাই ধনীদের জন্য যাকাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবাদত, যার প্রভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে এক সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনে। দেহ-মন দিয়ে নামায-রোজা পালন করা অনেকের কাছে সহজ মনে হলেও সম্পদ ব্যয় বা সম্পদ ত্যাগ স্বীকারের দ্বারা আল্লাহর আনুগত্য দেখানো অনেকের কাছেই কঠিন মনে হতে পারে। তাই আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন তাঁর ধনী মুমিন বান্দাদের কাছ থেকে সম্পদ ব্যয়ের পরীক্ষাও নিয়ে থাকেন।যাদের ওপর যাকাত ফরয তারা যাকাত আদায় করবেন এজন্য যে, আল্লাহ্ সুবহানআল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষে মানুষে ভারসাম্য বজায় রাখতে সম্পদের বণ্টনের মধ্যে তারতম্য রেখে দিয়েছেন, এভাবে তিনি মানুষকে পরীক্ষা করতে চান, কে তাঁর হুকুমের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে গরীবদের হক আদায় করে। আর এজন্য তিনি গরীবদেরকে কম সম্পদের অধিকারী করে ধনীদের কাছে তাদের অধিকার সংরক্ষিত রেখেছেন। সুতরাং ধনীরা তাদের সম্পদের পবিত্রতা হাছিল এবং সম্পদকে সুরক্ষার জন্য অবশ্যই যাকাত আদায় করবেন। তা না করলে আল্লাহ্ সুবহানআল্লাহতাআলা তাদের সম্পদকে যে কোন ভাবে ধ্বংসও করে দিতে পারেন। অথবা ওই সম্পদ ব্যবহারের দ্বারা তার জীবনকে আরও দুর্বিষহ, অশান্তিময় করে তুলতে পারেন। যেমন- আগুনে পুড়ে যেতে পারে, চুরি-ডাকাতি হয়ে যেতে পারে। আবার এমন অনেক দেখা যায়, ধনী ব্যাক্তির অঢেল সম্পদ তার মৃত্যুর পর, কখনও কখনও তার জীবদ্দশাতেই তার ওয়ারিশ বা সন্তান-সন্ততিগণ এমনভাবে ধ্বংস করে দেয় যে, সারাজীবন তিল তিল করে জমানো সম্পদ এক নিমিষেই নিঃশ্বেষ হয়ে যায়। প্রিয় নবী (সঃ) বলেন, ‘তোমরা যাকাত আদায়ের মাধ্যমে তোমাদের সম্পদকে পবিত্র করো’। পবিত্র কোরানেও বহু যায়গায় বহুভাবে নামাজের সাথে সাথে যাকাতের হুকুম এসেছে। তাই ধনীদের স্বার্থেই তাদেরকে তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে। যাকাত প্রতি বছর হিসাব করে রমজানুল মুবারকে আদায় করাই উত্তম। তাতে যাকাত আদায়ের দ্বারা আল্লাহ তাআলার হুকুমও পালন করা হয় আর সাথে সাথে ৭০ গুন বেশি পুরস্কারের অধিকারীও হওয়া যায়। সুতরাং আমরা যারা যাকাত আদায়ের সামর্থ অর্জন করেছি
তারা রমজানের এই রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সময়ে আর দেরি না করি। মাসআলা জেনে সম্পদের সঠিক হিসাব বের করে সঠিক খাতে যাকাত আদায় করি ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ্ সুবহানআল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে গরীব-দুঃখী ও অভাবগ্রস্থ আত্মীয় স্বজনদের অধিকার আদায়ের তৌফিক দান করুন! আল্লাহ্ সুবহানআল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মাফ করুন, এবারের রোজা মুসলিম বিশ্বের দরোজায় এমন এক সময়ে হাজির হয়েছে, যখন সমস্ত দুনিয়াজুড়ে মানুষ অদৃশ্য এক মরণঘাতি জীবাণু অস্ত্রের মুখে একেবারে অসহায়, দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দুনিয়ার কোনো পরাশক্তির হাতে কোনো সমাধান নেই এই মরণ মহামারী থেকে কোন মানুষকে বাঁচাতে পারে। আর দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীজুড়ে মানুষ লক ডাউন থাকার কারণে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে হাজির হতে চলেছে মানুষ। এই মুহুর্তে, এমন নাজুক, অনন্যপায় পরিস্থিতিতে ধনীদের উচিৎ অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে তাদের কাছে গরীব জনগোষ্ঠীর যে হিস্যা আছে তা তাদেরকে অতি সত্বর বুঝিয়ে দেওয়া যাকাতের মাধ্যমে। তাহলে মুসলমানদের এই আমলের বরকতেই হয়তো আল্লাহ্ গফুরুর রহিম সমস্ত দুনিয়ার মানুষকে মাফ করে দিতে পারেন। আমিন…………।কোহিনূর বিনতে আবুবকর।
The post যাকাত আদায়ের এই উত্তম সময় কে হেলায় না হারাই appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2Su5IfB
No comments:
Post a Comment