Wednesday, September 30, 2020

প্রবীণ দিবস এবং করোনাকালে প্রবীণ ভাবনা https://ift.tt/eA8V8J

বিশে^ প্রবীণদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্রতা বিমোচন ও স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা ৮ শতাংশ (২০১২)। ২০৫০ সালে এই সংখ্যা-২০-২২ শতাংশে পৌঁছাবে। (বাংলাদেশ পরসংখ্যান ব্যুরো ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯)। এই দেশের উন্নয়নের প্রবীণদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। এখনও রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা ভূমিকা রেখে চলেছে। বয়সের কারনে প্রবীণদের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

যেমন হাড়ের ক্ষয় জনিত সমস্যা, উচ্চরক্তচাপ, ডায়বেটিস, হার্টের অসুখ, কিডনির ক্ষমতা হ্রাস, ব্রেইন ষ্ট্রোক ও ক্যানসার রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এর ফলে তাদের সক্ষমতা হ্রাস পায়। সমাজে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি সমাজের সকলের দায়বদ্ধতা আছে এটা জানানোর ও প্রবীণদের সুস্থ্য রাখার জন্য এবং প্রবীণ বান্ধব পরিবেশ তৈরীর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগীতার বিষয়ে সচেতনতা করা বা উদ্বুদ্ধ করা প্রবীণ দিবসের তাৎপর্য্য।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীতে প্রবণীদের উপর বড় চ্যালেঞ্জ এসেছে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক ক্রিয়া কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। বাংলাদেশে ২০ শতাংশ বয়স্করা ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়, ৫০ শতাংশ প্রবীণ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত থাকে যেমন ফুসফুসের রোগ, হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর অসুখ (এথেরোস্কেলেরেসিস) দীর্ঘস্থায়ী কিডনীর অসুখ (সিকেডি), লিভারের অসুখ (সিএলডি) ব্রেইন ষ্ট্রোক, ক্যানসার ও অপুষ্টি (৭৬ শতাংশ)। এ সব কারণে প্রবীনদের অসুস্থ্য হওয়ার ঝুকি প্রবলভাবে বেড়ে যায়। রোগ থেকে সুস্থ্য হতে অনেক সময় লেগে যায়, অনেকে অক্ষম হয়ে পড়েন।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ বিশ^ মহামারীতে প্রবীণদের মৃত্যু হার ৮-১৬ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। যারা সুস্থ্য হয়েছেন অনেকে অকর্মন্য হয়ে পড়েছেন। যারা আক্রান্ত হন নাই তাদেরও জীবনযাত্রা কষ্টকর অবস্থায় আছে।

কেভিড-১৯ বিস্তার কমানোর জন্য ও সংক্রমন থেকে মুক্ত থাকার জন্য ঘরে আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে মাসের পর মাস ঘরে। হাটার ব্যবস্থা হচ্ছে না, কর্মক্ষেত্রে যেতে পারছেনা, চাকুরী থেকে অবসর প্রাপ্তদের খাবার যোগানের সমস্যা, ব্যাংকে টাকা উঠানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ সেখানে মানুষের ভিড়ে সময় কাটানোর ফলে রোগের সংক্রমনের ঝুকি থাকে। তাদের জন্য অর্থ ও খাদ্য সরবরাহ করা খুবই সমস্যা হচ্ছে। তারা সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন, জীবনযাত্রার একঘেয়েমিতা তৈরী হচ্ছে, কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে, ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। মানসিক চাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসবের ফলে রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না। পঙ্গু রোগীদের পূর্ণবাসন করতে পারছে না, স্বাস্থ্যসেবা সঠিক ভাবে নিতে পারছে না। তাছাড়া লকডাউনে পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার অভাব হয়েছে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা হয়ে একাকীত্ব জীবন যাপন করতে হচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা ঝগড়া বেড়ে যাচ্ছে ফলে মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে এখনও অনেক সময় লাগবে বিশেজ্ঞদের মতে।

উক্ত সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করার জন্য ও প্রবীণদের ভাল রাখার জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগে এসব সমস্যাগুলো বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এই সহযোগিতা আরও দীর্ঘস্থায়ী করার প্রয়োজন। বিশ^ প্রবীণ দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহনের মাধ্যমে প্রবীণদের সুস্থ্য রাখার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার অনুপ্রেরণা যোগাবে।
লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সভাপতি, সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

ডা. সুশান্ত ঘোষ

The post প্রবীণ দিবস এবং করোনাকালে প্রবীণ ভাবনা appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2G3HSEJ

No comments:

Post a Comment