Sunday, April 25, 2021

সাতক্ষীরা পৌরসভায় একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর ও জলাশয় https://ift.tt/eA8V8J

পত্রদূত রিপোর্ট: আইন লঙ্ঘন করে একের পর এক সাতক্ষীরা পৌরসভার মধ্যকার পুকুর ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পরও পৌর কর্তৃপক্ষ আইনগত কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওই চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামিতে ভেঙে পড়বে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা।

সাতক্ষীরার বিশিষ্ঠ নাগরিক নেতা এড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী শহরের বুক চিরে প্রাণসায়ের খাল কাটান। এছাড়াও পৌরদিঘি, পুরাতন সাতক্ষীরার মায়ের মন্দিরের পুকুরসহ কয়েকটি পুকুর খনন করেন তিনি। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে ঐতিহ্যবাহি প্রাণসায়ের এর মধ্যে আবর্জনা ও বর্জ পদার্থ ফেলার পাশাপাশি দু’তীর জবরদখল হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে খালটি। তবে সম্প্রতি ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘের খালটির খনন কাজ চলায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে পৌরবাসি। এছাড়া একটি স্বার্থান্বেষী চক্র পৌরসভার মধ্যকার বড় বড় পুকুর ও জলাশয় একের পর এক ভরাট করে ফেলায় সাতক্ষীরা পৌরসভার দু’লাখের ও বেশি মানুষ প্রতি মুহূর্তে রয়েছে হুমকির সম্মুখে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও উত্তর পলাশপোল দুর্গা মন্দিরের পাশে হাজু ঘোষের বিক্রি করা পুকুর পৌরসভা নকশা অনুমোদন করার পর বিনা বাধায় সেখানে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। সকল ভরাট করা পুকুরে পৌরসভা নকশা অনুমোদন দিয়েছে বাড়ি করতে।
সরেজমিনে রোববার সকালে সাতক্ষীরা শহরের উত্তর পলাশপোলে যেয়ে দেখা গেছে জনৈক আব্দুস সবুর তার বড় পুকুরটি মাটি দিয়ে ভরাট করছেন। পুলিশ লাইন এলাকায় খান এন্টার প্রাইজের সাইন বোর্ড টানিয়ে বদু খান তার জলা জমি ভরাট করছেন। মাটি আনা হচ্ছে উত্তর পলাশপোলের অরুন ঘোষের পুকুর থেকে। একই এলাকার আমিনুর রহমানসহ তাদরে চার ভাই পুকুরের মধ্যে বেড়া দিয়ে মাটি ভরাট করছেন।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে স্থানীয় রাজু, মাছ সাত্তার, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় উত্তর পলাশপোলে শহরের প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা: আফতাবুজ্জামানের মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার কাছে দায়বদ্ধ থাকা জমি কৌশলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে মালিকানা পরিবর্তন দেখিয়ে জমির প¬ট বিক্রির বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত ‘মনোয়ারা হাউজিং’ নামের সাইন বোর্ড টানিয়ে মাটি ভরাট করা হয়। তারা রসুলপুরের সোহরাব বিশ্বাসের ছেলে খোকন বিশ্বাসের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে গভীর রাতে ট্রলি করে দূর থেকে মাটি বহন করে ওই পুকুর ভরাট করে সেখানে প¬ট বিক্রি করে বাড়ি নির্মাণ অব্যহত রয়েছে। ওই চক্রটি ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে ম্যানেজ করে এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় আবুল কাশেম , আব্দুস সাত্তার, রকিব, সাহেব আলীসহ কয়েকজন। পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।

স্থানীয়রা আরও জানান, তিন বছর আগে উত্তর পলাশপোলের মোহাম্মদ আলীর সন্তান অলি আহম্মেদ ও তার ১৪জন ওয়ারেশ পৈতৃক ৭৬ শতক পুকুর একইভাবে ভরাট করে প¬ট আকারে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে ওই জমিতে ঘরবাড়ি বানানোর পাশাপাশি আগামিতে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানানোর জন্য ঘেরা ও বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। উত্তর পলাশপোল সার্বজনীন দুর্গা পুজা মন্দিরের সামনে হাজু ঘোষের প্রায় দেড় বিঘা পুকুরটি প¬ট আকারে বিক্রি করে জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে ম্যানেজ করে তার অর্ধেক ভরাট করা বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানালেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, জবেদ আলীসহ কয়েকজন। রসুলপুর গোরস্থানের পাশে আফতাব মাষ্টারের বড় পুকুরটি ভরাট হওয়ার পথে। এ ছাড়াও ২০১৬ সালের উত্তর পলাশপোলের একটি বড় পুকুরসহ জলাশয় গভীর রাতে মাটি ভরাট করে ডাঙা জমিতে পরিণত করেছেন কাটিয়ার কুখ্যাত সোনা চোরাচালানি বলে পরিচিত গোল্ড মনি।

পলাশপোল স্টেডিয়ামের পাশে মো: লিটনের বোনেরা ফারাজি সম্পত্তি পাওয়ার পর তাদের একাংশ জনৈক হাফিজুর রহমানের কাছে বিক্রি করার পর তিনি সম্প্রতি পুকুরের একাংশ ভরাট করে দ্বিতল বাড়ি বানিয়েছেন।
এছাড়াও শহরের ফুড অফিসের নিকটে সালমা ম্যাডামের বাড়ির পাশের বিশাল পুকুর, ধোপা পুকুরের একাংশ ভরাট করে প্রয়াত বিএনপি নেতা মোদাচ্ছেরুল হক হুদা, ধোপাপাড়ার একটি পুকুর, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনের সামনের পুকুর, মুনজিতপুর, সুলতানপুর, কাটিয়া, পুরাতন সাতক্ষীরা, কুকরালি, রথখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভার পুকুর, প্রাকৃতিক জলাশয়, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, উদ্যানসহ জনস্বার্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্থান ভরাট করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এড. বিবেকানন্দ রায় জানান, পৌরসভার প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর ৫ ধারায় খেলার মাঠ, উন্মুক্ত উদ্যান, প্রাকৃতিক জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তণ করা যাবে না। বা উক্তরুপ জায়গা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরুপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। শাস্তি হিসেবে ৮ ধারায় বিধান লঙ্ঘনকারিদের অনধিক পাঁচ বছর কারাদ- বা অনুর্ধ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা একসাথে উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে।

সাতক্ষীরা ফায়ার সিভিল ডিফেন্স এর উপ-পরিচালক তারেক হাসান বলেন, একের পর এক যেভাবে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে তাতে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আগামিতে শহরে কোথাও আগুন লাগলে পানির অভাবে জতুগৃহে পরিণত হবে।
এব্যাপারে রোববার বিকেলে বদু খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
তবে আব্দুস সবুর বলেন, পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতে তিনি পুকুর ভরাট করছেন। তবে পরিবেশষ অধিদপ্তরের নোটিশ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
আমিনুল ইসলাম জানান, বাড়ির সামনে রাস্তাটি প্রশস্ত করতে পুকুরের সামান্য অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা পৌরসভার পলাশপোল এলাকার কাউন্সিলর শফিক-উদ-দৌলা সাগর জানান, তার এলাকার বেশ কওেয়কটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে ও কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পৌরসভার মধ্যকার জলাশয় ভরাট সংক্রান্ত আইনটি তাদের জানা না থাকায় জনগনের অভিযোগ পেলেও তারা কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
সাতক্ষীরা পৌর মেয়র বিএনপি নেতা তাসকিন আহম্মেদ চিশতির সঙ্গে রোববার বিকেলে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু পুকুর ভরাট করে পৌরসভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঘর বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় তাদের অফিস হওয়ার পর শনিবার উত্তর পলাশপোলের আব্দুস সবুর ও আমিনুল ইসলামের পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বদু খানের নীচু জমি ভরাট করা হচ্ছে তার তাদের জানা ছিল না। অবশ্যই সোমবার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

The post সাতক্ষীরা পৌরসভায় একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর ও জলাশয় appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3tLUnYZ

No comments:

Post a Comment