Thursday, September 3, 2020

শ্যামনগরে ভূমি সংক্রান্ত দপ্তরগুলোতে জালিয়াত চক্রের ভয়ংকর থাবা! https://ift.tt/eA8V8J

শ্যামনগর প্রতিনিধি: তথ্য গোপন করে চিহ্নিত জালিয়াত চক্রের সদস্যরা শ্যামনগর উপজেলা সদরের বাদঘাটা গ্রামের মুল্যবান বেশকিছু জমি নিজেদের অনুকুলে নামজারীর অপচেষ্টা চালিয়েছে। ৩৩ বছর আগেই হস্তান্তর শেষে সেখানে রাস্তা নির্মিত হওয়া সত্ত্বেও কাগজপত্রের কারসাজি করে প্রতারক চক্র সম্প্রতি ঐ জমি নিজের নামে নামজারীর চেষ্টা চালায়। এর আগে রাস্তার জন্য রেজিষ্ট্রি হওয়া সত্ত্বেও জমি বুঝিয়ে না দেয়ার কাল্পনিক অভিযোগ তুলে তাদের এক প্রতিনিধি জমি মালিকের উত্তরাধীকারদের নিকট নগদ ‘পাঁচ লাখ টাকা অথবা সমমুল্যের জমি’ দাবি করে।

এদিকে জালিয়াত চক্রের চক্রের কুট-কৌশল ধরতে না পেরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে ‘ফার্স্ট অর্ডার’ দেয়ার পর নথি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে পৌছালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এসময় সংক্ষুব্ধ পক্ষের আপত্তিতে নথি আটকে যাওয়ার পর বিষয়টির তদন্ত করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ত্বড়িৎ পদক্ষেপ নিয়ে নামজারীর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। যদিও এমন দুষ্কর্মের কুশিলবদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেমন প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, তেমনী বার বার একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ধরা খাওয়ার পরও দপ্তরসমুহে ওই চক্রের আনোগোনায় কোনরুপ নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ অমেদ আলী নিজ জমিতে যাতায়াতসহ রাস্তা তৈরীর জন্য ১৫ জুলাই ১৯৮৭ সালে মো. নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন সম্মুখভাগের জমি থেকে ৬৫৪৭ নম্মরের দলিলমুলে পৌনে দুই শতক জমি ক্রয় করে। বিনিময় হিসেবে ওই দিন তিনি ৬৫৪৮ নম্বরের দলিল সূত্রে পাশর্^ হতে নিজ সম্পত্তির সাড়ে তিন শতক জমি নজরুল ইসলামকে কোবলা করে দেন। দু’পক্ষের মধ্যে জমি লেনদেনের উপর ভিত্তি করে একই দিনে ৬৫৫৩ নম্বর ‘এগ্রিমেন্ট’ দলিলমুলে আরও তিন ব্যক্তির সাথে মিলে মোট পাঁচ শতক জমির উপর রাস্তা তৈরীর জন্য চুক্তিবদ্ধ হন অমেদ আলী।
জানা গেছে, অল্পদিনের মধ্যে উক্ত জমিতে রাস্তা তৈয়ারের পর গত ৩৩ বছর ধরে তা ব্যবহার করে হাজারও পরিবার প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। ১৯৯২ সালের জরীপের পর সে রাস্তা ৩২ ক্রমিক নম্বরের পৃথক একটি ডিপি খতিয়ান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে মাঠ পর্শ্চায় হস্তান্তরিত জমির নির্দিষ্ট দাগ না থাকার অজুহাতে চিহ্নিত জালিয়াত চক্রটি অমেদ আলীর নিকট থেকে ২০০১ সালে দুই শতক জমি ক্রয়ের সুত্র ধরে অপর জমি মালিকের উত্তরাধীরদের নিকট থেকে ৩৩ বছর আগের হস্তান্তরিত জমি পুনরায় দাবি করে।

অভিযোগ উঠেছে সেটেলমেন্ট অফিসে ইতোপুর্বে কর্মরত কতিপয় দুর্নীতিবাজের যোগসাযশে জালিয়াত চক্রটি নথি থেকে কৌশলে (পেন্সিল দিয়ে লেখা) হস্তান্তরিত জমির নির্ধারিত দাগ সরিয়ে দেয়। যার ফলে জমি হস্তান্তর সত্ত্বেও যেমন নির্দিষ্ট একটি দাগের উল্লেখ নেই, তেমনী অপর একটি দাগের তথ্য উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মালিকের (আব্দুল আজিজ) নাম রয়েছে অনুচ্চারিত। এছাড়া জালিয়াত চক্র রাস্তাকে পুঁজি করে ব্যবসা করার অভিপ্রায়ে দলিল পাঁচ শতকের হওয়া সত্ত্বেও পর্শ্চায় ৮.২৫ শতক রেকর্ড নেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে উক্ত ৩২ ডিপি খতিয়ানভুক্ত ওই রাস্তা সর্বসাধারনের চলাচলের জন্য হওয়ার সুযোগে শ্রেণি ‘পথ’ হিসেবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও চক্রটি তা নিজ নামে রেকর্ড করিয়েছে। রাস্তাকে পুঁজি করে তারা স্থানীয়দের নিকট থেকে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা আদায় করে বলেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ভূমি সংক্রান্ত দপ্তর সমুহে এমন জালিয়াত চক্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারনে অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছে। তাদের কবলে পড়ে অনেকে ইতোমধ্যে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরসুমহের অনেকে জালিয়াত চক্রের চিহ্নিত এসব প্রতারক তাদের প্রতারনার বিষয়ে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে এখনও পর্যন্ত চক্রটি গর্বের সাথে সরকারি অফিস দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য ২০০৯ সালে প্রথম এ চক্রটি উপজেলা ভূমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর চোখে ধুলো দিয়ে একাধিক নামে প্রায় সাড়ে নয় বিঘা জমির নামজারী করে। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে জনরোষে থেকে বাঁচতে দীর্ঘ সময় পলাতক থাকার পর আবারও পুরাতন পেশায় যুক্ত হয়। এছাড়া ৮৩২/০৮-০৯ সালের একটি নামজারী মোকদ্দমার ভিত্তিতে সৃষ্ট ১৩৯/১ নম্বর খারিজ খতিয়ান বাতিল করা হয় তাদের জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর।
এদিকে দুরভিসন্ধিমুলক এমন অপতৎপরতার (হস্তান্তরিত জমি পুনরায় নামজারীর চেষ্টা) পর গত ২০ আগস্ট শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ৫০/২০-১৭৮ নম্বর স্মারকসুত্রে চক্রটির নামজারীর চেষ্টা স্থগিতের আবেদন করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয় ৪০(৯ম-১ম০)/২০-২১ নং নাম পত্তনসহ জমা খারিজ কেসটি বাদী পক্ষ যে দলিলের সাপোর্ট নিয়েছেন, তার আগেই এ জমি ৬৫৫৩/৮৭ নং এগ্রিমেন্ট দলিলে হস্তান্তরীত হওয়ায় জরুরী ভিত্তিক কেসটি নথিজাতের সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।

এবিষয়ে শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সুত্র জানিয়েছে তাদের কাছে তথ্য গোপন করে সংশ্লিষ্টরা কিছু জমি নামজারীর চেষ্টা করে। বিষয়টি জানার পরপরই নামজারীর কার্যক্রম স্থগিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তবে স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ চিহ্নিত এ চক্রের সক্রিয় সদস্যরা উপজেলার প্রতিটি ভূমি সংক্রান্ত দপ্তরে তৎপর। একটি দু’টি ঘটনা ধরা পড়লেও তারা দৌর্দন্ড প্রতাপে ভূমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নানা অনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের খপ্পরে পড়ে বাদঘাটা, কাঁচড়াহাটি, মুন্সিগঞ্জ ও পদ্মপুকুরের অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছে। এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনসহ তাদের অর্জিত সহায় সম্পত্তির বিষয়ে খোঁজখবর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামানা করেছেন স্থানীয়রা।

The post শ্যামনগরে ভূমি সংক্রান্ত দপ্তরগুলোতে জালিয়াত চক্রের ভয়ংকর থাবা! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2ELM7Ef

No comments:

Post a Comment