Thursday, September 24, 2020

ঈমানের সাথে নেক আমলের সম্পর্ক https://ift.tt/eA8V8J

মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ
মানুষের জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো খাঁটি মনে আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনা। অর্থাৎ ইসলামকে আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বীন হিসেবে দৃঢ়ভাবে অন্তরে বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও কাজের মাধ্যমে আমলে পরিণত করার নামই প্রকৃত ঈমান গ্রহণের বাস্তব নমুনা। সুরাহ ইমরানের ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে মনোনীত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম।” আবার সুরাহ মায়েদার ০৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (ইসলামকে) পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর আমার নেয়ামতকে তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করেদিলাম এবং ইসলামকে একমাত্র মনোনীত দ্বীন হিসাবে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করলাম।”

 

অত্র আয়াতদ্বয় দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, আল্লাহ তায়ালার কাছে পছন্দনীয় দ্বীন হলো ইসলাম। আর ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে, আল্লাহকে একমাত্র রব হিসেবে মেনে নিয়ে মুমিনের প্রধান দায়িত্ব হলো আল্লাহ তায়ালার দেওয়া তদীয় রাসুলের শেখানো পদ্ধতিতে ইসলামের বিধি-বিধান ব্যক্তিজীবনে আমল করার মাধ্যমে খাঁটি মনে ইবাদাত বন্দেগী বাস্তবায়ন করা। ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথে মুমিনের প্রধান দায়িত্ব হলো ইসলামের বিধি-নিষেধ গুলো আমল করা এবং যথাযথভাবে মুহাম্মাদুর রাসুল্লাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী ফরজ ও সুন্নাত ইবাদাতগুলো একানিষ্টভাবে আদায় করা। ইবাদাত করার জন্যই আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন।যেমন সুরাহ যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন-“আর আমি মানুষ এবং জ্বীনকে শুধুমাত্র আমার ইবাদাত তথা দাসত্ব ও গোলামী করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” সুতরাং ঈমান গ্রহণ করার পর মুমিনের প্রধান কর্তব্য হলো আল্লাহর ইবাদাত করা।ইবাদাত করা ছাড়া আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনা বৃথা ও অর্থহীন।আমলে সালেহগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো সঠিক সময়ে সালাত তথা নামাজ আদায় করা। যেমন সুরাহ বাকারার ০৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-“যারা অদৃশ্য বিষয় (আল্লাহ, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেসতামন্ডলী, পুলসিরাত, মিযান, হাশর) এগুলোর উপর না দেখে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সালাত তথা নামাজ কায়েম করেছে এবং আমি তাঁদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করেছে।” এ আয়াতে ঈমান গ্রহণের পরেই আল্লাহ তায়ালা নামাজ কায়েম করার তাগিদ প্রদান করছেন। আমরা প্রত্যেক মুমিন আল্লাহ তায়ালার গোলাম তার একটি উৎকৃষ্ট নমুনা হলো সালাতে সিজদার মাধ্যমে রবের সামনে উপস্থিত হয়ে আমরা মাথা নত করি। আমলে সালেহকারীদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন।যেমন কুরআনে এসেছে-“হে নবী ! যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ তথা (নেক আমল বা সৎকর্ম) করেছে আপনি তাঁদের এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন,যে জান্নাতের পাদদেশে নহরসমুহ প্রবাহিত থাকবে।” (সুত্র: সুরাহ বাকারা, আয়াত নং-২৫)। শুধু তাই নয় আমলে সালেহকারী মুমিন চিরস্থায়ী জান্নাতে থাকবে।যেমন আল কুরআনে এসেছে-“আর যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ তথা নেক আমল করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসি। তাঁরা সেখানে চিরকাল থাকবে।” (সুত্র: সুরাহ বাকারা, আয়াত নং-৮২)। সুরাহ কাহাফের ৩০-৩১ নং আয়াতেও আল্লাহ তায়ালা একই কথা উল্লেখ করেছেন-“যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ তথা সৎ কর্ম সম্পাদন করেছে। আমি আল্লাহ সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করিনা। আর আমলে সালেহকারীদের জন্য রয়েছে বসবাসের জান্নাত। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-“যারা ঈমান এবং সাথে সাথে আমলে সালেহ তথা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে,তাঁদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস। (সুত্র: সুরাহ কাহাফ, আয়াত নং:১০৭)।

উদাহরণ স¦রুপ বলা যায় যে, একটি বৈদ্যুতিক বাল্প যেমন (পজেটিভ ও নেগেটিভ) দুটির সমন্বয়ে তার কিরণ উদ্ভাসিত করে ঠিক একইভাবে একজন মুমিন আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনলো কিন্তু আমলে সালেহ তথা সৎকর্ম করলো না। একটি বাল্প যেমন শুধু তার পজেটিব তার দিয়ে আলো দিতে পারে না।শুধু আল্লাহর উপর ঈমান গ্রহণ কারীর অবস্থা ঐ একতার ওয়ালা বাল্পের মতো হবে।দুনিয়ার দৃষ্টান্তে একটি বাল্পের আলোর জন্য যেমন পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটির যৌথ সমন্বয় শর্ত।তদ্রুপভাবে জান্নাতের সুসংবাদের জন্য আল্লাহর তায়ালার উপর ঈমান ও আমলে সালেহ দুটির যৌথ সমন্বয় শর্ত। সুরাহ আসরেও আল্লাহ তায়ালা একই কথা বলেছেন।ইরশাদ হচ্ছে-“আল্লাহ তায়ালা বলছেন,সময়ের কসম। নিশ্চয়ই সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে। *তবে যারা ঈমান এনেছে, *আমলে সালেহ করেছে, *হক্বের পথে অবিচল থেকেছে এবং *(বিপদে-মুসিবতে) ধৈর্য্য ধারণ করেছে। (সুত্র: সুরাহ আসর, আয়াত নং:০১-০৩)। এভাবে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের অসংখ্য জায়গায় তাঁর বান্দাহকে ঈমান আনার সাথে সাথে আমলে সালেহ করার তাগিদ প্রদান করেছেন।ঈমান এবং একই সাথে যারা আমলে সালেহ তথা সৎ কর্মের সমন্বয় সাধন করবে, আল্লাহ তাঁদেরকে দুনিয়াতে শাসনকর্তৃত্ব দান করার ওয়াদা করেছেন।যেমন সুরাহ নুরের ৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ঘোষণা করেছেন-“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে তথা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আমলে সালেহ তথা সৎকর্ম করে,আল্লাহ তাঁদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই তিনি পৃথিবীতে খেলাফাতের তথা শাসনকর্তৃত্বের দায়িত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্ম (ইসলামকে), যা তিনি তাঁদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি মুমিনদের ভয়ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাঁদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার ইবাদাত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপরও যারা আমার (বিধি-বিধানকে) অস্বীকার করবে ,তারা হবে ফাসিক তথা অবাধ্য।” সুরাহ লোকমানে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-“যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে,তাঁদের জন্য রয়েছে জান্নাতুন নাঈম তথা নেয়ামতে ভরা জান্নাত।” (সুত্র: প্রাগুক্ত, আয়াত নং-০৮)। আল কুরআনে সুরাহ ইনশিক্বক এর ২৫ নং আয়াত, সুরাহ তীন এর ০৬ নং আয়াত এবং সুরাহ হা-মীম সিজদার ০৮ নং আয়াতেও আল্লাহ তায়ালা একই কথা বলেছেন-যারা ঈমান গ্রহণের পর আমলে সালেহ তথা সৎকাজ করেছে তাঁদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।ঈমান ও আমলে সালেহকারীর জীবনের পিছনের গোনাহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। যেমন সুরাহ মুহাম্মাদে ইরশাদ হয়েছে-“আর যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ তথা সৎ কাজ করে এবং তাদের পালন কর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মাদের প্রতি অবতীর্ণ কেতাবের প্রতি সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দকর্ম সমুহ মার্জনা করেন এবং তিনি তাদের অবস্থাকে ইসলাহ তথা সংশোধন করে দেন।” (সুত্র: প্রাগুক্ত, আয়াত নং-০২)।

 

আমলে সালেহ বা নেক আমলের কতিপয় তালিকা:
১. নির্ধারিত সময়ে তাদিলে আরকানের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা।
২. নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর মালিকানায় থাকলে যাকাত দেওয়া।
৩. ফরজ, সুন্নাত ও নফল রোজা রাখা।
৪. সম্পদশালী হলে অন্তত জীবনে একবার ফরজ হজ্জ্ব করা।
৫. মাতা-পিতার খেদমত করা।
৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।
৭. কুরআন তেলাওয়াত ও তদানুযায়ী আমল।
৮. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা।
৯. শ্রমিকের হক্ব যথাযথভাবে আদায় করা।
১০. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যেটা দিয়েছেন (অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ) সেটি গ্রহণ করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন (অর্থাৎ হারাম কার্যাবলী) তা বর্জন করা।
১১. যিনা-ব্যবিচার, সুদ, ঘুষ, জুয়া ইত্যাদি কু-কর্মকান্ড থেকে নিজেকে হেফাজাত করা।
১২. সুন্নাত তরিকায় আল্লাহর যিকির-আযকার করা।
১৩. আমানাতের খেয়ানাত না করা এবং গিবত ও বুহতান থেকে দুরে থাকা।

 

আমলে সালেহ্্ বা নেক আমলের ফযিলাৎ: নেক আমল কারীর মর্যদার বিষয়ে সহীহ মুসলিম শরীফে ঠিক এভাবে বর্ণিত হয়েছে-বিশিষ্ট হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উত্তমরুপে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তখন সে যে আমলে সালেহ বা নেক আমল করে তার প্রত্যেকটি বিনিময়ে সাতশ গুন পর্যন্ত (পূণ্য) লেখা হয়। (সুত্র: সহীহ বুখারি, হা: নং-৪২, সহীহ মুসলিম, হা: নং-১/৫৯, মুসনাদে আহমাদ, হা: নং-৮২২৪)। উপরিউল্লিখিত কুরআন-হাদিসের বর্ণনার আলোকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে,আল্লাহর উপর ঈমান আনার সাথে সাথে নেক আমল করা বান্দার অপরিহার্য কর্তব্য। আর ঈমান ও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার প্রতিশ্রুতি কুরআনের শত শত জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দিয়েছেন। হে আল্লাহ! আমাদের সকল মুমিনবান্দাদিগকে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফীক দান করুন, (আমিন)। লেখক: ইসলামী গবেষক

The post ঈমানের সাথে নেক আমলের সম্পর্ক appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/33PznEM

No comments:

Post a Comment