নাজমুল হক:
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্বিতীয় দফায় লক ডাউনে পুরো দেশ। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি মুহুর্তেই পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে সমাজের উচ্চ ও মধ্যম শ্রেণির মানুষ। দেশে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫২ লক্ষ ৪৯ হাজার, রোগি সনাক্ত হয়েছে ৭ লক্ষ ৩২ হাজার, মৃত্যু বরণ করেছেন ১০ হাজার ৬৮৩ জন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনায় আক্রান্ত ৬০ বছরের বেশি বয়সী মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৩৪ জন, শতকরা ৫৬ দশমিক ৪৮ ভাগ, ৫১-৬০ বছর বয়সীরা মৃত্যু বরণ করেছেন ২ হাজার ৬২১ জন শতকরা ২৪ দশমিক ৫৩ ভাগ, ৪১-৫০ বয়সী মৃত্যু বরণ করেছেন ১ হাজার ১৯১ জন, শতকরা ১১.১৫ ভাগ।
ঢাকা বিভাগে ৬ হাজার ২৩৭ জন, শতকরা ৫৮ দশমিক ৩৮ ভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৯২৬ জন, শতকরা ১৮.০৩ ভাগ, খুলনায় ৬৫৫ জন, শতকরা ৬ দশমিক ১৩ ভাগ মৃত্যু বরণ করেছেন। অর্থাৎ মৃত্যুহারে ঢাকা বিভাগ শীর্ষে আর বয়সে ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা। তবে ভ্যাক্সিনের প্রথম ডেজ নিয়েছেন ৫৭ লক্ষ ৪৫ হাজার আর দ্বিতীয় ডেজ নিয়েছেন সাড়ে ১৬ লক্ষ ৭৮ হাজার মানুষ।
গত বছর করোনা শুরু হলে মানুষের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক তৈরি হয়। বিশ্বের বড় বড় দেশ করোনার কাছে ধরাসায়ী হয়েছে। লাশের সারি দীর্ঘায়িত হয়েছে। আমাদের দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে সরকার টানা ৫১ দিন লক ডাউন দিয়েছিলো। মানুষের সচেতনতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সর্বপরি সৃষ্টিকর্তার আশেষ কৃপায় দেশে মৃত্যু ও সংক্রামন অনেক উন্নত দেশ থেকে কমেছিলো।
পুরোপুরি ভাইরাস না গেলেও অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, দেশের খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তুা করে লক ডাউন উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। লকডাউন ও করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়েছে লক্ষ মানুষ।
বেকার হয়েছে স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা, টিউশনি হারিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু থেমে ছিলো না শিক্ষার্থীদের বাহিরে যাওয়ার পদচারণা। বিভিন্ন সামাজিক, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সরকারি র্যালিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় হাজির হতে হয়েছে তাদের।
দেশে করোনা সংক্রামিত হওয়ার কি সব আয়োজন করেই আবার বিধি-নিষেধ দেয়া হলো? বিধি-নিষেধ মেনে চললই কোন শ্রেণির মানুষ, কতজন? বস্তুত দেশের সাধারণ মানুষের করোনার ভয় উঠে গেছে। জীবন নাকি জীবিকার প্রশ্নে জীবিকাই অনেকের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে। রোগ হলে তবুও চিকিৎসা হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে কিন্তু পেটে দানা না পড়লে কেউ তো দেয় না, আবার পেটও তো এক বেলার জন্যও শোনে না। তার উপর আছে স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের ঢাকা সিটিতেই করোনা রোগি সনাক্ত ও মৃত্যু হার বেশি, পরে আছে চট্টগ্রামে। সমাজের তিন শ্রেণি যদি (উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত) ধরা হয় তাহলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারে বেশি উচ্চবিত্তে, পরে আছে মধ্যবিত্ত।
অথচ তারাই বেশি সচেতন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ টেলিভিশন ও প্রচার মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধে তারাই সচেতনতার কথা বলছে, কিন্তু মানছেন ঠিক তার উল্টোটা। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি হচ্ছে দেশের অত্যাধুনিক শপিং মলে যাওয়া মানুষদের ভিতর থেকে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় ঝুঁকিতে বেশি পড়ছে। লক ডাউনের পূর্বেই ঢাকা শহরের বড় বড় শপিং মলের অবস্থা সকলে দেখেছে।
এই সব শপিং মলের ক্রেতা নিশ্চয়ই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ নয়। ঐ মানুষগুলোই সচেতনতাই হতে পারতো দেশের মোট মানুষের সচেতনতা। করোনার রেড জোন চিহ্নিত করে এলাকাভিত্তিক লকডাউনই দিন।
দেশের লক্ষ লক্ষ পরিবহন শ্রমিক, দোকানের বিক্রয়কর্মী, মুদি ব্যবসায়ী, দিনমজুর, রিক্সা/ভ্যান/অটোরিক্সা চালক রয়েছে যারা কাজে না গেলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব না। শুধু তাই না, যারা প্রাইভেট চাকরি করেন তাদের কোম্পানি বসিয়ে বসিয়ে কতদিন বেতন দেবে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। উদ্দেশ্যহীন লকডাউন আমাদের সাময়িক স্বস্তি দিলেও তা থেকে সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না।
আবার মাত্র ১৫ দিন লক ডাউন দিলেই দেশ থেকে করোনা দূর হবে তেমনটি নয়। যদি এমন হতো দুই মাস কষ্ট করলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া যাবে তাহলে এই কষ্ট মানুষ মেনে নিতে পারত। কিন্তু সমস্যাটা হলো, আমরা জানি না যে, এই সমস্যা কতদিন চলবে। লক ডাউনে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বপ্ন। লকডাউনে প্রাইভেটকার ও মাইক্রো চলছে নির্বিশেষে, কিন্তু রিক্সা/ভ্যান উল্টে লকডাউন পালন করা হচ্ছে।
উদ্দেশ্যহীনভাবে লকডাউন কোন শ্রেণির মানুষের জন্য সেটিই এখন বড় প্রশ্ন? সরকারের একেক সময়ে একেক সিদ্ধান্তে জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ লকডাউন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সে জন্য এখন থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধীরে ধীরে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু স্বাভাবিক করে দিতে হবে।
বিশেস করে সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই বাস্তবতাগুলো আমরা যত তাড়াতাড়ি মেনে নেব ততই আমাদের জন্য ভালো হবে।
লেখক: নাজমুল হক, আহবায়ক, স্বপ্নসিঁড়ি, সাতক্ষীরা ০১৭৭২-৮৭৬৭৪৪
The post করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এলাকাভিত্তিক লকডাউন appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3tJWn3P
No comments:
Post a Comment