Sunday, March 28, 2021

মৃত্যুর আগে সাক্ষাৎকারে কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন: মুক্তিযুদ্ধ কখনো শেষ হয়না https://ift.tt/eA8V8J

এসএম শহীদুল ইসলাম ও শেখ জাভিদ হাসান: সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলার বাদি বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালিন কমান্ডার মোসলেমউদ্দীন আর নেই। রোববার ভোরে কলারোয়ায় নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা রোগ জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। প্যারালাইসড অবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধকালিন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। তখন থেকে তিনি মোসলেম কমান্ডার নামে পরিচিত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রোকেয়া মোসলেম, একমাত্র ছেলে কলারোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বিপ্লব ও মেয়ে কাজিরহাট কলেজের প্রভাষক সুরাইয়া ইয়াসমিন রতœাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর খবরে জেলাব্যাপী শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সম্পতি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান যুদ্ধকালিন কমান্ডার মোসলেমউদ্দীনের মুখোমুখি হয়েছিল দৈনিক পত্রদূত। প্রায় একঘন্টার সেই সাক্ষাৎকারে তিনি পাওয়া-না পাওয়া অনেক কষ্টের কথা তুলে ধরেন। স্মৃতি কাতরতায় উঠে আসে তার ছাত্রজীবন, যুদ্ধজীবন ও স্বাধীন জীবনের সংগ্রামী ইতিহাস। দৈনিক পত্রদূতকে তিনি যে আশা-আকাক্সক্ষার কথা বলেছিলেন তা এখানে উপস্থাপন করা হলো।

আমি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করি। যখন যশোর এমএম কলেজে পড়ি তখন সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের খুব দাপট ছিল। তখনকার পরিবেশে আমি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বাইরে যেতে পারিনি। তাই তখন আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম। এই সুবাদে ১৯৬৬ সালে সালে শেখ মুজিবুর রহমান যখন ছয়দফা কর্মসূচি নিয়ে পাকিস্তানে বিরোধী দলীয় কনফারেন্স পালিয়ে চলে আসার পর আমাকে তখন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. মশিউর রহমান আমাকে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে নিয়ে যান। শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে হাত রেখে ওই সময় ছয়দফার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করি। তারপর আন্দোলনে বিভিন্নগতি প্রকৃতি এগিয়ে যায়। এরমধ্যে আমি ¯œাতক পরীক্ষা দিই। ¯œাতোকোত্তর তখন আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিলাম। আমি রাজশাহী গিয়ে ভর্তি হই। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের ছয়দফা আর ছাত্রদের ১১দফা আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হতে যাচ্ছিল। তখন আমরা যে যেখানে ছিলাম আমাদের খবর দিয়ে ঢাকায় নেওয়া হয়। তার যে ম্যাচ মেকার ছিল লোকটা ভালো না। সিরাজুল আলম খান আমাদের বহু জীবন ধ্বংস করেছে। সে সিআইয়ের এজেন্ট হয়ে মিশে যায় আমাদের সাথে। তাকে ‘কাপালি সিরাজ’ বলা হতো। তার পাল্লায় পড়ে জীবন বরবাদ হয়ে যায়।
যাইহোক, এরপর শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর সভাপতি তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। আমরা ওই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাই। আমি তৎকালীন ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের কলারোয়া থানা কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। কলারোয়ায় তখন ছাত্র ইউনিয়নের খুব প্রভাব।
তখন কোন বাঙালির সরকারি চাকরি করার সুযোগ দেওয়া হতো না।তাই চাকরি হয়নি। ফলে ¯œাতক পাশ করে চাকরি না পেয়ে ব্যবসা করতাম। ১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি আমার বিয়ে হয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের মরহুম সফুর আলী সরদারের দ্বিতীয় কন্যা রোকেয়া সুলতানা সাথে বিয়ের মাত্র তিনমাস পর অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িতে ছিলাম। ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেন। সেই ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তার আলোকে তৎকালীন শেখ আমানুল্লাহ (যদিও তিনি আওয়ামী লীগ করতেন না, কিন্তু তাকে ঘিরে কলারোয়ায় সবকিছু আবর্তিত হতো) স্যারের সাথে যোগাযোগ করলাম। আমি আমানুল্লাহ স্যারের প্রিয় ছাত্র ছিলাম। তবে তিনি যে আদর্শের দল করতেন, আমি তা করতাম না। আমি স্যারকে বললাম-স্যার, দেশের এই অবস্থায় আমরা কী করব? স্যার বললেন-তোমরা শুরু কর। আমি বললাম-স্যার, আমাদের ডাকে কী লোক আসবে? স্যার বললেন-যে আদর্শ নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এই আহ্বান জানিয়েছেন, তোমরা তার আহ্বানটি সবার কাছে পৌছে দাও। তারপর দেখ শোনে কীনা। তখন বিদ্যুৎ ছিলনা। আমরা সন্ধার পর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে হারিকেন জ্বালিয়ে বসতাম। সেখানে মিটিং করতাম। কথাবার্তার এক পর্যায়ে স্যারকে বললাম-আপনি নোটিশ দিয়ে মিটিংয়ের ব্যবস্থা করুন।
স্যার বললেন-কী বলছো তুমি? আমি কী শেখ মুজিবের দল করি, যে আমি তোমাদের নোটিশ করব?
আমি বললাম-আপনি তো আমাদের শিক্ষক। আপনি যে রাজনৈতিক শিক্ষা আমাদের দিবেন সেটি আলোর পথ দেখাবে।
এরপর যে যে জায়গায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে উঠেছিল, কলারোয়া সংগ্রাম পরিষদের কার্য পরিধি, তার ব্যাপকতা অন্যান্য স্থানের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ছিল। আমানুল্লাহ স্যারের পরিচিতি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল সর্বজন প্রশংসিত। তিনি ছিলেন মহান ভাষা সৈনিক। এরপর আমানুল্লাহ স্যার এবং দুইবারের এমপিএ মমতাজ আহমেদের সহযোগিতায় আমরা নির্বিঘেœ সংগ্রাম পরিষদের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলাম। জনগণকে মুক্তিযদ্ধের পক্ষে আহ্বান করছিলাম।
মুক্তিযদ্ধের সময় ক্যান্টনমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন মেজর হাফিজ উদ্দীন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। আমরা ক্যান্টনমেন্টে ট্রাকে করে মালামাল পৌছে দিতাম। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জন্য আমরা কাচা ও রান্না করা খাবার সরবরাহ করতাম। শক্তিশালী ব্রিগেড তৈরি করে অস্ত্র-গোলাবরুদ সরবরাহ করতাম। একদিন ফিরে আসার সময় মেজর হাফিজ আমাদের বললেন-দেখ, আজকের এই যুদ্ধটা এভাবে হবে না। প্রত্যেক বাড়িতে ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে। দা-কাচি যা আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। মনে করো তুমি একজন চাষি, মাঠে ধান কাটতে গিয়েছো। সেখানে যদি পাক আর্মি দেখ তাহলে হাতের কাচি দিয়ে কুপিয়ে মারতে হবে। এভাবেই যে যে বেশে আছো সেই বেশেই যুদ্ধ কর। পরবর্তীতে আমাদের ট্রেনিংয়েও সেই কথা বলা হয়।
যাইহোক, সেদিন যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম যদিও বলি মুক্তি যুদ্ধ। কিন্তু আমার মনে হয়না এরমধ্যে সবাই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। সত্যিই যদি মুক্তিযুদ্ধে যেতেন তাহলে তারা পয়সার পিছনে ছুটতো না। আমাদের আজ আদর্শ নেই। আমাদের সেই স্বাধীনতা নেই। আলজাজিরা টেলিভিশন আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা আজ তার প্রতিবাদে রাজপথে নেই। মুক্তিযদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে অনেকেই দাবি করেন, অথচ তারা রাজপথে নেই। সম্মানীভাতা ২০ হাজার টাকা হওয়ায় অনেকেই আজ আনন্দে আত্মহারা। এই মুক্তিযুদ্ধ তো আমরা করিনি। কথার পিঠে কথা ওঠে। সাতক্ষীরায় যখন সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস ইনস্টশনের কাজ করেছিল চীনা কোম্পানী। সেই কোম্পানীর প্রধান ছিলেন একজন চায়না কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য। জিএম ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী রহমত উল্যাহ। একদিন চা খাওয়ার দাওয়াতে গেলে আমার পরিচয় শুনে সেই চীনা নাগরিক আমাকে স্যালুট করে সম্মান জানিয়েছিল।
আমরা যে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা আজও অসমাপ্ত। কেননা মুক্তিযুদ্ধ কখনো শেষ হয়না। মণিষীদের ভাষায় যুগে যুগে শোষণের বিরুদ্ধে শোষিতের যুদ্ধই মুক্তিযুদ্ধ। আর সেই মুক্তিযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। আজকে আমাদের এখনও শুনতে হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির কথা।
একাত্তরে আমার তিন মাসের বিবাহিত স্ত্রীকে ফেলে রেখে যে আশা নিয়ে আমি যুদ্ধে গিয়েছিলাম সেই দেশ তো হয়নি।জীবনের বাকী াংশ নি:শেষ হয়ে গেছে। মানসিক যে গ্লানি তা আজও আছে। ১৯৭১ সালে যেদিন চুকনগরে বৃহত্তর গণহত্যা হয়, তখন আমরা ক্যাম্পে ছিলাম। তারপর শরণার্থীরা যখন ভারতে গিয়েছিল তখন তাদের যে দুরাবস্থা তা বর্ণনা করা যায়না। সে এক নারকীয় অবস্থা। ভারতে তখন এমপি ছিলেন সিপিআই এমএলএ মাস্টার দ্য সূর্য সেনের ভাইপো যামিনী সেন। অঞ্চল প্রধান ছিলেন ফজলু মোল্যা। ফজলু মোল্যা বলেছিল-এরা তো কম্যুনাল। তখন যামিনী সেন বলেছিলেন-না না, এরা কম্যুনাল নয়।
ওই সময় এক বুড়ি মহিলা ব্লাক করতো। সেই বুড়ির একটি পাঁচ ব্যাটারি লাইট ছিল। সেই লাইটটি নেওয়ার পর বুড়ি খুব কান্নাকাটি করেছিল। আমি সেই বুড়িকে বলেছিলাম-বুড়ি মা, আমরা যে দেশের জন্য যুদ্ধ করছি সেই দেশ স্বাধীন হলে আপনার দু:খ আর থাকবে না। আমরা কী সেই দেশ পেয়েছি? আজকে ঢাকার বুকে পাঁচতলা হোটেলের নিচে আমরা কী দেখি? বঙ্কিমের সেই দৃশ্য। কাক-কুকুর-মানুষ একসাথে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। আজও বইমেলায় কেউ স্বাধীনভাবে যেতে পারে না। আজও কুপিয়ে হত্যা হয় অভিজিতের মতো মুক্তমনা লেখকদের।
১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল বেনাপোল বর্ডার দিয়ে আমরা ভারতে যাই। ১৭ এপ্রিল সেদিন শুক্রবার ছিল। এদিন খানেরা এসেছিল কলারোয়ায়। এখন যেখানে বাসস্ট্যান্ড সেখানে ছিল টনি বিড়ি ফ্যাক্টরি। খানেরা টনি বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিককে তুলে নেয়। এরপর তৎকালীন এমপিএ মমতাজ আহমেদের বোয়ারিয়া বাড়িতে আক্রমন করে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর গোবিন্দকাটি এসে টনি বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক আফসার আলীকে গুলি করে হত্যা করে। একই যুগিখালিতে রাজকুমার ও খগেনকে হত্যা করে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন অনেকে মর্যাদা পাচ্ছে বলে তারা বলছে আমরা সম্ভ্রম হারিয়েছিলাম। শেরপুরে এখনো বিধবা পল্লী আছে। ১০০ মানুষকে ওরা হত্যা করলো। তখন সমাজ ব্যবস্থায় এমনই অবস্থা ছিল যে, ধর্ষণকে মানুষ সহজে মেনে নিতে পারতো না। তাই যারা শুধুমাত্র দৃশ্যমান হয়েছিলেন তারা ছাড়া কেউ মুখ খুলতে পারেনি। যেখানে ধর্ষণ হয়েছে সেখানে আমরা গিয়েছি। চেষ্টা করেছি বহুভাবে তাদের খুজে বের করতে। কিছু প্রগতিশীল মানুষ আর শিক্ষিতা ধর্ষিতা সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন। তারাই তো বীরঙ্গনা।
আমরা যখন ভারতে গিয়েছিলাম তখন ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলনা। চরম খাদ্যাভাব চলছিল। চাল কীনা বলতে পারব না। তবে চালের মতো দেখতে। আমাদেরকে তাই খেতে হতো। আমরা বাঙালি ঘরের সন্তান। আমরা আর যা খাই একটু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চালের ভাত খাই। কিন্তু সেখানে কাকর, আরশোলার পায়খানা মিশ্রিত ভাত খেয়ে জীবন বাঁচাতে হতো। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে হতো। ডায়রিয়া-কলেরা মহামারি আকারে লেগে থাকতো।
রাস্তাঘাট ভালো ছিল না। কাচা রাস্তা ছিল। সেই রাস্তায় যেতে হতো। লোক সমাগম কম দেখে চলতে হতো। হাট বাজার ছিল। নাথপুরে খান সেনারা আক্রমন করেছিল। আমরা প্রায় ১০০ মুক্তিযোদ্ধা। আমরা ইচ্ছা করলে যুদ্ধ করতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেখানে যুদ্ধ করিনি। তার কারণ আমরা যদি গুলি করতাম তাহলে একজন পাকি আর্মি মারা যেতো কিন্তু পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাদের হামলায় মারা যেতো নিরীহ গ্রামবাসী। বেলতলায় বাজার হতো। মানুষ ইরিশ মাছ কিনলে তার অর্ধেক কেটে নিতো রাজাকাররা। রাজাকাররা বলতো-ক্ষমতা পেয়েছি তাই ইলিশ মাছ নিয়েছি। এভাবে অত্যাচার করতো তারা। আমরা যুদ্ধের সময় মা-বোনদেরকে সম্মান করতাম। আর ওরা অসম্মান করতো। আমরা কলারোয়ায় আর্মির সাথে কোন সংঘর্ষে যাইনি। কারণ আমাদের পরিবার ছিল অরক্ষিত। আমাদের পরিচয় জানতে পারলে আর্মিরা আমাদের পরিবারগুলো নিশ্চিহ্ন করে দিত। রাজাকার দুই প্রকার। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কিছু মানুষ না খাওয়া মানুষ খানেদের সাথে যোগ দিয়েছিল। এরা ভাল জুতো পর্যন্ত পরতে পারতো না। তাই যেখানে যেতো সেখান থেকেই জুতো পর্যন্ত নিয়ে আসতো। আরেক শ্রেণির মানুষ লোভে পড়ে হিংসার বশবর্তী হয়ে পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে যোগ দিয়েছিল। এদের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয় নারী, শিশুসহ অনেক নিরীহ মানুষ। সম্পদ লুটপাট ও নারীদের ভোগ করার জন্য এসব রাজাকাররা পাকিস্তানী আর্মির সহযোগিতা করেছিল।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। ৩০০ টাকা থেকে এখন মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভাতা ২০ হাজার টাকা করেছে সরকার। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রায়িক সোনার বাংলা গড়ার যে আন্দোলন একাত্তরের চেতনায় গড়ে উঠেছিল তা আজও শেষ হয়নি। প্রজন্মের কাছে এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

The post মৃত্যুর আগে সাক্ষাৎকারে কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন: মুক্তিযুদ্ধ কখনো শেষ হয়না appeared first on Daily Patradoot Satkhira.



from Daily Patradoot Satkhira https://ift.tt/3cv5fUZ

No comments:

Post a Comment