Sunday, September 26, 2021

আশাশুনিতে শ্রমজীবি শিশু ও কিশোর আশরাফুলের জীবন সংগ্রামের গল্প https://ift.tt/eA8V8J

বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য পাওনা থেকে

কৃষ্ণ ব্যানার্জী: জন্মের পর থেকে চার থেকে পাঁচবার বাবাকে দেখেছি। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সৌভাগ্য হলেও পঞ্চম শ্রেণীর গন্ডি পার করতে পারিনি অভাবের তাড়নায়। মায়ের মুখে শুনেছি জন্মের ৬মাস আগে থেকেই বাবা অন্য একজনকে বিয়ে করে খুলনা তে বসবাস করে। মা জামিলা বিবি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে চার ভাই বোনকে নিয়ে অতি কষ্টে দিন চালান। সাত বছর বয়সে শুরু হয় আমার নরসিংদীর একটি ইটভাটায় কাজ। আমি শিশু তাই ছয় মাসের ৬হাজার টাকার বিনিময় শুরু করলেও ভাটা সর্দার মাত্র ৩হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে দেন।

 

এরপর দ্বিতীয় বছর থেকে কুমিল্লা জেলার একটি ইটের ভাটায় ৪০ হাজার টাকা ছয় মাসের চুক্তিতে কাজ করি। বাকি ছয় মাস এলাকায় এসে ভ্যান চালায়। বলছি শ্রমজীবী শিশু কিশোর আশরাফুল গাজীর (১২)কথা। চার ভাইবোনের মধ্যে আশরাফুল সকলের ছোট। বড় ভাই বিয়ে করে অলাদা আর বড় বোন ইতোমধ্যে বিয়ে হয়ে অন্যের বাড়িতে চলে গেলেও মেজ ভাই আরিফুল প্রতিবন্ধী। ফলে মা এবং প্রতিবন্ধী ভাইকে নিয়ে চলছে জীবন সংগ্রামের যুদ্ধ।

আরিফুল তার কষ্টের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদককে জানান, ছোটবেলায় মা বাবার আদর নিয়ে যখন সবাই লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকে তখন আমি ইটের ভাটায় কাজ করতে যাই। আমি শিশু হওয়ায় সেখানেও পদে-পদে লাঞ্চিত হই। বাড়িতে এসে অন্যের পোল্টি ফার্মে কাজ করি। এরপর দোলাভাইয়ের সহযোগিতায় একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান চালিয়ে এবং বালি পরিবহন করে অতি কষ্টে দিন পার করছি। রাতে ঘুমালে বুকে এবং মাজায় প্রচুর ব্যথা করে। সারারাত ছটফট যন্ত্রণার পরেও সকালে উঠেই শুরু হয় জীবন সংগ্রামের যুদ্ধ।

শুধু আশরাফুল নয় আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ আলী, আরাফাত হোসেন, আমির হামজাসহ অসংখ্য শিশু শ্রমিক হোটেল, লেদ, ওয়েল্ডিং, মটর গ্যারেজ, গৃহ নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এসব শ্রমজীবী শিশু কিশোররা হাড় ভাঙা পরিশ্রম করেও পায় না তাদের ন্যায্য বেতন। এমনকি তাদের চোখের সামনে খাজরা গ্রামের শাহীনের দুটি আঙুল কাজ কেটে পড়ে গেলেও ক্ষতিপুরণ পায়নি সে।

খাজরা গ্রামের ভাটা শ্রমিক সর্দার আমিরুল ইসলাম জানান, তার এলাকা থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকের পাশাপাশি শিশুদেরকে শ্রমিক হিসাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। বয়স্কদের ছয় মাসে ১ লক্ষ ২০হাজার টাকা চুক্তিতে নিয়ে গেলেও শিশুদের দেওয়া হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, আমরা কাজ করে গোসল করে ওঠার পরেও তাদের কাজ শেষ হয়না। কারণ তাদের বিভিন্ন সরঞ্জাম পরিষ্কার করে রাখতে হয়। তার পরেও তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত থাকে সব সময়।

জেলার বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থার তথ্যনুযায়ী, ২০১৫ সালের বেজলাইন সার্ভে পর জেলায় শ্রমিক বা শিশু শিশুদের কোন সার্ভে না করায়। কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের তথ্যনুযায়ী সাতক্ষীরার মোট শিশুর মধ্যে কর্মজীবী বা শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৫ শতাংশ। অন্যদিকে, জেলার সাতটি উপজেলায় মোট শিশুর সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে ১২ লাখ। সে হিসাব অনুযায়ী সাতক্ষীরায় ৬০ হাজারের অধিক শিশু সরাসরি বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। জেলার কয়েক লাখ শ্রমিকের স্বার্থ দেখার কেউ নেই। উন্নতির সুফল পাচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিতরা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা বরাবরই রয়েছেন অবহেলিত। এ অবহেলার সুযোগ নিয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শিশুরাও নিয়োজিত হচ্ছে শ্রমিক হিসেবে।
আশাশুনি হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদেষ্ণা রানী সরকার জানান, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের দিয়ে ইটেরভাটা সহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন মাজার হাড়ক্ষয়,হার্ডের সমস্যা, শ^াসকষ্ট, বুকে ব্যথা, অপুষ্টিজনিত সমস্যাসহ মারাত্মক রোগে অক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন খান জানান, করোনাকালীন সময়ে শ্রমজীবি শিশুদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। যারা বাকি রয়েছে তাদের পরবর্তীতে দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, সরকারিভাবে শিশুশ্রম একে বারে নিষিদ্ধ। তবে এলকার অনেক শিশুরা ইটের ভাটায় কাজ করতে যাওয়ার কথা শুনেছি। তবে তাদের সাথে কোন আচরণ মালিক পক্ষ খারাব করে তাদের অভিযোগ পেলে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

The post আশাশুনিতে শ্রমজীবি শিশু ও কিশোর আশরাফুলের জীবন সংগ্রামের গল্প appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3i8Ytql

No comments:

Post a Comment