ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা
মনিরুল ইসলাম মনি: সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে ভূমি দস্যুদের বেপরোয়া দখল ও দীর্ঘদিন খনন না করায় এক সময়ের প্রমত্তা বেতনা নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। এরমধ্যে বন্ধ হয়েগেছে নদীর জোয়ার-ভাটা। ফলে প্রাণহীন বেতনা নদীতে বেড়েছে কচুরীপানার রাজত্ব। তবে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, হয়ত আর নদী খনন হবে না ! বরং দ্রুত কচুরীপানাগুলি কেটে পরিবেশ দূষণমুক্ত ও জলাবদ্ধতা নিরসন করার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন জানান।
এদিকে গত কয়েক বছর যাবত জমাট কচুরীপানার মধ্যে বিভিন্ন এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দূষিত হয়ে উঠেছে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার পরিবেশ। এছাড়া সম্প্রতি কয়েক দিনের বৃষ্টিতে যৌবনহারা বেতনা নদীর পানি উপচে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ আবাসিক এলাকা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ায় স্থানীয় পরিবেশবাদী সচেতন মহল পুনরায় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশংখা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিন নদী খনন না করায় একদিকে এলাকার পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। তারা আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বেতনা নদী বাচাঁও আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দ এলাকার পরিবেশ রক্ষায় এবং দুষিত পানি থেকে মুক্তি, উপচে পড়া পানিতে ভেসে যাওয়া মাছের ঘের, ফসলী জমি রক্ষায় অবিলম্বে ভূমি দস্যুদের কবল থেকে রক্ষা, নদীকে জমা পলি অপসারন, কচুরীপানা উচ্ছেদ ও নদীতে জোয়ারভাটায় টিআরএম পদ্ধতি চালু করার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন করলেও সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন না করায় এখন ভয়াবহ দুষিত পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে তীরবর্তী গ্রামবাসীদের। এসব মহলের প্রতিনিধিরা তাদের দাবি করে জানান, অতি দ্রুত বেতনা নদী খনন করা না হলে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে সময়ের প্রমত্তা এই নদীটি।
খোজনিয়ে জানাগেছে, কলারোয়া পৌরসদরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বিনেরপোতা হয়ে দেশের পুর্ব-দক্ষিনে বুধহাটা বড়দলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কপোতাক্ষ নদে মিলিত হয়েছে বেতনা নদী। ২৫/৩০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা নদী পথে ব্যবসা-বানিজ্যের জন্য এ বেতনা নদী দিয়ে যাতায়াত করতো। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম নদী বন্দর গড়ে উঠেছিলো ঝাউডাঙ্গা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা, পাটকেলঘাটা, তালাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া উপকুলবর্তী উপজেলা গুলো থেকে পাইকারী ব্যাবসায়ীরা বড় বড় নৌকা যোগে বেতনা নদী দিয়ে মালামাল নিয়ে কেনা-বেচা করতে আসত। সে সময় বেতনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে নদী বন্দর গড়ে উঠায় এলাকার সাধারন মানুষের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু কালের আবর্তে আজ সেই বেতনা নদীতে পলী জমে ও ভুমি দস্যুদের অবৈধ্য দখলের কারনে জোয়ার-ভাটাহীন মরা খালে পরিনত হয়েছে। আর নদীতে ফেলা ময়লা-আবর্জনা ও কচুরীপানা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে নষ্ট হচ্ছে ঝাউডাঙ্গার পরিবেশ অন্যদিকে প্রতি নিয়ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা।
ইউনিয়নের হাচিমপুর গ্রামের বাসিন্দা সাহেব আলী জানান, গত ১৫/১৬ বছর যাবত নদী পুন:খনন করার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন হয়েছে কিন্তু আজো নদী খননের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে পলি মাটি জমে নাব্যতা হারিয়ে বেতনা নদী ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। আর এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা (ভুমি দস্যু হিসেবে পরিচিত) বিভিন্ন সময়ে নদীর মাঝে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, নদী তীরবর্তী চরে অবৈধ দখল করে পাকা বাড়ি-ঘর, দোকান নির্মাণ করছে এছাড়া চর দখল করে তারা অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ফলে বেতনা নদী এখন সংকুচিত হয়ে স্রোতহীন (জোয়ার-ভাটা বন্ধ) হয়ে পড়েছে। এদিকে ¯্রােত না থাকায় নদীতে শেওলা, কচুরীপানা জমে থাকা এবং নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের মল, আবর্জনাসহ বিভিন্ন নষ্ট জিনিষ ফেলায় সেগুলি পচে দূর্গন্ধ চড়াচ্ছে যা পরিবেশের জন্য মারাতœক ক্ষতিকর। তিনি, দ্রুত নদী খনন করে আবারো মুল ¯্রােতধারায় ফিরিয়ে এনে জলাবদ্ধতা দুর করা এবং অবৈধ্য দখলদারদের উচ্ছেদ করে প্রমত্তা বেতনা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানান।
বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও ঝাউডাঙ্গার পাপড়ী এগ্রো গ্রুপের পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, জীব বৈচিত্রসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও দখলদার মুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। এসময় তিনি, সাতক্ষীরা জেলায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, পরিবেশ দূষণরোধ, জলাবদ্ধতা নিরসন, কৃষি ও ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য বেতনা নদী খনন করে নদী বাঁচাতে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
The post ঝাউডাঙ্গায় যৌবনহারা বেতনায় কচুরীপানার রাজত্ব! appeared first on Daily Patradoot Satkhira.
from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/2F63wr2
No comments:
Post a Comment