Wednesday, September 29, 2021

নারী শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করতে হবে https://ift.tt/eA8V8J

কৃষ্ণ ব্যানার্জী: বিয়ের তিন বছরের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র পুত্রকে জড়িয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর ভাইয়েরা কেউই দাযত্বি না নেওয়ায় পৃথিবীটা যেন শূন্যের মরুভূমিতে পরিণত হয়।

তাই স্বামীর মৃত্যুর মাত্র দেড় মাস পর থেকে শুরু হয় অন্যের ক্ষেত খামারে দিনমজুরির কাজ। প্রথমেই অল্প বয়সে শিশু সন্তান থাকায় কাজে নিতেন না অনেকেই। বলতো তোর কোলে শিশু বাঁচ্চা তুই কি কাজ করতে পারিস বলে অনেকেই তাড়িয়ে দিত। অন্য নারী শ্রমিককে সকাল ৮ থেকে ১টা পর্যন্ত ১৬০ টাকা দিলেও আমাকে দেওয়া হত একশত টাকা। বলছি ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত নারী দিনমজুর পার্বতী গাইন (২৭) এর কথা। বাবার অভাব-অনটনের কারণে কোনো রকম এসএসসি পাশের পর আশাশুনি উপজেলার তুয়ারডাঙ্গা গ্রামের পবিত্র গাইনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় ২০১৩ সালে। বিয়ের তিন বছর পর দেড় বছরের বয়সের ছেলে পৃতমকে রেখে ঢাকায় একটি এনজিওতে চাকরি করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় স্বামী। আর স্বামীর মৃত্যুর পর শুরু হয় বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতা।

শুধু পার্বতী নয়, আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শতশত নারী রয়েছে যারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেমন চাপড়া গ্রামের জাহানারা খাতুন, ফাহিমা খাতুন, পারভীন সুলতানা, জাকিয়া, ফতেমা, রতœা , মোসলেমা, জোসনাসহ অসংখ্য নারী রয়েছে যারা দিন মজুর, শ্রমিক হোটেল, কৃষক শ্রমিক, গৃহ নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। কিন্তু এসব শ্রমজীবী নারী শ্রমিকরা হাড় ভাঙা পরিশ্রম করেও পায় না তাদের ন্যায্য বেতন। এছাড়া গার্মেন্টস খাতে ৩০ শতাংশ নারী শ্রমিককে এখনও শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। পদোন্নতির পাশাপাশি বৈষম্য রয়েছে মজুরির ক্ষেত্রে। এই খাতে কর্মরত বেশিরভাগ নারী শ্রমিক মজুরি বৈষম্যের শিকার।

অ্যাকশনএইড পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, জীবনধারণের উপযোগী মজুরির মাত্র ১৪ শতাংশ পান বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম। চীনের শ্রমিকেরা জীবনধারণের উপযোগী মজুরির ৩৪ শতাংশ পান। ভারত, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনে এই হার যথাক্রমে ২৭, ৩৯ ও ৩২ শতাংশ। যখন এই জরিপ করা হয় তখন বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশ্রমিকের নিম্নতম মজুরি ছিল ৩ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে গঠিত মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে করে ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে বর্তমান বাজারে কোনো শ্রমিকের পক্ষে জীবনধারণ করা সম্ভব নয়।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা¬ বলছেন, সরকারি উদ্যোগে ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক খাতে। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নিরসন, শিশুশ্রম নির্মূল করা, নারী ও পুরুষ শ্রমিকের বেতনবৈষম্য দুর করাসহ সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল কেবল প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরাই পেয়ে আসছেন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রম আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কোনো কর্তৃপক্ষই নেই। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে লাইসেন্সের আওতায় এনে নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।

জেলা শ্রমিক আন্দোলন সাতক্ষীরার আহবায়ক ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, কষ্টের বিষয় জেলায় শ্রমিকদের কোন ডাববেজ নেই। জেলায় ৫-৬লক্ষ শ্রমিক বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। এরমধ্যে ৩০ থেকে ৪০% নারী শ্রমিক বিভিন্ন খাতে কাজ করছে। করোনা কালিন সময় তারা নানা প্রতিকূলতা মধ্যে পার করছে। তাছাড়া জেলা জুড়ে জলাবদ্ধতা কারতে অনেকে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জেলায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য শোভন কর্ম পরিবেশ বিষয়ে কেউ মানেনা এবং প্রশসানের পক্ষ থেকে কোন প্রকার তদারকি দেখি না।

জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম বলেন,মানুষের মৌলিক অধিকার তার শ্রমের মর্যদা ও কাজের ন্যায্য মজুরি পাওয়া। এটা থেকে যারা বঞ্চিত করে সেই সমাজ মানুষকে মূল্যায়ণ করেনা। শ্রমের মূল্যটা ধর্মীয় ভাবে ও সমাজিক ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। যে কোন কল্যানকর রাষ্ট্রে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি তার অধিকার। এটা প্রতিষ্ঠিত করা প্রত্যেক সমাজের কাম্য।

জেলা বাস মালিক সমিতির আহবায়ক অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি তাদের অধিকার। তার যদি ন্যায্য মূল্য না পায় তাহলে তাদের পরিবার ও ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবেনা। আমি শ্রমিকদের পক্ষে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। তিনি আরও বলেন, শোভন কাজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেয়, সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করে, অর্থনীতিতে গতি আনে ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। ন্যায্য মজুরি বাস্তবায়ন করা গেলে শ্রমিকের জীবন মান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে আয় বৈষম্য কমানো সম্ভব।

The post নারী শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করতে হবে appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2Y28a2p

No comments:

Post a Comment