পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের বাহিত পলি দিয়ে মোহনার বুকে জেগে উঠেছে দ্বীপ জেলা ভোলা। এ জেলার সৃষ্টির ইতিহাস যেমন আর্কষণীয়, ঠিক তেমনি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রয়েছে বৈচিত্রের ছোঁয়া। বিশেষ করে এখানকার চরাঞ্চলের অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো, হরিণের পালের ছোটাছুটি, নদীর বুকে সারি সারি নৌকা, দল বেঁধে বুনো মহিষের বিচরণ, একরের পর একর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, আকাশ ছোঁয়া কেওড়া বাগান আর সাগর মোহনার সৈকত—সব কিছুই কঠিন হৃদয়ের মানুষেরও মন ছুঁয়ে যায়।
জেলার মুল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা উপজেলা। এখানে নদী আর সাগরের মিতালীর অপরূপ সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে। এখানকার সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি। নীল জলরাশির সমুদ্র সৈকত, মায়া হরিণের সৌন্দর্য, ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখিদের উড়ে বেড়ানো, নদীর বুকে জেলেদের মাছধরা দৃশ্য যে কারো মন ভোলায়।
জানা যায়, জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে মেঘনার মোহনায় ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলা প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। অতি প্রাচীন দ্বীপটি একসময় পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল। যার নিদর্শন এখনো বয়ে বেড়ায় এখানকার লোমশ কুকুর। মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সারিসারি ম্যনগ্রোভ বনাঞ্চল। এখানকার ছোট-বড় ৮-১০টি চরে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজের বিপ্লব। শীত মৌসুমে শত-শত অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত থাকে এসব চরাঞ্চল। এই চরগুলো হলো- চর তাজাম্মুল, চর পাতালিয়া, চর পিয়াল, চর নিজাম, চর সামসুউদ্দিন, লালচর, ডাল চর, কলাতলীর চর ইত্যাদি।
মনপুরায় না এলে বোঝার উপায় নেই সবুজের দ্বীপ মনপুরায় লুকায়িত আছে কী সৌন্দর্য আর পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। এক মায়াজালে পর্যটক আর ভ্রমণপিপাসুদের আটকে দেয় ৮শ’ বছরের পুরানো এ দ্বীপটি। এখানে কাক ডাকা ভোরে নদীর বুক চিরে লাল টুকটুকে সূর্য হাসতে-হাসতে যেমন তার দিন শুরু করে, তেমনি শেষ বিকেলে মেঘের হাত ধরে টুপ করেই ডুব দেয় নদীর জলে। অর্থাৎ এখান থেকে একইসঙ্গে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা সম্ভব। এসব অপার সম্ভাবনাকে পূঁজি করে মনপুরায় সম্প্রতি গড়ে উঠেছে ‘মনপুরা সী-বীচ’। আর ওই পর্যটনকেন্দ্রটি এখন ভ্রমণপিপাসুদের বাড়তি আকর্ষণ হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে বিশেষ কিছু খাবার রয়েছে। তার মধ্যে শীতের হাঁস, মহিষের কাচা টক দই, টাটকা ইলিশ, বড় কইমাছ, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি অন্যতম। মেঘনা নদীর টাটকা ইলিশ আর চরের মহিষের কাঁচা দুধের স্বাদ এনে দিতে পারে ভিন্ন এক অনুভূতি।
এখানকার প্রধান সমস্যা যোগাযোগ ব্যাবস্থা। বিছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় লঞ্চ হচ্ছে মনপুরা দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র বাহন। ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি ফারহান-৩ এবং ৪ নামে দুটি লঞ্চ প্রতিদিন বিকেল ৫ টায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে সকাল ৭টা থেকে ৭টা ৩০ মিনিটের মধ্যে মনপুরা দ্বীপে পৌঁছায়। লঞ্চ থেকে সূর্যোদয় দেখতে মোহনীয় লাগে। লঞ্চের ডেক চড়ে যেতে জনপ্রতি ৩৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। মনপুরা রামনেওয়াজ লঞ্চঘাট থেকে দুপুর ২টায় লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
এছাড়া ঢাকা কিংবা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটে এসে সি-ট্রাকে করেও মনপুরা দ্বীপে আসতে পারবেন। প্রতিদিন বিকেল ৩ টায় তজুমদ্দিন থেকে সি-ট্রাকটি ছাড়ে আর মনপুরা থেকে সকাল ১০টায় ফিরতে সি-ট্রাক ছাড়ে। ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাট থেকেও দু’টি লঞ্চ মনপুরার জনতা বাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তবে এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই নৌপথটিকে ডেঞ্জার পয়েন্ট হিসেবে গন্য করা হয়; তাই এই ৮মাস এই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে।
মনপুরাতে ভালো মানের পর্যটন হোটেল গড়ে উঠেছে। সরকারিভাবে জেলা পরিষদের অর্থায়নে আধুনিক ৪ তলাবিশিষ্ট ডাকবাংলো রয়েছে। এছাড়া কারিতাস বাংলো এবং প্রেসক্লাব বাংলো রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় এই বাংলোগুলোতে রাত কাটাতে পারবেন।
The post মন কাড়ছে মনপুরা, জেগেছে নতুন সৈকত appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2FMAlKi
No comments:
Post a Comment