প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) কর্মকর্তা জন ক্লেমেনসের বরাতে প্রতিবেদনটিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে জন ক্লেমেনস জানান, তার ধারণা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখের মতো। যদিও বাংলাদেশের সরকারের দেয়া তথ্যমতে, ৬০ হাজারেরও কম।
‘বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে’ শিরোনামে শনিবার ইকোনমিস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়েছে, বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরবে এমন আশায় এসব অঞ্চলে গত সপ্তাহে জারি করা লকডাউন তুলে নেয়া শুরু হয়। কিন্তু এতে করে করোনায় সংক্রমণ আবার দ্রুত বাড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত সাড়ে ৩ লাখের বেশি এবং প্রায় ৯ হাজার মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান অপেক্ষাকৃত পরিমিত দেখাচ্ছে। তবে অনেকে আক্রান্ত হলেও গণনার বাইরে।
বর্তমানে প্রতি দুই সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। কিছু মডেলের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে আগামী জুলাইয়ের শেষের দিকে করোনা সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাবে। সেসময় সরকারি হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ এবং মৃত্যু দেড় লাখ হতে পারে।
কম হারে করোনা টেস্ট করার অর্থ প্রকৃত পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ হতে পারে। পাকিস্তানে এক বিদেশি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, সরকারের দেয়া করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান বাস্তবে দুই থেকে তিন গুণ বেশি।
এছাড়া পাকিস্তানের চিকিৎসকদের ভাষ্য, দেশটির সরকার হাসপাতালগুলো পর্যাপ্তসংখ্যক বেড আছে বলে যে দাবি করছেন তা ভিত্তিহীন।
এদিকে মুম্বাইয়ের ৪ বছর বয়সী এক নার্স বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে কোন ধরনের ছুটি ছাড়া ১২ ঘণ্টার ডিউটি পালন করে যাচ্ছেন। মে মাসে তিনিও করোনায় আক্রান্ত হন।
ইতিমধ্যে দেশটির রাজধানীর কমপক্ষে ৬০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের ৩২৯ জনই দেশটির শীর্ষ মেডিকেল গবেষণা প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের।
ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, একটু বেশি হাঁচি হলেই তারা (ধনীরা) চিকিৎসা নিতে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর অথবা ভারতে যেতেন। কিন্তু বর্তমানে করোনার চিকিৎসা বা অন্যান্য অসুস্থতা নিয়েও দেশের অভিজাত হাসপাতালগুলোতেও ভর্তি হওয়া প্রায় অসম্ভব।
ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মর্গ, কবর স্থান এবং শ্মশানঘাটে জায়গা খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারায়ণগঞ্জের এক পৌরসভার কবরস্থানে অন্য স্বাভাবিক সময়ে ২৫০ জনের মতো মানুষকে দাফন করা হয়।
কিন্তু গত মাসে ওই কবরস্থানে ৫৭৫ জনকে দাফন করা হয়। তবে সরকারি হিসেবে এদের মধ্যে কেবল ৭০ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন বলে
হিসাবে ধরা হয়।
বাংলাদের চট্টগ্রামে কবরস্থানে খননের কাজ করা ফরিদ উদ্দিন বলেন, তিনি ও তার দলের সদস্যরা গত চার দিন ধরে তেমন ঘুমের একটা সময় পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাদের মাফ করে দেন এবং এই রোগ তুলে নেন।
প্রসঙ্গত করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ লাখ ছাড়িয়েছে। আর প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার।
জনস্ হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৫ জনের।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৩২ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪০ হাজার ৩৪৪ জনের। আর আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৪ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরের স্থানে রয়েছে ব্রাজিল আর মৃতের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৪১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩৪ হাজার ২১ জনের।
The post ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: শুধু ঢাকাতেই করোনায় আক্রান্ত সাড়ে ৭ লাখ মানুষ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2AK1haF
No comments:
Post a Comment