মুনসুর রহমান: লকডাউনে সাতক্ষীরা জেলার হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়ে বিপাকে দিনপাত করছেন। তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অথচপেটে ভাত নেই তবুও ঘরবন্দি তাদের পরিবারের সদস্যরা।
মহামারির করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে ঘরের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সরকারের সেই নির্দেশনা পালন করতে যেয়ে এখন না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে বিশেষ করে জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী, রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, মহেন্দ্র, থ্রি-হুইলার, ইঞ্জিন ভ্যান, মাইক্রো, ট্রাক ও বাস চালক, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, হকার, তৈরি পোশাক শ্রমিক, অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিক ও নিম্নস্তরের কর্মচারীরা, স্বর্ণ শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, কুলি, সেলুন শ্রমিক, চিত্রশিল্পী, সংবাদপত্রের হকার, চায়ের দোকানের শ্রমিক সহ দরিদ্র-হতদরিদ্র, নি¤œবৃত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। ঘরে থাকলে খাওয়া হচ্ছেনা আর বাইরে গেলে প্রশাসনের ভয়।
উভয় সংকটে পড়ে এখন তাদের মাথা খারাপ হবার উপক্রম। শুধু একজনের পরিবারের নয় এমন অবস্থা নয় জেলার লাখো লাখো পরিবারে। আরও জানা যায়, সম্প্রতি করোনাকালে জেলার অধিকাংশ শ্রমিকদের পরিবারে খাদ্য প্রয়োজন। তারা বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে সামান্য খাদ্যের আসায়। অথচ সব জায়গা থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে অধিকাংশ শ্রমিকের। এই শ্রমিকদের আয়ের কোনো সংস্থান অদ্যাবধি নেই।
অথচ বছরের ৯৪ শতাংশের বেশির ভাগ সময় নানা রোগবালাইতে ভুগছেন তারা। তাতেই তাদের ঘরের গচ্ছিত টাকা-পয়সা শেষ। এই শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ অধিকাংশ সময়ে অস্থায়ী দিনমজুর হিসাবে কাজ করেন। তবে এই লকডাউনে থমকে গেছে তাদের সংসারের চাকা, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কর্মক্ষেত্র। সেজন্য জেলার অধিকাংশ শ্রমিকের পরিবার খাদ্য ঝুঁকিতে আছে।
এ বিষয়ে শ্রমিক আন্দোলন সাতক্ষীরার সভাপতি ফাইমুল হক কিসলু জানান, দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের নায্য অধিকার ত্রাণ বা খাদ্য সামগ্রী। তবে করোনাকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনপ্রতিনিধিদের মাধমে ত্রাণ সহয়তা মানুষকে অদ্যাবধি দেওয়া শুরু করেননি। অন্য কিছু ক্ষেত্রে দিলেও তা থেকে পূর্বে বঞ্চিত হয়েছেন ভাড়াটিয়া, দিনমজুর ও শ্রমিকরা। এরা যাবে কোথায়? এরাও তো এদেশেই মানুষ, মানব সম্পদ। সরকার সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য এড়িয়ে যেতে পারে না। এদের ত্রাণের ব্যবস্থা সরকার ও জনপ্রতিনিধিদেরকে করতে হবে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন জানান, জেলায় ৩০ টি কনসট্রাকশন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিটি ২৫০ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এর বাইরেও জেলার শহর-গ্রাম-গঞ্জের নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা লাখো লাখো। করোনাকালে নির্মাণ শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সংক্রমণের শঙ্কায় কোনো মালিক এখন নির্মাণ কাজ করাতে চাই না।
ফলে তারা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারি-বেসরকারি খাদ্য সহায়তা বা নগদ অর্থও পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। আমাদের মতো কিছু কিছু কনসট্রাকশন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা নিজ ব্যক্তিগত অর্থায়নের তাদের কিছু কিছু সহায়তা করার চেষ্টা করছি। তবে তাদের সবাইকে তো আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। এমতাবস্থায় তাদের খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের প্রনোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বিষয়টি নিরসনে জয় মহাপ্রভু সেবক সংঘ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি গৌষ্ঠ বিহারী মন্ডল জানান, গৃহবন্দি, করোনাবন্দি আমরা সবাই। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আজ দিশেহারা। তাদের আয় রোজগার তো নেই। বরং বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে জেলা শহরে ঘর ভাড়া নিয়ে খেটে খাওয়া ভাড়াটিয়া বসবাস করছেন।
সরকারের দেওয়া কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পাচ্ছে না। তারাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। শহরে তারা বিভিন্ন কাজে জড়িত থেকে আয়-উপার্জন করতেন। এখন কর্মহীন হয়ে তারা অনেকটা অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত করার দাবি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করেন তিনি ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিকরা জানান, ঘরে চাল নাই, কোনো টাকা নেই, খেতে পারি না, স্ত্রী-পরিজনদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারিনা, বাসা ভাড়া দিতে পারি না, আবার মানুষের কাছে চাইতেও পারি না। এমন পরিস্থিতে করোনা মোকাবিলায় ঘর থেকে বাইরে যেতে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে সরকার। সে মোতাবেক আমাদের ঘর থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
কিন্তু অনাহারে-অদ্ধহারে আমরা দিনপাত করলেও জেলার সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা আমাদের কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছে না। তাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রনোদণার অর্থ ও ত্রাণের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কামনা করেন তারা।
স্থানীয় অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, অবিলম্বে জেলার হাজার হাজার কর্মহীন শ্রমিকের পরিবারদের নিরাপত্তার জন্য সেফটিনেট প্রকল্পের আওতায় কর্মসূচি গ্রহন করা জরুরী।
The post লকডাউনে জেলার হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2Pe13js
No comments:
Post a Comment