আশাশুনি ব্যুরো: আশাশুনির খাজরা ইউপি’র আ’লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের মৃত পিতা মোজাহার উদ্দিন সরদারকে রাজাকারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে আবেদনের তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রæয়ারি মাসে সমাজ সেবা অফিসার উপজেলার রাজাকারের তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমের পিতাকে রাজাকার হিসাবে তালিকাভুক্ত করে প্রতিবেদন প্রদান করেন। সে অনুযায়ী তালিকায় মৃত মোজাহার সরদারের নাম থাকায় খাজরা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত গড়ায় এবং ১৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি রাজাকার নন বরং সহযোগি মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আদেবন করেন।
এছাড়া ২০১০ সালে খাজরা ইউনিয়নের গেজেটভুক্ত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুসসহ ৫২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা উক্ত মোজাহার সরদার একজন সহযোগি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মর্মে লিখিত প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেছিলেন। উক্ত প্রত্যয়নপত্রে ২নং ক্রমিকে মোজাহার উদ্দীন সরদারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বাদী রুহুল কুদ্দুছের স্বাক্ষর রয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয় হতে জেলা প্রশাসক হয়ে ইউএনও আশাশুনিতে পৌছলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে সমাজ সেবা অফিসার, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হান্নান, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার লিয়াকত আলী ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল করিম সরদারকে সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরই মধ্যে রুহুল কুদ্দুছ ইউএনও বরাবর পৃথক আবেদন করেন যেন তাকে (মোজাহার) রাজাকার তালিকা থেকে বাদ না দিয়ে বহাল রাখা হয়। তদন্ত কমিটি বাদী ও বিবাদী পক্ষকে তদন্তের নোটিশ করলে রোববার রুহুল কুদ্দুছ একমাত্র মুক্তিযোদ্ধাসহ ৮-৯ জন সাধারণ মানুষ তদন্তকালে উপস্থিত হয়ে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। সোমবার এলাকার অর্ধ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী-সন্তানরা তদন্তকালে উপস্থিত হন এবং ৩৫-৪০ জনের জবানবন্দি গ্রহন করা হয়। এব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তাবৃন্দ বলেন দু’দিন পৃথক পৃথকভাবে উভয় পক্ষের স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের লিখিত জবানবন্দিসহ তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও মহোদয়ের কাছে প্রদান করা হবে।
তদন্ত অনুষ্ঠান শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা দীনেশ মন্ডল, মোজাম্মেল হক, আব্দুল হাকিম, হায়দার আলি, আব্দুর রউফ, আব্দুল আজিজ, মোজাম্মেল হোসেনসহ বহু মুক্তিযোদ্ধা আশাশুনি প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে জানান, আমরা ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তখন পাকিস্থানপন্থী কিছু লোক ছিল, যারা আজও দেশ বিরোধী কার্যকলাপে সোচ্চার ও আ’লীগ রিরোধী। চেয়ারম্যান ডালিমের পিতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সময় বহু বার চাল-ডাল, হাঁস-মুরগি, নগদ টাকা ও কাপড় চোপড় দিয়ে কাজলনগর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সার্বিক সহযোগিতা করতেন। তিনি একদিন রহমত উল্লাহ দাদু ভাই, লে: আরিফিন, বাবর ভাই, আবুল কালাম, যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল বারী, মজিদ ভাই ছিলেন, এসময় এক ভদ্রলোক নৌকা ভরে চাল, ডাল, খাদ্য নিয়ে হাজির হলেন। পরে জানলাম তিনিই মোজাহার উদ্দীন সাহেব। খুলনা হোটেলে থাকতাম, সেখানে মোজাহার সাহেব কাপড় চোপড় নিয়ে হাজির হন। এছাড়া অসংখ্য বার তাকে সহযোগি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কাজ করার স্বাক্ষী আমরাই। কিন্তু চেয়ারম্যান ডালিম যুবক ও অবিবাহিত অবস্থায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নাম ও যশে ঈর্ষান্বিত হয়ে পাকিস্থানপন্থী চক্রটি তথা প্রতিপক্ষরা তাকে ও তার পিতাকে রাজাকার বলে বিভিন্ন অপপ্রচার এবং বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে। বিশেষ করে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক যাতে চেয়ারম্যান ডালিম না পায় সেজন্য তারা বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক মিথ্যাচার করে অভিযোগ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের এহেন ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা মিথ্যাচারকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।
তদন্তের সময় প্রতিপক্ষ স্বাক্ষ্য প্রদানের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাউকে হাজির করতে পারেননি। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম জাল স্বাক্ষর করে তারা আবেদন করেছিল। তারা বলেন, আমরা স্বাক্ষ্য প্রদানকালে প্রকৃত সত্য কথা বলেছি। মুক্তিযোদ্ধারাই বলতে পারেনকে মুক্তিযোদ্ধা ও কারা রাজাকার। তারা প্রতিপক্ষের ঘড়যন্ত্রকে রুখে দিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
The post আশাশুনিতে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত পিতার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3kNvEBE
No comments:
Post a Comment