Tuesday, March 30, 2021

আবার ভাঙলো বাঁধ: আশাশুরি চার গ্রাম প্লাবিত: শ্যামনগরে ভাঙনাতঙ্ক https://ift.tt/3dA0GIr

পত্রদূত ডেস্ক: ‘সুপার মুন’ পূর্ণিমার প্রবল আকর্ষণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরার আশাশুনির খেলপেটোয়া নদীর দয়ারঘাট-জেলেখালি বিকল্প রিংবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে চারটি গ্রাম।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ ২০২১) দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট, দক্ষিণপাড়া, আশাশুনি সদর, জেলেখালি, গাছতলা গ্রামের ঘরবাড়ি ও ফসলিজমি ও মাছের ঘেরে নদীর নোনাপানি ঢুকে পড়েছে।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের পানিতে জেলেখালি-দয়ারঘাট রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। গ্রামবাসি স্বেচ্ছাশ্রমে শত চেষ্টা করেও ভাঙন ঠেকাতে পারেনি। এতে এলাকার মৎস্য ঘের, ঘর-বাড়ি নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। মাত্র কয়েকমাস আগে বাঁধটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। গত বছর ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানে আশাশুনির দশটি পয়েন্টে ভেঙে যায়। যার মধ্যে এই দয়ারঘাটও ছিল। তখন ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিলো। সেই ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে বিকল্প রিংবাঁধ দেয়া হয়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় ফের নতুন করে এলাকার মানুষ দুর্দশায় পড়লো।
আশাশুনি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন জানান, খোলপেটুয়া নদীর দয়ারঘাট এলাকার বেড়িবাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিলো। মঙ্গলবার দুপুরে প্রবল জোয়ারের তোড়ে তা ভেঙে জেলেখালি, দয়ারঘাট ও উপজেলা সদরের দক্ষিণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে কমপক্ষে শতাধিক বাড়ি এবং অর্ধশতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিকালে নদীতে ভাটা শুরু হলে স্থানীয়দের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বেঁড়িবাঁধ বাঁধার কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু সে চেষ্টা কোন কাজে আসেনি।
ইউপি চেয়ারম্যান মিলন আরও বলেন, মৎস্য চাষ এই এলাকার প্রধান পেশা। আগের রেশ কেটে মানুষ-জন মৎস্য ঘেরে নতুন উদ্যমে মাছ ছেড়ে দিয়ে এখন তা প্রায় ধরার মতো হয়েছে। এরমধ্যে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে শুরু করায় আবারো মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়তে শুরু করেছে।

 

 


অপরদিকে আশাশুনি জনতা ব্যাংকের সামনে দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি উঠতে থাকায় বাজারের ভিতর পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে আশাশুনি সদর এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘সুপার মুন’ পূর্ণিমার টানে নদীদে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সেই জলোচ্ছ্বাসে এই ৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দেয়। এর সমাধান যদি দ্রুত না করা যায় তবে আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, পাউবোর কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করছে। বাঁধ বাঁধার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, আশাশুনি বাইপাস সড়ক টু দয়ারঘাট পাউবো’র বাঁধ পর্যন্ত মেইন সড়কে রিংবাঁধ দিয়ে এসব এলাকায় জোয়ারের পানি আটকানো হয়েছিল। ৮ মাস পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিধ্বস্ত প্রতাপনগর ও শ্রীউলা দুই ইউনিয়নে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হলেও অজ্ঞাত কারণে বাকি থেকে যায় সদরের দয়ারঘাট গ্রামের বাঁধটি। এ বাঁধটি নিয়ে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নানা রকমভাবে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করলেও দৃশ্যমান কোন কাজ করেননি। গত ২০ আগস্ট’২০ রিংবাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকে এলাকা প্লাবিত হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলনের তত্ত্বাবধানে শ্রমিক লাগিয়ে প্রায় ১০ মে. টন চালের কাজ করিয়ে রাস্তাটি টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু বরাদ্দের চাল আজও পাওয়া যায়নি বলে ইউপি চেয়ারম্যান জানান। তিনি বলেন প্রত্যেক গোনে বাঁধটি মেরামত করতে সরকারিভাবে বরাদ্দের কথা বলা হলেও আসলে কিছুই দেওয়া হয়না। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জিও ব্যাগ দিয়ে তাদের দায় এড়িয়ে চলে যান। বারবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে আর কত কাজ করবে। ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকার বরাদ্দ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি গত গোন থেকে যদি মুল বাঁধের কাজ করতেন তাহলে আবারও রিংবাঁধে চাপ না পড়লে ভাঙতো না বলে সচেতন মহলের দাবী। তারা বাঁধের কাজ করার সকল মালামাল নিয়ে ঘটনা স্থলে পৌছেও কাজে গড়িমসি করছেন।

 

এখন সমস্ত রিংবাঁধ চুঁইয়ে পানি ভেতরে ঢুকছে। এরই মধ্যে দয়ারঘাট ও আশাশুনি গ্রামের পিচের রাস্তা উপর দিয়ে দেওয়া রিংবাঁধের ৫টি পয়েন্ট ভেঙে পানি ঢুকেছে। আশাশুনি সদরের দক্ষিণপাড়া ঋষি বাড়ির পুলিন দাশ, নিরান দাশ ও পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক রনজিৎ বৈদ্যের বাড়ি সংলগ্ন রিংবাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়াও মনিন্দ্র সানার বাড়ির পাশে ভেঙে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। এতে প্রায় ছোট ছোট ৫০-৬০টি মৎস্য ঘের ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে এবং বোরো ধানের কয়েকটি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও গোলাম রাব্বী জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করবে মুল বাঁধে। তার আগে আমাদের রিংবাঁধটি সংরক্ষণ করা জরুরী। আমরা প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ দিয়েছি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আসতে রওয়ানা হয়েছেন। এলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নদীর প্রবল জোয়ারে উপজেলার প্রতাপনগরের হরিশখালী, শ্রীউলার নাসিমাবাদ, খাজরার ৭ নং ওয়ার্ড ও গদাইপুর, আশাশুনি সদরের মানিকখালী গ্রামে রিং ও মুলবাঁধ ভেঙে পানি ভেতরে ঢুকেছে। তবে বড় ধরনের কোন ক্ষতির খবর এখনও পাওয়া যায়নি। স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমে এ সব বাঁধগুলি সংস্কারে প্রাণপন কাজ করছেন বলে দেখা গেছে।
এদিকে আশাশুনি সদরের বাজারে মরিচ্চাপ নদীর পানি রক্ষা বাঁধ না থাকায় বর্তমান বাজারের ভেতর দিয়ে প্রবাতি রাস্তাটি অত্যন্ত নিচু হওয়ায় জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভেতর দিয়ে ও দোকানের ফাক ফোকড় দিয়ে নোনা পানি ভেতরে ঢুকে থানা, আশাশুনি সরকারি হাইস্কুল সড়ক ও পুকুর প্লাবিত হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী এলাকাবাসি।
এদিকে, সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলাকে ঘিরে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধের পাঁচ নম্বর পোল্ডারের পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকায় প্রায় আশি ফুট জায়গা পাশের খোলপেটুয়া নদীতে ধসে গেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নদীতে ভাটা শুরু হওয়ার পরপরই ওই ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে দিনের শেষ ভাটায় মারাত্মক কিছু ঘটনার আশঙ্কা থেকে পাউবো’র সহায়তা নিয়ে স্থানীয়রা সকাল থেকে ভাঙন কবলিত অংশের বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে পাঁচ নম্বর পোল্ডারের দুর্গাবাটি ও পোড়াকাটলা এলাকার বাঁধ দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনমুখে রয়েছে। একাধিকবার জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ জিও ব্যাগ প্লেসিং সত্ত্বেও ঐ অংশের নদীর চর আগে থেকে দেবে যাওয়ার দরুন সেখানে ভাঙন নিত্যকার বিষয়ে পরিনত হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ওই এলাকা থেকে ড্রেজিং মেশিনের সহায়তায় লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলনের কারণে সমগ্র এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পশ্চিম দুর্গাবাটি এলাকার বাঁেধর ভাঙন নিয়ে পাউবো’র শ্যামনগর সাব ডিভিশন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে জিও ব্যাগে মাটি ভর্তি করে ভাঙন কবলিত অংশে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। নদীর ওই অংশে স্কাউরিংয়ের মাত্রা বেশি হওয়ায় বার বার ওই এলাকা ভাঙছে বলেও তিনি দাবি করেন।

The post আবার ভাঙলো বাঁধ: আশাশুরি চার গ্রাম প্লাবিত: শ্যামনগরে ভাঙনাতঙ্ক appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3wfr7ve

No comments:

Post a Comment