Monday, September 6, 2021

পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে, দেখার কেউ নেই! https://ift.tt/eA8V8J

বেতনা, মরিচ্চাপ নদীসহ ৮০টি খাল পূন:খননের প্রকল্প চলমান বললেন জেলা প্রশাসক
ইব্রাহিম খলিল: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা, আগরদাড়ি, ঝাউডাঙা, ফিংড়ি, ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন ও সাতক্ষীরা পৌরসভার মাঠপাড়া, উত্তরকাটিয়া, মাগুরা, পলাশপোল, মাছখোলা, সুলতানপুর ঝিলপাড়া, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে অন্যান্য বছরের মত এবারো ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গত ২৭ জুলাই থেকে চারদিনের টানা বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। দুই মাসের বেশি সময় ধরে এই অবস্থা থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই। রোদে শুকানো ছাড়া পানি কমানোর কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার পরিস্থিতি আরো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আগামী জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারি মাসের পূর্বে অধিকাংশ মানুষকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে জানান এলাকার মানুষ। কয়েকটি স্থানে পাম্প মেশিন স্থাপন করা হলেও তার খুব বেশি সুফল পাচ্ছে না ভূক্তভোগী মানুষ।

বিনেরপোতা থেকে মাছখোলা পর্যন্ত নদীর তীরে ও বুকে চর দখল করে অসংখ্য ইটভাটা, অবৈধ স্থাপনা ও মৎস্য ঘের। ফলে বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে পুরো এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা চেয়েছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ বাড়ির রান্নাঘর-উঠান পানিতে তলিয়ে আছে। পুকুর ভেসে সব মাছ বের হয়ে গেছে। গোয়ালঘরে পানি। হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু সব রাস্তায়। সড়ক থেকে বাড়িতে যাতায়াতে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে।
মধ্য মাছথোলা গ্রামের মোছা: আয়েশা বেগম বলেন, দুই মাস ধরে বৃষ্টির পানি সরছে না। বৃষ্টি যখনই হয় পানি আরও বেড়ে যায়। আমার ঘরের মধ্য হাঁটুপানি। ঘরের বাইরে বের হলেই পানি। প্রতিটি পরিবারে সর্দি-জ্বর লেগেই আছে। ভিডিও করে কোন লাভ নেই, কিছুই হবে না, গ্রামে গ্রামে টাকা তুলে মটরপাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনেও লাভ হচ্ছে না।

 

 

একই এলাকার রাবেয়া বেগম বলেন, আমরা গত দুই মাস যাবত এভাবেই পানিবন্ধি হয়ে আছি। পানির কারণে ঘর থেকে বের হবার সুযোগ নেই। রান্নাঘরে জলাবদ্ধতায় রান্না করারও পরিবেশ নাই। অনেক কষ্ট করে রান্না করতে হয়। এভাবে ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে জীবনযাপন করা কষ্টকর। ছোট বাচ্চাদের নিয়েও সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। ঘর থেকে বের হলেই পানি। ওঠানে এখনো হাটুপানি। গত দুই মাস যাবত প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছি আমরা।
বদ্দিপুর এলাকার গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, দৈনন্দিন কাজের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানিতে হাটলে চুলকানি হচ্ছে। পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ এসব এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য আশ্বাস দিলেও পানি নিষ্কাশন করেনি। বর্তমানে কোনো জনপ্রতিনিধিদেরও এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও নেই কোন সুবিধা। সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় পৌরসভার নিম্নাঞ্চলগুলো। সাতক্ষীরা পৌরসভার পানি বের হওয়ার এক মাত্র পথ প্রাণসায়ের খাল। যেটা কিছুদিন আগে খনন করা হয়েছে। তবে সে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। যদি পানি নিষ্কাশন না করা হয় তাহলে আমাদের চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। একই সাথে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে খাল ও ঘের মালিকদের দেওয়া অবৈধ নেট-পাটা অপসারণের জন্য স্থাপনকারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা এখনো নেট-পাটা অপসারণ করেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

 

জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমাদের বেতনা, মরিচ্চাপ নদী সহ ছোট্ট বড় প্রায় ৮২টি খাল পূন:খননের তিন বছর মেয়দী একটি প্রকল্প চলমান আছে। তবে এই অর্থবছরেও সেই প্রকল্পের পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শিঘ্রই কাজ শুরু হবে। এবং এই বেতনা, মরিচ্চাপ এবং খালের পলি অপসারণ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করা যায় তাহলে সাতক্ষীরা শহর তথা জেলার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে এবং জলাবদ্ধতা দূর হবে। একই সাথে সাতক্ষীরা শহরে এখনো যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা আছে সেসব স্থানে পৌরসভা থেকে পানি পাম্প মেশিনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, অল্প কয়েক দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করতে পারব এবং বড় আকারে এই নদীগুলো যদি খনন শুরু হয়। তবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির একটি স্থায়ী সমাধান আশা করছি।

The post পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে, দেখার কেউ নেই! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3yQbBGf

No comments:

Post a Comment