শ্যামনগর প্রতিনিধি: ঘড়িতে সময় সকাল নয়টা বেজে সাত মিনিট। বুকে বই খাতা চেপে আর কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে ঠাঁয় দাড়িয়ে শিশুরা। দ্বিতল ভবনের দোতলায় ওঠার মুল প্রবেশপথের তালা না খোলার কারনে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি তারা।
অথচ করোনা প্রভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিদ্যালয় খোলায় এসব শিশু শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে রীতিমত ব্যাকুল। তালাবদ্ধ কলাপসিপল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে খুনসুটিতে ব্যস্ত শিশুরা জানায়, ‘চাবি হেড স্যারের কাছে, এখনও স্যার আসিনি, তাই আমরা ক্লাসে যাতি পারতিছি নে’।
নাম, পরিচয় আর পাঠের শ্রেণিসহ নানা বিষয়ে শিশুদের সাথে আলাপচারিতায় ঘড়ির কাটা আরও ১৪ মিনিট সামনে এগিয়ে যায়। এসময় অ-ধর্য্য হয়ে ওঠা নারী অভিভাবক রওশানারা বেগম এগিয়ে এসে বলেন, স্যারকে ফোন দেন। নিজ সন্তানকে বিদ্যালয়ে পৌছে দিতে আসা ঐ অভিভাবক আরও বলেন, স্যারের ফোন বন্ধ থাকলে গোলাম মাহমুদ স্যারকে ফোন দেন। তার কথা শেষ হতেই পাশে দাড়ানো পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আলী আযম জানায়, ‘মাহমুদ স্যার এখনও চাষ থেকে ফিরিনি’।
এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের তালাবদ্ধ গেটের ছবি তুলতেই দুজন নারী এগিয়ে এসে নিজেদের একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে পরিচয় দেন। বিদ্যালয় খোলার সময় অতিক্রান্ত হওয়া সত্তে¡ও শিশুদের বাইরে দাড় করিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে চাবি তাদের কাছে থাকে না বলেও জানান। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ অপর শিক্ষককে মুটোফোনে খবর দেয়া হয়েছে জানিয়ে অপেক্ষমান দুই শিক্ষিকা বলেন, চাবি হেড স্যার ও গোলাম মাহমুদ স্যারের কাছে থাকে। তাই ওনারা না আসা পর্যন্ত স্কুল খোলার কোন সুযোগ নেই’।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালে শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর ইউনিয়নের ১৪৮নং হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই ও সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মাহমুদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে সদ্য খোলা বিদ্যালয়ে এসেও ক্লাসে ঢুকতে পারেনি শিশুরা।
তামিম ইকবাল নামের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র জানায়, মায়ের সাথে বিদ্যালয়ে আসে সে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও চাবি না থাকায় শ্রেণিকক্ষে না বসিয়ে দিয়ে গৃহস্থলীর কাজের কারণে বাড়িতে ফিরে গেছে তার মা। প্রায় একই কথা শোনায় অরও কয়েক শিশু।
এসব শিশুরা জানায়, সকাল নয়টায় বিদ্যালয় খোলার নির্দেশনা থাকায় তারা একটু আগেই এসেছিল। কিন্তু প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এসে গেট খোলার ব্যবস্থা না নেয়াতে তারা বাইরে অপেক্ষা করেছে। দুইজন শিক্ষকই পারিবারিক চাষাবাদের কারনে বিদ্যালয়ে আসতে দেরী করছে বলেও তারা সুনির্দিষ্ট করে তথ্য দেন।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের প্রভাব কাটিয়ে সরকারি ঘোষণায় গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের অপরাপর অংশের মতো শ্যামনগরের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ দেড় বছরের ঘরবন্দি জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা শিশুরা তাই বিদ্যালয়ে আসার আনন্দে মাতোয়ারা। কোমলমতি শিশুদের বরণে উপজেলার অসংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নানামুখী উদ্যোগ নিতে দেখা গেলেও উল্টো অবস্থার দেখা মিলেছে ১৪৮ নং হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিশুদের প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে শ্রেণিকক্ষসহ বিদ্যালয়কে যেমন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়নি, তেমনী লম্বা সময় পরে বিদ্যালয়ে ফেরা শিশুদের বাইরে দাড় করিয়ে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের আনন্দকে ¤øান করা হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমুহ খোলা রাখার কথা। নয়টা ৪০ মিনিট থেকে শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের সুচি থাকলেও নয়টায় শিশুদের জন্য শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তা লংঘন করেছে।
নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয় না খোলাসহ দীর্ঘক্ষণ শিশুদের বাইরে দাড় করিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক গোলাম মাহমুদ বলেন, বাড়িতে একটু কাজ করতে যেয়ে দেরী হয়ে গেছে। আমার বিদ্যালয়ে পৌছাতে দেরী হবে সে কথা আমি হেডস্যারকে জানিয়েছিলাম। এর বেশি কথা না বলেই তিনি ফোনের সংযোহ বিচ্ছিন্ন করে তা বন্ধ করে দেন।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন, হেঁটে আসতে যেয়ে একটু দেরী হয়েছে। যেসব ছবি তুলেছেন ওগুলো ছাপার দরকার নেই। সামনের দিনগুলোতে যথাসময়ে ক্লাস খোলা হবে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন জানায়, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে পরের মিটিং-এ আলোচনা করা হবে। তদন্তে কোন কমিটি গঠন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেয়ে বলেন, সবার সাথে আলোচনা হবে।
একই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সোহাগ আলম জানান, ছুটিতে কর্মস্থলের বাইরে রয়েছে। তারপরও আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।
উপজেলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: আজহারুল ইসলাম জানান, এধরনের গাফিলতি হয়ে থাকলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী কাল (বুধবার) ঐ বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাবে শিক্ষা কর্মকর্তারা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, বিষয়টি কেউ এখন পর্যন্ত আমাকে জানায়নি। তবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
The post প্রধান শিক্ষক না আসায় শ্রেনীকক্ষে ঢুকতে পারেনি শিশুরা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3zCoXGD
No comments:
Post a Comment