Wednesday, May 26, 2021

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আবারো ভাঙলো বাঁধ, ডুবলো সাতক্ষীরা উপকূল https://ift.tt/eA8V8J

পত্রদূত রিপোর্ট: আবারো ভাঙলো বাঁধ, ডুবলো সাতক্ষীরা উপকূল। এর আগে আম্পান, ফনি, বুলবুল, আইলা, সিডরসহ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাঁধ ভেঙে ডুবেছিল সাতক্ষীরার উপকূল। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সাতক্ষীরা উপকূলে ডানা ঝাপটায়নি। ভরা পূর্ণিমায় চোখ রাঙিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সেই চোখ রাঙানিতে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরার সাত উপজেলার মধ্যে ৬টির শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ওইসব গ্রাম।

এ ভয়াবহ অবস্থার জন্য অর্ধশত বছর আগের সেই জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, দিন আসে, দিন যায়, বদলায় অনেক কিছু। শুধু বদলায় উপকূলের বেড়িবাঁধের চেহারা। প্রতিবছর দুর্যোগ আসে, কিন্তু বাঁধগুলো সংস্কার করা হয়না। ঠিক দুর্যোগ মুহূর্তে কিছু বালির বস্তা নিয়ে হাজির হয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বিপুল সংখ্যক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ছয়টি উপজেলার কয়েকশত চিংড়ি ঘের ও ফসলী ক্ষেত। নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির আঁধার পুকুরগুলো। পানির তোড়ে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে না উঠলেও গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়ে বহু মানুষ বাড়ির নিকটবর্তী উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

বুধবার (২৬ মে) সকালে জোয়ারের চাপে শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাপা গ্রামে বেড়িবাঁধের চারটি পয়েন্ট, পাতাখালির দুটি পয়েন্ট, রমজাননগরের দুটি পয়েন্ট, গাবুরার তিনটি পয়েন্ট, কৈখালির দুটি পয়েন্ট, ভেটখালি জামে মসজিদের সামনে একটি পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনীর তিনটি পয়েন্ট ও নূরনগর ইউনিয়নের একটি পয়েন্টসহ অন্তত: ১৭টি স্থানে পানি বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ায় সয়লাব হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম।

এদিকে শ্যামনগরের গাবুরার জেলেখালি, নেবুবুনিয়া, চাঁদনীমুখা, গাগড়ামারি, পদ্মপুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাতাখালি, কামালকাটি, ঝাঁপা ও সোনাখালিসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম উপচে পড়া নদীর জোয়ারের পানিতে ভাসছে। গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা বালির বস্তা এবং মাটি ফেলে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চলছে।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাছুদুল আলম, পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এড. আতাউর রহমান, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবু ভবতোষ মন্ডল, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কামেশ মোড়ল, কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিমসহ স্থানীয়রা এসব তথ্য জানান।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ. ন. ম. আবুজর গিফারী বলেন, তাৎক্ষনিকভাবে সরকারী সাহায্য হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে নগত ২৫ হাজার টাকা ও ২ মে. টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

এদিকে কালিগঞ্জের পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের জব্বারের মাছের ঘের সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা হাসপাতাল, আব্দুস সামাদ স্মৃৃতি মাঠ, বাস টার্মিনাল সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম কাঁকশিয়ালী নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া কালীগঞ্জ সোহরাওয়ার্দি পার্কের পাশে কাঁকশিয়ালী নদীর পানি উপচে উপজেলা সদরের বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের কাছে যমুনা নদীর উপর নির্মিত স্লুইস গেটের পাটাতন বন্ধ থাকায় সেখান থেকে পানি উপচে নাজিমগঞ্জ বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। উপজেলার ঘোজাডাঙা এলাকায় কাঁকশিয়ালী নদীর বাঁধ উপচে উত্তর শ্রীপুর ও দক্ষিণ শ্রীপুরসহ তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ভাঙনের ফলে কপোতাক্ষের পানিতে আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চঘাট, হরিশখালি, চাকলা, রুইয়ার বিল, সুভদ্রকাটি, দিঘলারআইটসহ কয়েক পয়েন্টের বেড়িবাঁধ উপচে ও ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়াও আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের পিরোজপুরের রাজবংশীপাড়ায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আশাশুনির দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়ায় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ উপচে পানি এলাকায় ঢুকে কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বড়দল ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকছে।

এদিকে দেবহাটা উপজেলার ইছামতী নদীর কোমরপুর নামকস্থানে বেড়িবাঁধ উপচে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়দ্দহ মসজিদের পাশে ও তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআর এম এর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট ধ্বসে নদীর পানি ছড়িয়ে পড়েছে। শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সেতু উপচে চুনা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকা। এখন পর্যন্ত কোন প্রাণহানির কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামবাসী গবাদিপশু ও তাদের সহায়-সম্পদ নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন। সাতক্ষীরায় দিনভর বৃষ্টি হয়েছে সেইসাথে ঝড়ো হাওয়া ছিল প্রবল।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার নদীগুলোতে পানি বেড়ে গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনি, কৈখালী, পদ্মপুকুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বেড়িবাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নদীর পানি বেড়ে বেড়ি ছাপিয়েও পানি প্রবেশ করেছে। কিছু মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া রাতে আবারো জোয়ারে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে।

সেকারণে পানিবন্দি মানুষজনকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চেয়ারম্যানগণ সক্রিয় রয়েছেন ভাটা নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পানি বের করতে কাজ করবেন।
সাতক্ষীরা-৪ শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ (আংশিক) এর সাংসদ জিএম জগলুল হায়দার বলেন, এক বছর আগে আঘাত হানা আম্পানের ক্ষত শুকানোর আগেই আবারও ইয়াসের ছোবল মানুষকে নতুন করে বিপদে ফেলেছে। সকলে মিলে একসাথে কাজ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমে বলেছেন, তার কাছে শ্যামনগরের ১২টি পয়েন্টে ভাঙন ও বাঁধ উপচে এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর রয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান পানি নেমে যাওয়ার পরে নিরূপন করা সম্ভব হবে এবং ক্ষত দৃশ্যমান হবে বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার নদীগুলোতে পানি বেড়ে গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনি, কৈখালী, পদ্মপুকুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নদীর পানি বেড়ে বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে পানি প্রবেশ করেছে। কিছু মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া রাতে আবারো জোয়ারে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে। সেকারণে পানিবন্দি মানুষজনকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চেয়ারম্যানগণ সক্রিয় রয়েছেন। ভাটা নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পানি নিষ্কাশনের কাজ করবেন।

 

 

The post ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আবারো ভাঙলো বাঁধ, ডুবলো সাতক্ষীরা উপকূল appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3wthM2m

No comments:

Post a Comment