Monday, May 31, 2021

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারণে বেড়েছে পুরো বিভাগের সংক্রমণ https://ift.tt/eA8V8J

 

সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অবহেলা ও পেশাগত কাজে এই জেলার মানুষের অন্যান্য জেলায় যাওয়া আসা অব্যাহত রাখার কারণে এখান থেকেই করোনা ছড়িয়েছে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। এই বিভাগের হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

দেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি। এর মধ্যে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে ৮ জেলায়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সংক্রমণ বাড়ায় এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ায় সেখানে সাত দিনের বিশেষ লকডাউন চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের রবিবার (৩০ মে) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে সংক্রমণের হার ৩৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, নওগাঁতে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ, সাতক্ষীরাতে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং চাপাইনবাবগঞ্জে ২৫ শতাংশ। এর বাইরে আর কোনও জেলার তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞ কমিটি সূত্রে জানা যায়, খুলনাতে সংক্রমণের হার ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং কুষ্টিয়াতে সংক্রমণের হার ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা খুবই কম বলে জানিয়েছেন খোদ জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী। তিনি বলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বেশ কিছু লোক জেলার বাইরে ধান কাটতে যায়। তারাও ফিরে এসেছে। আবার অনেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, এরাও ফিরে চলে এসেছে। তাতে করে দুই জায়গারই সংক্রমণের হার বেড়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন বলেন, শনিবার রাতে পাওয়া ফলাফল থেকে জানা যায়, আরটি পিসিআর ও র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৬৪১ জনের মধ্যে ১৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৯৬। কিন্তু এতে কোনও স্বস্তির কারণ নেই। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের যে সাতজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন পাওয়া গেছে, তারা কখনও সীমান্তের দিকে যাননি। এটি সামাজিক সংক্রমণের ফল। তিনি আরও জানান, জেলায় ২৯ মে পর্যন্ত মোট সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৭২৭। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১১৯ জন। মারা গেছেন ৩২ জন।

পুরো বিভাগের করোনা রোগী আসে রাজশাহী মেডিক্যালে

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে সর্বোচ্চ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৯ মে) সকাল থেকে রবিবার (৩০ মে) সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউতে তারা মারা যান। এর আগে করোনা ইউনিটে একদিনে এত সংখ্যক রোগী মারা যাননি বলে জানান রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস।

গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১২ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৮ জনের করোনা আক্রান্ত ছিলেন, বাকি চার জনের করোনা উপসর্গ ছিল। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার আগেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। মারা যাওয়াদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাত জন রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে রাজশাহীর দুই জন, নওগাঁর দুই জন ও নাটোরের একজন। এ নিয়ে গত ছয় দিনে রামেক হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৫১ জন।

সাইফুল ফেরদৌস আরও জানান, রবিবার পর্যন্ত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসিইউতে ২০৪ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যার মধ্যে পজিটিভ রোগী ৭৫ জন। তাদের মধ্যে চাঁপাইনবাগঞ্জের ৯৩, রাজশাহীর ৮৪, নাটোরের ১০, নওগাঁর ৭, পাবনার ৩ ও কুষ্টিয়ার ৩ জন রয়েছেন। হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন মোট ১৫ জন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগী। বিশেষ করে, চাঁপাইবাবগঞ্জ থেকে আসা রোগী থেকে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর অর্ধেকেরও বেশি এখন চাঁপাইনাববগঞ্জের।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মে এই হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫৭ জন। কিন্তু ঈদের আগে ওপরে থেকেই আবার রোগী বাড়তে শুরু করে। ঈদের আগে ১২ মে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৭ জন। ঈদের পর থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে রোগী ভর্তি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা শিবগঞ্জের সবচেয়ে বেশি রোগী। এই উপজেলার ৩১ জন করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুল আলম বাদশা জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার বেশকিছু কারণ আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এখনও অনেক সীমানা আছে, যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। তারা অবাধে ভারতে যেতে পারে। ভারতের সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়া করে। আবার চোরাচালানও আছে। এভাবে এরা সংক্রমিত হয়ে এসে তার আশেপাশের মানুষকে সংক্রমিত করছে। এসব এলাকায় কার্যকর লকডাউন বাস্তবায়ন নাহলে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘হঠাৎ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রামণের হার বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ কারণ আমার কাছে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, এই দুইজেলার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা খুব সহজ। এখানকার মানুষ ওখানে যায়। আবার ওখানকার মানুষ এখানে আসে। এতে করে২৩ মে লকডাউনের আগে দুই জেলার মানুষের মধ্যে বেশি যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় সংক্রমণটা দুই জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে লকডাউনের কারণে কিছুটা হলেও রাজশাহীর সঙ্গে যাতায়াত বন্ধ থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কমে আসছে। কিন্তু রাজশাহীর আগের যোগাযোগের কারণে প্রভাবটা রয়ে গেছে। এতে করে রাজশাহীতে শনাক্তের হার বেড়ে গেছে।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নাকি মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারনে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকাতে করোনার সংক্রমণ এভাবে বেড়েছে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে যেসব সরকারি এজেন্সিগুলো কাজ করে তাদেরকে এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় অন্তর্ভুক্ত করেনি।এখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিভিল অ্যাডমিন্টিস্ট্রেশনকে। তারা সেটা করতে পারেনি।

The post চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারণে বেড়েছে পুরো বিভাগের সংক্রমণ appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3fAAL5v

No comments:

Post a Comment