পত্রদূত রিপোট:পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে এবং এর আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে এটি গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ জন্য চট্টগ্রাম, পায়রা, কক্সবাজার এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে আজ ২৩ মে’র মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিশেষ সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়াবিদ সুজীব কর জানান, নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার ডায়ামিটার দাঁড়িয়েছে ১৪০০ কিলোমিটার। যা বঙ্গোপসাগরের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা। কারণ এত বড় মাপের গভীর নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরে সচরাচর তৈরি হতে দেখা যায়নি। এর সঙ্গে বায়ুর চাপ ঢাল এবং বায়ুর তাপ ঢাল দুটোই খুব সক্রিয়ভাবে ইন্ডিকেট করছে এটা সাইক্লোনে কনভার্ট হতে পারে। সাইক্লোনে পরিণত হলেও আগামী ৩৬ ঘণ্টা অবজারভেশন ভীষণভাবে প্রয়োজন। কারণ যেকোন মুহূর্তে গভীর নিম্নচাপ আবার ভেঙেও যেতে পারে। অর্থাৎ সাইক্লোন হলো না এমন ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে যদি সাইক্লোনে পরিণত হয় তা উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত অথবা পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে।
তবে যদি পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে এই সাইক্লোন প্রবেশ করার চেষ্টা করে তাহলে এর গতিবেগ এবং শক্তি দুটোই উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ায় জলীয় বাষ্প বেড়েছে। তার ফলে আম্পানের থেকেও বেশি ভারী মেঘ তৈরি হবে এবং বঙ্গোপসাগরের পূর্ব-মধ্য ভাগে এই নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার কারণে এর অনেকটাই শক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও, আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আম্পানের থেকে কম শক্তিশালী হবে যশ।
এদিকে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, করোনা সংক্রমণের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনগুণ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মৃত্যু শূন্যের কোটায় রাখতে শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার প্রচেষ্টা থাকছে। প্রতিমন্ত্রী শনিবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির পলিসি কমিটি’র সভায় এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় এলাকায় শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে হবে। যে করেই হোক, সবাইকে শেল্টার সেন্টারে আনতে হবে, একজনকেও রেখে আসা যাবে না। এবার আমরা টার্গেট রাখব যেন কোনো মৃত্যু না হয়। প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ে পাঁচ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার করা হয়। আম্পানের সময়ে করোনার কারণে ১৪ হাজার ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষকে রাখা হয়। ‘কোভিডের কারণে তিনগুণ আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার করব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবহার করা হবে। সবার জন্য মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হবে। ফনী, বুলবুল, আম্পান মোকাবিলা করেছি। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঝড় মোকাবিলা করা হবে এবং শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসে মৃত্যুহার শূন্যের কোটায় আনা হবে।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতির পর্যালোচনা করতে নয়াদিল্লিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজিব গৌবার নেতৃত্বাধীন জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির (এনসিএমসি) বৈঠক হয়েছে। এতে পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের হালনাগাদ নিয়ে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাসচিব ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ২৬ মে বুধবার এটি যখন পশ্চিমঙ্গ ও উড়িষ্যার উপকূলে আঘাত হানবে, তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে প্রতি ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। সঙ্গে দুই রাজ্যের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টি ও ব্যাপক বন্যা হতে পারে।
ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের চারটি রাজ্যের উপকূলীয় নিচু অঞ্চল থেকে হাজার হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া শুরু করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য, খাবার পানি ও অন্যান্য অপরিহার্য সরবরাহ মজুদ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ সেবাও সচল রাখতে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
The post নিম্নচাপটির ডায়ামিটার দাঁড়িয়েছে ১৪০০ কিলোমিটার: যা বঙ্গোপসাগরের ইতিহাসে বিরল appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3vpWS3O
No comments:
Post a Comment