Saturday, September 25, 2021

নবাব বাহাদুর https://ift.tt/eA8V8J

সেলিম ইসলাম খান
নবাব আবদুল গনি ও খান বাহাদুর আহসান উল্লাহর টাকায় নতুন ভাবে সুপেয় পানির লাইন টানা হচ্ছে পুরো ঢাকা শহরে। আটাত্তর সালের চব্বিশে মে ঢাকার কমিশনার জন পিকক এলেন নবাবের দরবারে। তিনি বললেন, পুরো শহরে পানি সরবরাহের লাইন টানা শেষ এখন আপনি এর উদ্বোধন ঘোষণা করলে আমরা পানি সরবরাহের কাজ শুরু করব।
আবদুল গনিঃ শুরু করে দাও। পানির জন্য অযথা একদিন দেরিও ভুক্তভোগীর কাছে অসহনীয়।
পিককঃ কিন্তু আমার কাছে গভর্নর সাহেবের ফরমান আছে। আপনি যতক্ষণ এটার উদ্বোধন ঘোষণা না করবেন, ঢাকাবাসী কেউ পানি পাবে না। অনুষ্ঠানের তোলা ছবি তাকে পাঠাতে বলেছেন।
আবদুল গনিঃ কি মুশকিল! সামান্য পানির লাইন, তার আর আবার উদ্বোধন! এই লাল সাহেরদের সব কাজে ঢাকঢোল পিটানো আমার একদম পছন্দ না। কি আর করা মানুষের সুবিধা বিবেচনায় এটা দ্রæত চালু করা দরকার। তুমি আজই আয়োজন কর। আমি বিকাল বেলা এর উদ্বোধন করব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী মার্কার ডেভিডও এসেছেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বললেন, আজ নবাব বাহাদুরের আর্থিক সাহায্যে আমরা ঢাকাবাসী আবারও সুপেয় পানি পাওয়া শুরু করব। এজন্য নবাব বাহাদুরকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দু বছর আগে তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির কাছ থেকে বরাহ নগর থেকে একটি জাহাজ ক্রয় করেছেন। জাহাজটি তিনি কি কাজে ব্যবহার করছেন তাকি আমরা সবাই জানি?
উপস্থিত সকলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হলে তিনি বললেন। জাহাজটি তিনি ক্রয় করেছেন বরিশালে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া মানুষদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর জন্য। আমি প্রথমে শুনে অবাক হয়েছিলাম। এত দামি জাহাজ ব্যবসার কাজে না লাগিয়ে ত্রাণ বিতরণের জন্য অনুদান দেয়া কি সঠিক হল? হ্যাঁ, এটা চিন্তা করতে পারেন কেবল একজন। তিনি নবাব বাহাদুর আবদুল গনি সাহেব।গভর্নর ইতিমধ্যে নবাব বাহাদুরের বড় সন্তান আহসান উল্লাহকেও নবাব বাহাদুর হিসেবে সম্মানিত করেছেন। আজ এই পানি সরবরাহে নবাব আহসান উল্লাহও অর্থসাহায্য দান করেছেন, সেজন্য তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আশাকরি এখন ঢাকাবাসী নিরবচ্ছিন্ন পানির সংযোগ পাবেন।
নবাব আবদুল গনিঃ উপস্থিত ঢাকাবাসী! পিকক সাহেব আমাকে নবাব বাহাদুর হিসেবে সম্মান দেখালেও আমি নিজেকে আপনাদের একজন নগণ্য খাদেম বলে মনে করি। আমি আশা করি এবার আপনাদের পানির সমস্যা সমাধান হবে। আপনারা দোয়া করবেন যেন আমি আমৃত্যু আপনাদের ভাই হয়ে, বন্ধু হয়ে আপনাদের সেবা করতে পারি। আপনাদের মঙ্গল হোক।
নবাব আহসান উল্লাহঃ প্রিয় ঢাকাবাসী। আমাদের পানির চাহিদা দূর হলেও আলোর চাহিদা এখনো মেটেনি। আমি চাই, ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় কলকাতা শহরের মতো গ্যাসবাতি জ্বলুক। সেজন্য আমি যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাব। আপনাদের দোয়ায় আশা করি শীঘ্রই ঢাকার রাস্তায় গ্যাসবাতি জ্বালাতে পারব।
এর পাঁচ বছর পর নবাব আবদুল গনি সপরিবারে সাভার বাইগুনবাড়িতে বনভোজনে এসেছেন। নবাব বাড়ির আয়া খানসামা থেকে শুরু করে নবাবীর সব নায়েব, গোমস্তা, খাজাঞ্চি ও বরকন্দাজ সকলকে তিনি এই বার্ষিক বনভোজনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বেগুনবাড়ির চা বাগান সত্যিই এক মনোমুগ্ধকর এলাকা। ঢালু জমিতে সবুজ চা গাছগুলো উপস্থিত সকলের মনে আনন্দের সঞ্চার করেছে। বেগুনবাড়ির চা বাগানের পর শুরু হয়েছে বিশাল অভয়ারণ্য। নবাব আবদুল গনির গড়ে তোলা এই অভয়ারণ্যে বড়লাট হতে শুরু করে বৃটিশ যুরবাজও শিকারে এসেছেন। সবাই এই চা বাগান ও অরণ্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
নবাব আবদুল গনি বেগুনবাড়ির খাজাঞ্চিকে ডেকে বললেন, খাজাঞ্চি! এবছর কেমন চা উতপাদন হল এখান থেকে?
খাজাঞ্চিঃ মহামান্য এ বছর এ পর্যন্ত বিশ হাজার মণ চা উত্তোলন করেছি আমরা। এর মধ্যে তের হাজার তিনশত পঁচাশি মণ চা কলকাতায় রপ্তানি হয়েছে। গতবছর চার হাজার সাতশো নয় কেজি চাপাতা কলকাতায় রপ্তানি হয়েছিল এবছর সে তুলনায় চার গুণ বেশি হবে বলে আশা করছি আবদুল গনিঃ মাশাআল্লাহ বেশি ভালো উতপাদন হচ্ছে ঃনবাব জামাতা খাজা আসগর আলী বললেন, বাবা আহসান ভাইতো নবাবীর পাশাপাশি ডেপুটি মাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। আশা করছি, এতে করে তিনি জনসেবায় আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে পারবেন।
আবদুল গনিঃ মাশাআল্লাহ! তাকে অভিনন্দন। ইনশাআল্লাহ সে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আসো আসো আর কথা নয়, এবার রান্নাবান্না শুরু করা যাক।
নবাবপতœী ইসমাত বললেন, এতদিনতো আপনারা আমাদের হাতে তৈরি খাবার খেয়েছেন। আজ বনভোজনে আমরা আপনাদের হাতে তৈরি খাবার খাব। দেখা যাক, তা খাবার উপযোগী হয় কিনা!
আবদুল গনিঃ কেন, আমাদের রান্না খাবার উপযোগী হবে না কেন?
ইসমতঃ বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।
আবদুল গনিঃ তার মানে তোমরা আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছ। ঠিক আছে, ওয়াজির আলী, আসগর আলী, ইউসুফজান, মমতাজ তোমরা সকলে তৈরি হও। আজ আমরা সবাই মিলে এমন রান্না করব। তারা অবাক হয়ে যাবে।
ইসমতঃ হুম দেখা যাবে। অবাক হই নাকি, সবাক হই।
আব্দুল গনিঃ খাবার পরে কুস্তি আর কাবাড়ি খেলা হবে। যারা জিতবে তারা ভাল মানের পুরস্কার পাবে।
আসগরঃ আমি ঘোড় দৌড় ও তীরন্দাজিতেও অংশ নিতে চাই।
মমতাজঃ আমিও ঘোড় দৌড় আর শিকার প্রতিযোগিতায় অংশ নেব নানাাভাই।আবদুল গনিঃ আর আমার প্রিয় দাদাভাই সলিমুল্লাহ বাহাদুর কি শিকারে যেতে চায় না?
সলিমুল্লাহঃ হরিণ শিকার আমার ভাললাগে না দাদাভাই। নিরীহ প্রাণীর গায়ে তীর বিঁধলে আমার কষ্ট হয়। আমি সাদুল্লাপুর অভয়াবণ্যে যেতে চাই। ওটা আমার বড় বাবা বানিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হরিণ, ময়ূর, বন মোরগ, তিতির, খরগোস ইত্যাদি পালন করতেন। ওখানে গেলে কি আমি তার দেখা পাব দাদাভাই?
আবদুল গনিঃ ওখানে তিনি অভয়ারণ্য তৈরি করেছেন। কিন্তু তিনি এখন সেখানে নেই। তিনি আল্লাহর মেহমান হয়ে তাঁর কাছে চলে গেছেন।

 

The post নবাব বাহাদুর appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3oaCWkO

No comments:

Post a Comment